নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
‘ঈদযাত্রায় সদরঘাটে আগের মতো দমবন্ধ পরিস্থিতি নেই’
রমজান মাস শেষের পথে। এরপরই ঈদুল ফিতর। আর ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা ছাড়েন কয়েক লাখ মানুষ। এদের মধ্যে একটা অংশ দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ। বছরখানেক আগেও তারা বাড়ি ফিরতে বেছে নিতেন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ টার্মিনাল। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে সদরঘাটে অচলাবস্থা হয়ে উঠেছিল। তবে সেই অবস্থা এখন আর নেই। ঘরমুখী মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে ঘাটে। দক্ষিণাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ঘরমুখী মানুষ সদরঘাট দিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক সময়ে যাত্রী সংকটে প্রতিটি নৌরুটে নিয়মিত ২ থেকে তিনটি করে লঞ্চ স্বল্প যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ানো হয়েছে লঞ্চও। গত মঙ্গলবার ও বুধবার লঞ্চগুলো কানায় কানায় যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়েছে। তবে আগের মতো লড়াই করে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে না। স্বস্তিতেই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যের পথে রওনা হচ্ছেন।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যাত্রীসংখ্যা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও প্রস্তুতিতে কার্পণ্য রাখছেন না তারা। সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা তাদের লক্ষ্য। দুর্ঘটনা মোকাবেলায় থাকছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। বিশেষ করে কালবৈশাখীকে সামনে রেখে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বয়া আর লাইফ জ্যাকেটসহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম। আগুনের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে হালনাগাদ করা হচ্ছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পন্টুনে নোঙর করে রাখা লঞ্চের প্রবেশমুখে লঞ্চ কর্মচারীদের যাত্রী তোলার হাঁকডাক চলছে। অনেক যাত্রী লঞ্চে প্রবেশ করছেন। দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি রুটের যাত্রীরা লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে লঞ্চের ডেকে মালামাল নিয়ে বসে আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হুলারহাট, আমতলী, ভাসানচর ও ঝালকাঠি নৌরুটের যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলছেন, লঞ্চে আগের মতো ভিড় নেই। অন্য সময়ে কয়েক দিন আগেও টিকিট পাওয়া যেত না। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সে ভীড় নেই।
ভোলাগামী সরকারি কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, লঞ্চে আগের মতো ভিড় নেই। যাত্রীও আছে কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নেই। অন্য সময়ে কয়েক দিন আগেও টিকিট পাওয়া যেত না। আজ ঘাটে এসেই টিকিট নিতে পেরেছি। তাই আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। সুন্দরবন-১২ লঞ্চের যাত্রী নাকিব হোসেন ঝালকাঠি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কেবিন নিয়েছেন ১ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, আগে চিন্তায় করা যেত না ঈদের আগে ঘাটে এসে কেবিন পাব। নিরাপদে যেতে পেরে ভাল লাগছে। এমভি যুবরাজ-৭ এর যাত্রী মোকছেদ উদ্দিন স্বরুপকাঠি যাবেন। তিনিও কেবিন পেয়েছেন ঘাটে এসে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর ঈদযাত্রায় ভিড় থাকলেও আগের মতো দমবন্ধ পরিস্থিতি নেই। স্বস্তিতে বাড়ি যাওয়া যাবে।
পারাবাত-১৮ লঞ্চের কর্মী রাকিবুল হাসান বলেন, ঈদে অবশেষে যাত্রী ফিরেছে লঞ্চে। যাত্রী খরায় ভোগার শঙ্কা থাকলেও সেটার বদলে ভালো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। এমভি কর্ণফুলী-১০ লঞ্চের যাত্রী লোকমান শেখ বলেন, ঈদ পালন করতে পরিবারপরিজন নিয়ে ভোলায় যাচ্ছি। রাস্তায় এত যানজট। তার ওপর এই ভয়ংকর গরম। গুলিস্তান থেকে সদরঘাটে আসতেই দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। এখন সহি সালাহমতে যেতে পারলেই বাঁচি।
সোনার তরী লঞ্চের টিকিট বিতরণকারী আজিজুর রহমানের বলেন, ঈদে লঞ্চের ভাড়া বাড়ে নাই। আগের রেটই আছে। ডেকের ভাড়া ১৯০ টাকা। চেয়ার ৩০০ টাকা ও সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ আর ডাবল কেবিন ১৬০০ টাকা। সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি এক ঘণ্টা পর পর চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
এমভি লঞ্চের টিকিট বিতরণকারী আবির বলেন, বরিশালের ভোলার উদ্দেশ্যে দুইটি লঞ্চ আছে। একটি আমাদের। আরেকটি এমভি কর্ণফুলী-১০। ভোলা ইলিশা ও ভোলা খেয়াঘাট পর্যন্ত এ দুটি লঞ্চ যায়। যে লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা। চেয়ার ১২০০ টাকা। কেবিন ২২০০ টাকা। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের ভাড়া কখনোই বাড়ে না। আমরা আগের ভাড়াই রাখছি। সরকারের নির্ধারিত ভাড়াই ঈদে থাকবে।
এমডি ভোলা লঞ্চের যাত্রী মহিদুল ইসলাম বলেন, এবার লঞ্চে আরামে যাওয়া যাচ্ছে। অনেক মানুষ বাসে করে বরিশালে যাচ্ছেন এ জন্য লঞ্চ ঘাটে ভিড় কম দেখা গেছে। আজ ঘাটে এসেই টিকিট নিতে পেরেছি। ভাড়াও কিছুটা কম রেখেছে। তাই ভোগান্তি কম। মোটামুটি ভালো লাগছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দীন বলেন, লঞ্চের যাত্রীর সংখ্যা এমনিতেই কমে গেছে। ভাড়া বাড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। নিয়মিত যে ভাড়া আছে সেভাবেই চলবে। আমরা চাই শুধু আমাদের আশানুরূপ যাত্রী আসুক, যেন সারা বছরের ঘাটতিটা কাটিয়ে উঠতে পারি। বর্তমানে সারাদেশে ১০৭টি নৌপথের মধ্যে ৪৩টি পথ ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের সংযোগকারী। এই ৪৩টি নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা প্রায় ২০০। আর শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি ও বাংলাবাজারে চলাচল করে ৮৭টি লঞ্চ।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার বুধবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬০ যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। আর টার্মিনালে লঞ্চ এসেছে ৪৯টি।
এবার ঈদযাত্রায় নতুন কোনও লঞ্চ বা স্পেশাল সার্ভিস (ডাবল ট্রিপ) যুক্ত হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালিক সমিতি। তবে লঞ্চ মালিক সমিতি বলছে চাহিদা ও রুট অনুযায়ী স্পেশাল সার্ভিসের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়েও নেই তাদের কোনো আগ্রহ। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আগাম কেবিন বুকিং বলে জানান সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দীন।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন-অর রশীদ বলেন, বুধবার থেকে টানা পাঁচ দিন সরকারি ছুটি থাকলে নৌপথে যাত্রীদের চাপ কম। বর্তমান পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। মূল সমস্যা হচ্ছে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত যানজট। এই কারণে যাত্রীরা নদীপথে না গিয়ে সড়কপথে বাড়ি যাচ্ছেন। এতে আশানুরূপ যাত্রী না পেয়ে লঞ্চমালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যানজট নিরসনের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান খান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বিশেষ ফোর্সের ব্যবস্থাও থাকবে। র্যাব, আনসার, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আলাদাভাবে কাজ করবে। শুধু ঘাট এলাকাতেই ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের ৪০ জন সদস্য রাতভর কাজ করছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) নৌ পরিবহন, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আশিস কুমার দে জানান, পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চে করে বৃহত্তর বরিশালগামী যাত্রীর সংখ্যা কমে গেলেও, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের অস্বাভাবিক চাপের মুখে পড়বে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।
এছাড়া ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যাবেন। প্রতিদিন তিন লাখ লোক হিসেবে ৯ দিনে গড়ে কমপক্ষে ২৭ লাখ লোক সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে বাড়ি যাবেন। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এবং ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সরকারকে বিকল্প উপায়ে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জাতীয় কমিটি।
সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতরে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এর মধ্যে ৩৭.৫০ লাখ (২৫%) নৌপথে যাতায়াত করে। এর প্রায় শতভাগই উপকূলীয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের যাত্রী। গতবছর জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর চাঁদপুর বাদে উপকূলীয় জেলাগুলোর নৌপথে যাত্রীর হার প্রায় ২০% কমেছে। ফলে এই ঈদে লঞ্চে ৩০ লাখ মানুষ (মোট যাত্রীর ২০%) যাবেন এবং তাদের মধ্যে অন্তত ২৭ লাখ ঢাকা নদীবন্দর দিয়ে যাবেন।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।