নিউজ ডেক্স
আরও খবর
১৫ লাখের ছাগল বৃত্তান্ত !
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা
তুফান: সন্ত্রাসকে গ্ল্যামারাইজ করতে চাওয়া এক সিনেমা
এমপি খুন, নিষ্ঠুর সমাজ, মানিক সুনীলের ভালোবাসা
‘ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি’ ও ‘বাড়ি’ ফেরার ঈদ আনন্দ
ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন ও বাংলাদেশের বিভ্রান্ত বিরোধী দল
ভারতের গণতন্ত্র কি সঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ?
এই ক্রিকেট আমাদের কতদূর নেবে ?
রেজানুর রহমান
খেলায় হারজিত দুটোই থাকে। একদল জিতবে অন্য দল হারবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ যেভাবে হারলো তার ব্যাখ্যা কী? এই হারের পেছনে যুক্তিটাই বা কী? আবারও বলি খেলায় হারজিত দুটোই থাকে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র জিতেছে এতে এত কথা বলার কী আছে? যারা এমনটা ভাবছেন তাদের উদ্দেশে বলি, কথা বলার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের হারের পর প্রচার মাধ্যমের শিরোনামগুলো পড়লেই আর কোনও যুক্তি খুঁজতে হবে না। ‘বাংলাদেশকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস’। ‘বেসবলের দেশ হারিয়ে দিলো ক্রিকেটের দেশকে’।
যুক্তরাষ্ট্রে বেসবল ব্যাপক জনপ্রিয়। এবার মাত্র টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ আইসিসির পূর্ণ সদস্যপ্রাপ্ত একটি ক্রিকেট দল। সেখানে বলতে গেলে সবেমাত্র ক্রিকেট খেলতে নামা একটি ‘আনাড়ি’ ক্রিকেট দল বাংলাদেশের মতো অভিজ্ঞ একটি ক্রিকেট দলকে মাঠের পারফরম্যান্সে দাঁড়াতেই দিলো না।
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে টিভির পর্দায় বাংলাদেশ বনাম যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টি-২০ তিন ম্যাচের প্রথম ম্যাচটি দেখতে বসেছিলাম। মাঠের অবস্থা দেখে অনেক প্রশ্নই মনে জাগলো? মাঠটি কি আদৌ ক্রিকেট খেলার উপযোগী? পরক্ষণেই মনে হলো এই ধরনের মাঠেই তো বাংলাদেশের সুবিধা। কিন্তু সুবিধা নিলো যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে ক্রিকেটের লড়াইয়ে দাঁড়াতেই দিলো না। মাঠের খেলায় বাংলাদেশকে দেখে একবারও মনে হয়নি ক্রিকেটে পরিপক্ব, অভিজ্ঞ একটি দল সবেমাত্র ক্রিকেটে পা রাখা একটি দলের সঙ্গে লড়াই করছে। বাংলাদেশ দলের যেখানে সমীহ পাওয়ার কথা, সেখানে যোগ্যতার আলো ছড়িয়ে সমীহ কেড়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকেই মনে হচ্ছিল একটি ‘আনাড়ি’ ক্রিকেট দল। হয়তো ক্রিকেটে তেমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। এই যে লাইনটা লিখলাম। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আবারও বলি, মাঠের খেলায় একটি বড় দলও অপেক্ষাকৃত ছোট দলের কাছেও হারতে পারে। কেউ কেউ এটাকে বলেন অঘটন। এই যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রিকেটে হারিয়ে দিলো এটা কি অঘটন? সত্যি কি অঘটন? সামনের ম্যাচে বাংলাদেশ হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে? কিন্তু হারের ক্ষতটা তো থেকেই যাবে। বাংলাদেশ কেন এই সুযোগটা দিলো? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হারের পর বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত মাঠের কন্ডিশনকে দায়ী করেছেন। কিন্তু শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়?
দেশে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেট লড়াইয়ের সময়ই বোঝা গিয়েছিল টি-২০ ফরমেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আসলে কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই জয়ের মধ্যে সত্যিকার অর্থে আনন্দ অথবা স্বস্তি যাই বলি না কেন তার কিছুই ছিল না। বরং টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের শ্রীহীন অবস্থারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, মাঠের ক্রিকেটে যারা ক্রমাগত ব্যর্থতা প্রদর্শন করছেন তারা বিশ্বকাপের দলে হয়তো থাকবেন না। কিন্তু সব ধারণাই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শুধু লিটন দাসের কথা বললেই বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। লিটন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। বাংলাদেশ দলকে তিনি অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। তাই বলে ফর্মে না থাকার পরও বিশ্বকাপের মতো ক্রিকেটের আসরে লিটন দাস যুক্ত হলেন কোন যুক্তিতে? ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিন ম্যাচ খেলেন যথাক্রমে ১, ২৩ ও ১২ রান করেন লিটন দাস। তবু তার ওপরই আস্থা রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এমন শোচনীয় পরিণতি ঘটেছিল। বলতে গেলে তেমন কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই ভারতে দল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। অব্যাহত হারের পরও বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমে জয়ের কোনও সম্মিলিত শক্তির আভাস মিলেনি। খেলার মাঝখানে তখনকার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান দলকে ছেড়ে দেশে এসেছিলেন। তিনি কেন দলকে ছেড়ে দেশে এসেছিলেন, বাংলাদেশ সেবার ক্রিকেটে কেন এমন ব্যর্থতা দেখালো এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা ঘোষণার মধ্যে বোধকরি লুকিয়ে আছে। ভারতে ব্যর্থতার পর ধারণা করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টি-২০ বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেবে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি আদৌ ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেয়। যদি নিতো তাহলে টি-২০ র্যাংকিংয়ে ১৯ নম্বরে থাকা ক্রিকেট দল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করতো না। আমরা যে যাই বলি না কেন দেশে ক্রিকেটই একমাত্র খেলা বা উপলক্ষ, যার পক্ষে দেশের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়ায়। ক্রিকেট হাসলেই বাংলাদেশ হাসে। অথচ ক্রিকেটেই চলছে দেখি না কী হয়? এমন আত্মঘাতী আচরণ! নেওয়া হচ্ছে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপ মানেই অনেক প্রস্তুতি, প্রকৃত মেধাবীদের দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। ফর্ম ভালো নেই তবু লটারি কেনার মতো মানসিকতার কাউকে কি দলে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?
যুক্তরাষ্ট্রের মতো ‘আনাড়ি’ ক্রিকেট দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। সেখানে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এমনকি শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের সঙ্গেও কি দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ? সেই প্রস্তুতি অথবা সামর্থ্য আছে কি বাংলাদেশের? নাকি এবারও বিশ্বকাপে ক্রিকেট শিখতে গেছে বাংলাদেশ? জয় বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা। এটাই কি বাস্তবতা?
লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।