নিউজ ডেক্স
আরও খবর
চাটমোহরে ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ, কাটা হয়েছে পায়ের রগ
দেশ গঠনের বার্তা দেবেন তারেক রহমান
যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে: মুজিবুর রহমান
খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিদেশে নেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল
বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের ২ কর্মী নিহত
আমার ছেলে যেন এমনই সাধারণ থাকে: আসিফের বাবা
অগ্নিপরীক্ষায় বিএনপি, শঙ্কা নতুন ‘উকিল’
জাতীয় নির্বাচনের আগে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ‘অগ্নিপরীক্ষা’র মধ্যে পড়েছে বিএনপি। এখন চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে, নাকি এ সিটি নির্বাচনগুলো মোকাবিলা করবে– এ নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে দলটি। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের মতো ‘নতুন উকিল’-এর আবির্ভাবেরও আশঙ্কা করছেন হাইকমান্ড। এ পরিস্থিতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে কিছুটা ‘বিপাকে’ পড়তে পারে বিরোধী দলটি।
আগামী জুনের মধ্যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সিটি করপোরেশনগুলো হলো– গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা। মেয়াদ অনুযায়ী সবার আগে গাজীপুর সিটির নির্বাচন হবে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে পাঁচটির মধ্যে চারটি– গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং সিলেট সিটির নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে পাঁচ সিটির নির্বাচনে সবটাতেই মেয়র পদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।
অবশ্য এবার বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচ সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে না দলটি। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি তারা। তবে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন দুই নেতা। নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেননি তাঁরা। এখন দলের কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তা প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামীতে সিটি করপোরেশনসহ কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ মুহূর্তে সরকারের পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তাঁরা এখন যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছেন। অন্য কিছু ভাবার সময় নেই বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির কোনো নেতা নির্বাচনে যাবেন না। আর যদি কেউ যানও, তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নানামুখী ষড়যন্ত্র: দলীয় সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনগুলোতে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার মতো অনেক যোগ্য ও জনপ্রিয় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সাবেক মেয়র, মন্ত্রী-এমপি এবং বিগত নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের কেউ এবং অন্য কোনো নেতাও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারেন। একই সঙ্গে দলে কোণঠাসা হয়ে হতাশা ও ক্ষুব্ধ নেতাদের কেউ কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন– এমন আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র মতে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে নিতে নানা প্রলোভনের আশ্বাসও দিতে পারে সরকার। যাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের দেখানো ভুল পথে বিএনপির কেউ কেউ পা বাড়াতেও পারেন। নতুন ‘উকিল’ আবির্ভাবের শঙ্কায় রয়েছেন দলটির হাইকমান্ডও। দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে দলের ভেতর সরকারের নানামুখী তৎপরতা চলছে। সম্প্রতি সে ষড়যন্ত্রে পা দেওয়ায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য শওকত মাহমুদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দলের ভেতর অন্য যাঁরা ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম করতে চাচ্ছেন, তাঁদের সতর্ক করতেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে বিএনপির ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করেছে। দেশি-বিদেশিদের চাপের মুখে পর্দার আড়ালে বিএনপির কতিপয় বিপথগামী নেতাকে বিজয়ী করা বা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী করার চেষ্টা করবে।
আবার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী অনেকেই আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে খেলতে দেওয়া অর্থাৎ ‘ওয়াকওভার’ না দেওয়ার পক্ষে। তাঁদের মতে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা এবং সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় অনেক জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এমনকি পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হয়ে কাজও করেছেন। আবার অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন। এভাবে অনেকে বিভিন্ন ‘জায়গায়’ ঢুকে গেছেন। তাঁদের বের করে আনাও কঠিন। আবার যাঁরা কারও সঙ্গে যাননি; তাঁদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে বিভক্তি।
গাজীপুর সিটি: ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সবার আগে নির্বাচন হবে। গত নির্বাচনে এই সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পরাজিত হন বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার। অবশ্য আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপি নেতা হাসান সরকার বলেন, এবার দল নির্বাচনে না গেলে তিনিও নির্বাচন করবেন না। আর দল যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে তিনি দলীয় প্রার্থী হবেন। এক প্রশ্নের জবাবে বিগত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এ নেতা বলেন, আমাদের দলের কেউ নির্বাচন করবেন বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরাই কামড়াকামড়ি করবে।
খুলনা: বিগত খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র পদে বেসরকারিভাবে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। অবশ্য খুলনা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের পর দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় বর্তমানে তাঁর পদ স্থগিত রয়েছে। এখন খুলনা বিএনপি দুটি বলয়ে বিভক্ত। একটি মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে, আরেকটি কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে। মঞ্জুর বলয়ের নেতাকর্মী বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। আর বকুলের বলয়ের নেতাকর্মী রয়েছেন খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটির নেতৃত্বে। এ পরিস্থিতিতে বিগত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিএনপির সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়– তা প্রমাণ করার সুযোগ হবে।
বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও তিনি নির্বাচন করবেন কিনা– জানতে চাইলে বলেন, এই মুহূর্তে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। দলে তাঁর পদ-পদবি স্থগিত থাকার কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, তার পরও তিনি একজন বিএনপির কর্মী। এ পরিস্থিতিতে দলীয় হাইকমান্ড কী করেন, তার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। দলের হাইকমান্ডকে বার্তা দিয়েছি। এখন অপেক্ষা করছি।
সিলেট সিটি: বিগত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। দল নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন চাইবেন আরিফুল হক, অন্যথায় না– জানিয়েছেন তাঁর অনুসারীদের। এখন তিনি অসুস্থ থাকায় ফোনে কথা বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, দল যেহেতু নির্বাচনে যাবে না, আমরা যাঁরা বিএনপি করি; যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে সুবিধাবাদী যাঁরা বিএনপি করেন, তাঁরা হয়তো নির্বাচন এলে বিভ্রান্ত হতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। অবশ্য এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাদের আশপাশের লোকজন বিভ্রান্ত করে থাকেন। আমি আশা করি, তিনি বিভ্রান্ত হবেন না।
বরিশাল: গত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র পদে বিজয়ী হন। অনিয়মের অভিযোগ তুলে সকালেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারসহ ৫ মেয়র প্রার্থী। অবশ্য বিগত নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে– এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। বিগত নির্বাচনে বহিরাগত ১০-১২ হাজার লোক এনে কেন্দ্র দখল করেছিল আওয়ামী লীগ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেউ নির্বাচন করবেন বলে এখনও কারও নাম শুনিনি। তবে অন্য ছোট দলগুলোর কেউ কেউ নির্বাচন করতে পারেন।
রাজশাহী: গত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান (লিটন) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে দলের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক বুলবুল বলেন, জনগণের প্রত্যাশা যেদিন পূরণ হবে, সেদিন নির্বাচনে যাব। ১০ দফা দাবি মানার পর দল যদি বলে, তাহলে নির্বাচনে যাব। দল নির্বাচনে না গেলে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।