
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

যেসব কারণে রোজার ক্ষতি হয় না

দেশ ও সংস্কৃতি ভেদে রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ভাজাপোড়া খাবার বেশ প্রচলিত, যা সাধারণত খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না। বেশিরভাগ রোজাদারের ইফতারে তেলে ভাজা এবং সেহরিতে ভারী খাবারের প্রাধান্য থাকে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও পুষ্টিবিদদের মতে, অস্বাস্থ্যকর সেহরি ও ইফতার নানা রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে এ জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। তাদের পরামর্শ-দিনভর রোজা রেখে শরীরে যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে তা পূরণে সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। একই সঙ্গে যথেষ্ট পানি পানে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণত রমজানে সেহরি ও ইফতারকে কেন্দ্র করে বাহারি খাবার বিক্রি বেড়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের খোলা বাজারে অস্বাস্থ্যকর ও তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার বিক্রির ধুম পড়ে। বেগুনি, পিঁয়াজু, জিলাপি, আলুর চপ, ছোলা, সবজি চপ, বুন্দিয়া ছাড়াও স্পেশাল আইটেম হিসাবে হালিম বিক্রির হাঁকডাক চলে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার চকবাজারে ইফতার, সেহরির জন্য তৈরি অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার যেন দেশীয় সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের খাদ্য তালিকায় প্রসেস ফুড কিংবা ফাস্টফুডও যুক্ত হতে দেখা যায়। অনেকে খোলা বাজারে তৈরি অস্বাস্থ্যকর শরবত, জুস, কোমল পানীয় পানে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দিন রোজা রাখার পর ভাজা-পোড়া খাবার গ্রহণে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ভাজা-পোড়া খাবারগুলো শরীরের শিরা-ধমনিতে চর্বির পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। এতে বুকে ব্যথা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। খোলামেলা নোংরা পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি হওয়া খাবারে ডায়রিয়ার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘক্ষণ রোজা রেখে শরীরে এমনিতেই পানির ঘাটতি থাকে। অনেকে ইফতারে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত, কোমল পানীয় কিংবা বাজারের প্যাকেটজাত শরবত পান করেন। কেউ ইফতার শেষে চা, কফি, অ্যালকোহলও পান করেন। কেউ মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত খেলে কোষরে পানি শুষে নেয়, শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে অবসাদ, অতিরিক্ত ক্লান্তি কিংবা তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। যারা ওজনাধিক্যে ভুগছেন তারা চিনিযুক্ত শরবত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, রোজায় অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খেলে ট্রান্সফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। এতে অ্যাসিডিটি, গ্যাসের সমস্যা, কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) ও আলসার হতে পারে। রোজা রেখে একাধিক ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার খেলে শরীরে ইউরিক এসিড বাড়ে। কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, রক্তের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রমজান মাসে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে কিছু খাদ্যাভাস আছে। বিক্রেতারা রাস্তাঘাটের পাশে তেলে ভাজাসহ নানা পদের মিষ্টিজাতীয় ও ভারী খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন। এগুলো খাওয়ায় নিষেধ নেই, তবে বাইরে খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঘরে তৈরি করে পরিমিতভাবে খাওয়া উত্তম। সেহরির ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে চলবেন। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা বলেন, প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখায় শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালান্স হয়। ফলে ইফতারে ট্র্যাডিশনাল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম ঝরা, মাথাঘোরা, হাইপোগ্লাইসোমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া) হতে পারে। বিশেষ করে হার্ট ও ডায়াবেটিস রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, ইফতারে ডাবের পানি পানে শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ঘাটতি পূরণ করে সাহায্য করে। অনেকে পলিথিনে ভরে ডাবের পানি কেনেন। ফুডগ্রেডহীন পলিথিনে থাকা প্লাস্টিক ন্যানো পার্টিকেল পানির কার্যকারিতা একেবারেই নষ্ট করে ফেলে। ওই পানি পানে ক্যানসার, অটিজমসহ বিভিন্ন ইমিউনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেহরিতে কী খাবেন : পুষ্টিবিদদের মতে, সেহরি হতে হবে সুপাচ্য, সহজে হজমযোগ্য, পর্যাপ্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ সুষম খাবারের সমন্বয়। খাদ্য তালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে যেমন-প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার। সম্ভব হলে লাল চালের ভাত কিংবা লাল আটার রুটি খেতে পারলে ভালো। শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা শাক-সবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। ইফতারে খাবার কেমন হবে : ইফতারে অবশ্যই একটি অথবা দুটি খেজুর খাওয়া উচিত। খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এবং যথেষ্ট পরিমাণে ডাইটারি ফাইবার। খেজুরের ইনস্ট্যান্ট সুগার বা চিনি ক্লান্তি দূর করে। স্বাভাবিক পানি ও পানি জাতীয় খাবার, দই, চিড়া, কলা, সবজি খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। শসা কুচি, গাজর, টমেটো, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা ও সরিষার তেল দিয়ে সালাদ করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া মৌসুমি তাজা ও মৌসুমি ফল গ্রহণে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বায়তুল মোকাররমে খতমে নবুওয়তের সমাবেশ

জান্নাত লাভে মুমিনের আত্মত্যাগ

আবারও ওমরাহর ই-ভিসা দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

হজের প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন ৪১৭ হাজি
কুরআনের সপ্তম পারায় যা যা আলোচনা হয়েছে

আল্লাহতায়ালা হালাল ও বৈধ রিজিক ভক্ষণ করতে বলেছেন
সুরা মায়েদার ৮৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ তোমাদের যা দান করেছেন, তন্মধ্যে হালাল ও পবিত্র বস্তুগুলো আহার কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।
প্রথমে নিজের হেদায়েতের কথা ভাবা উচিত
একই সুরার ১০৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের (সংশোধন করার) দায়িত্ব তোমাদের, যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যদি তোমরা দ্বীনের পথে চল; তোমরা সবাই আল্লাহরই সমীপে প্রত্যাবর্তিত হবে, অতঃপর তোমরা যা কিছু করছিলে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদের অবহিত করবেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় সফলতা
১১৯ ও ১২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ বলবেনঃ এটি সেই দিন যেদিন সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা কাজে আসবে, তারা উদ্যানপ্রাপ্ত হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট; এটাই হচ্ছে মহাসফলতা। আল্লাহরই জন্য অধিপত্য রয়েছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং ওই সব কিছুর যা এতদুভয়ের মাঝে বিদ্যমান; আর তিনি সকল বিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান।
কে কতদিন বাঁচবে তা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন
সুরা আনআমের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, অথচ তিনি তোমাদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের জীবনের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করেছেন। এ ছাড়া আরও একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ তার নিকট নির্ধারিত রয়েছে, কিন্তু এর পরও তোমরা সন্দেহ করে থাক।
মানুষ আল্লাহ থেকে কিছুই গোপন করতে পারে না
এই সুরার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে ওই এক আল্লাহই রয়েছেন, তোমাদের অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সব অবস্থাই তিনি জানেন, আর তোমরা যা কিছু কর তাও তিনি পূর্ণরূপে অবগত আছেন।
গুনাহ থেকে বাঁচলে জান্নাতে হবে প্রাসাদ
সুরা আনআমের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, এই পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ও আমোদপ্রমোদের ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, পরকালের জীবনই হবে তাদের জন্য উৎকৃষ্টতর। তোমরা কি চিন্তাভাবনা করবে না?
সব ধরনের জ্ঞান কেবল মহান আল্লাহরই আছে
৫৯ ও ৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তারই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেহই তা জ্ঞাত নয়। পৃথিবীতে ও সমুদ্রের সব কিছুই তিনি অবগত আছেন, তার অবগতি ব্যতীত বৃক্ষ হতে একটি পাতাও ঝরে পড়ে না এবং ভূ-পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পতিত হয় না, এমনিভাবে কোনো সরস ও নিরস বস্তুও পতিত হয় না; সব কিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আর সেই মহান সত্তা রাতে নিদ্রারূপে তোমাদের এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম কর তিনি সেটিও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদের নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, পরিশেষে তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদের তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।
নামাজে গুরুত্ব দাও ও আল্লাহকে ভয় কর
সুরা আনআমের ৭২ ও ৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, আর তুমি নিয়মিতভাবে সালাত কায়েম কর এবং সেই রবকে ভয় করে চলো, যার নিকট তোমাদের সবাইকে সমবেত করা হবে। সেই সত্তা আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেন, ‘হাশর হও‘, সেদিন হাশর হয়ে যাবে। তার কথা খুবই যথার্থ বাস্তবানুগ। যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, সেদিন একমাত্র তারই হবে বাদশাহী ও রাজত্ব। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু তার জ্ঞানায়ত্তে। তিনি হচ্ছেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিদিত।
অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালমন্দ করা অনুচিত
মহান আল্লাহতায়ালা সুরা আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াতে বলেন, এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের এবাদাত (পূজা-অর্চনা) করে তোমরা তাদের গালাগালি কর না, তা হলে তারা অজ্ঞতাবশত বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালাগালি দিতে শুরু করবে। আমি তো এ রূপেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের ‘আমলকে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা কী কী কাজ করেছিল তা তিনি তাদের জানিয়ে দেবেন।
দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের গবেষণা বিভাগ থেকে অনূদিত
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।