কর্মজীবী নারীর আবাসিক সংকট – দৈনিক গণঅধিকার

কর্মজীবী নারীর আবাসিক সংকট

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৩:৩৭
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলছে দেশে কর্মজীবী মহিলার সংখ্যাও। কিন্তু সেই পরিমাণে নির্মিত হচ্ছে না কর্মজীবী মহিলাদের থাকার জন্য আবাসিক ভবন বা হোস্টেল। যার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মজীবী নারীদের থাকার জন্য বহু কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। আবাসিক ভবনের অভাবে অনেক কর্মজীবী নারীরা বিভিন্ন সময় মারাত্মক লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। থাকে না তাদের কোনো নিরাপত্তার বিষয়ে নজরদারি। কর্মজীবী মহিলাদের নিরাপদ আবাস সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সারাদেশে ৭টি পেশাজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করে আসছে। সেখানে রাজধানীতে ৩টি আবাসিক হোস্টেল মহিলাদের থাকার ব্যবস্থা আছে। ১টি নীলক্ষেতে, অন্য দুটি মিরপুর ও খিলগাঁওতে। নীলক্ষেতে হোস্টেলে সিট, মাত্র ৫২৬। সেখানে ১৩টি মহিলা অতিথির জন্য নির্দিষ্ট করা আছে। মিপুরে ১৬০টিÑযার মধ্যে ৬টি অতিথির আর খিলগাঁওয়ে ২১০টি যেখানে অতিথির জন্য বরাদ্দ ১০টি। অর্থাৎ রাজধানীতেই আসন সংখ্যা মাত্র ৯০০ জন মহিলা কর্মজীবী থাকার ব্যবস্থা। তথ্য-উপাত্তে দৃশ্যমান কর্মজীবীর সংখ্যার তুলনায় আসন এত অপ্রতুল বাকিদের অন্যভাবে তা সংস্থান করতে হয়। তবে নিজেদের অর্থায়নে বিভাগীয় শহর খুলনা, যশোর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ১টি করে কর্মজীবী নারীদের হোস্টেলের ব্যবস্থা করা আছে। সরকারি পরিচালনায় ৭টি মহিলা হোস্টের আসন সংখ্যা মোট ১৪০০। প্রয়োজনের তুলনায় এত কম আসন সংখ্যায় পেশাজীবীদের নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম। যার কারণে এসব নারী সবসময় একটা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে তাদের জীবন। কাটায় দেশে কর্মজীবী মহিলাদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আবাসিক হোস্টেল না থাকার কারণে অনেক মহিলা বাধ্য হয়ে অপরিচিত লোকের বাসাবাড়িতে সাবলেট হিসেবে থাকে। যে কোনো সময় বাড়ির মালিকের লোকজন দ্বারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের বিভিন্ন সূচকে অর্ধাংশ নারীও সমানতালে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, করপোরেট পেশা থেকে শুরু করে কৃষি, নির্মাণ প্রকল্প, পোশাক শিল্প কারখানায় নারীর সচেতন কর্মযোগ সামগ্রিক সমৃদ্ধির নিয়ামক। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং সামাজিক রক্ষণশীলতার জালে আবদ্ধ নারীদের হরেক রকম বিপত্তি আর বিভ্রান্তির শিকার হতে হয় কর্মজীবনের উপস্থিত পরিস্থিতিকে সামলাতে গিয়ে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে পেশাগত জীবনে সিংহভাগ নারীই অবহেলা, অপমান আর অবিচারের আবর্তে পড়ে। সামাজিক বিধি-নিষেধের কঠোর বেড়াজাল আজবধি বহু নারীর চলার পথ নিরাপদ, নির্বিঘœ আর মুক্ত করতে পারেনি। অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত নারীদের কর্মস্থল অনেকটা শোভন এবং শালীন। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে পোশাক শিল্পে নিয়োজিত নারী পেশাজীবীদের জীবন যে কত দুর্বিষহ এবং সমস্যায় আবর্তিত তা বলে শেষ করা যায় না। পুরুষ সহকর্মীর কটূক্তি, অশালীন ব্যবহার তার চেয়েও বেশি প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চনার শিকার হওয়া-সব মিলিয়ে এক অসহনীয় অবস্থায় পড়ে নারী শ্রমিকরা। মজুরির বেলায়ও হয় চরম বৈষম্য। তার ওপর আছে শিল্প কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যার সরাসরি প্রভাবে আক্রান্ত হয় নারীরাই বেশি। সেনিটেশন সমস্যা এসব গতরখাটা প্রতিষ্ঠানের নিত্য নৈমিত্তিক দুঃসহ যন্ত্রণা। নারীদের জন্য উপযোগী এবং স্বাস্থ্যসম্মত কোনো ওয়াশরুমও থাকে না, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় সংকট নিরসন করতে পারে। নি¤œ কর্মজীবী নারী শ্রমিকরা তাদের বক্তব্যে কারখানার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার দায়ভাগ চাপায় পুরুষ সহকর্মীদের ওপর। তাদের উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য এমনকি অনেক সময় শারীরিকিভাবেও নিগৃহীত হতে হয় পুরুষ সহকর্মী কাছ থেকে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা যদি নিশ্চিন্তে, নির্বিঘেœ তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন গতিধারায় তার প্রভাব দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে না। অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে নারীরা তাদের পেশাগত জীবনকে যেন সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নজর দিতে হবে। কর্মস্থলের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হওয়া একান্ত আবশ্যক। তাছাড়া হোস্টেলগুলোর সুযোগ/সুবিধা প্রচারের জন্য পোস্টারে ও বিজ্ঞাপনে কর্মজীবী নারী হোস্টেলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই। এসব হোস্টেলের মালিকরা দু-তিনজন থাকতে পারে এমন রুম পাঁচ-ছয়জনকে ভাড়া দেন। একটি ঘরকে হার্ডবোর্ড দিয়ে একাধিক কামরায় বিভক্ত করা হয়। চার-পাঁচটা কক্ষের জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি টয়লেট। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। অনেক সময় লাইনে পানি পর্যন্ত থাকে না। প্রতিবাদ করতে গেলে হোস্টেল ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর যখন তখন ভাড়া বাড়ানো তো নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা বাড়ে না। সরকারি-বেসরকারি হোস্টেলে জায়গা না পেয়ে অনেক কর্মজীবী নারী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে সাবলেটে থাকেন। একা একজন মেয়েকে কেউই বাসাভাড়া দিতে চান না। তাই বাধ্য হয়েই তাদের খুঁজতে হয় সাবলেট। কর্মজীবী নারীরা সাবলেট থাকেন তাদের পরিচিত পরিবারে। এর জন্য গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। তারপরও তারা রান্নাবান্না, সময়মতো গোসলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে উটকো বিড়ম্বনা তো আছেই। এমন সব সমস্যা আর প্রতিবন্ধকতার কারণে কর্মজীবী নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। দেশে যেহেতু এখন কর্মজীবী মহিলা ও ভার্সিটি, কলেজে পড়ুয়া মেয়েদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে সেহেতু এখন আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের থাকার জন্য হোস্টেল নির্মাণ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। তবে সে হোস্টেলগুলো অবশ্যই হতে হবে মানসম্মত ও নিরাপত্তা বেষ্টিত। যেখানে সারাদিন মহিলারা কাজ করে এসে একটু আরাম-আয়াসে জীবনযাপন করতে পারে। ছাত্রীরা রাতের বেলায় নিশ্চিন্তায় লেখাপড়া করতে পারে। মহিলাদের থাকার জন্য আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে না পারলে কর্মক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে আমরা আশানুরূপ কর্মের দাবিও করতে পারব না। কর্মজীবী মহিলাদের থাকার জন্য ভবন নির্মাণ করতে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসতে হবে।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোনে শহীদদের স্বরণে নাগরিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত। ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ–ভারতের নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব: প্রধান উপদেষ্টার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার অচল চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যস্ত ১২ জেলা, মৃত্যু ৮ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট শুনানি ঘিরে সারাদেশে সতর্ক পুলিশ তাহিরপুর বিভিন্ন ছড়া ও নদীর খনিজ বালু হরিলুট,যেন দেখার কেউ নেই নোয়াখালী-কুমিল্লা-ফেনীতে ভারী বৃষ্টি থাকতে পারে আরও ৪৮ ঘণ্টা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেন হাফিজ উদ্দিন খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিদেশে নেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রংপুর কারাগারে বন্দিদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ১ আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার নিয়ন্ত্রণে আসেনি জামালপুর জেলা কারাগার, রাতেও থেকে থেমে চলছে গুলি গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের ২ কর্মী নিহত