নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
গরমের উত্তাপ তরমুজে
দেশে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুরুতে একটু বেশি হলেও পরে দাম ছিল ক্রেতার হাতের নাগালে। কিন্তু তীব্র গরম ও রমজানের শেষ ভাগে এসে হঠাৎ বাজার চড়া হয়ে উঠেছে রসালো ফলটির। পাঁচ দিন আগেও কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে, যা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরমের কারণে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে তরমুজের মৌসুমও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আবার রোজার শুরুতে বৃষ্টির কারণেও কিছু এলাকায় তরমুজ নষ্ট হয়েছে। ফলে এখন জোগান কমে গেছে। এ কারণে উৎপাদন পর্যায়ে দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়েও। তবে দাম বাড়ায় ভোক্তা অসন্তুষ্ট হলেও ভালো দাম পেয়ে তৃপ্ত কৃষক।
গতকাল সোমবার রাজধানীর হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা ও কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ছোট আকারের তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে সরবরাহের পরিমাণও কম। এসব বাজারে খুব বেশি দেখা মেলেনি বড় আকারের তরমুজের। গতকাল কারওয়ান বাজারে সুলতান আহমেদ নামের এক ক্রেতা তরমুজের দাম জিজ্ঞাসা করলে বিক্রেতা কেজি এক দাম ৭০ টাকা বলে দেন। এতে সুলতান আহমেদ কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন আগেও তো ৩৫ টাকা ছিল। হঠাৎ করে ডাবল দাম চাইলেন কেন?’ জবাবে বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের কোনো খোঁজ-খবর রাখেন? চার-পাঁচ দিন আগে বাজারে যে পরিমাণ তরমুজ দেখেছেন, এখন সেই পরিমাণে আছে? পাইকারি বাজারেই তো দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ওই তরমুজ বিক্রেতা আরও বলেন, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে। এ জেলার তরমুজ আকারে বড় থাকে। কিন্তু বরিশালের তরমুজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া রোজার শুরুতে বৃষ্টি হয়েছিল। তখন সেখানে অনেক তরমুজ গাছ মরে গেছে। এখন কিছু তরমুজ আসছে খুলনা থেকে। এগুলো আকারে বেশ ছোট, তবে মিষ্টি বেশি।
সেগুনবাগিচায় তরমুজ বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহে বাজারে তরমুজের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে বাজারে দামও বেড়েছে। দাম বাড়ায় কৃষক খুশি
দাম শুধু ঢাকায় নয়, উৎপাদন পর্যায়েও বেড়েছে। খুলনা ব্যুরো জানায়, এ বছর খুলনায় ১২ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপ উপজেলাতেই চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে দাকোপ উপজেলার তরমুজই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এ উপজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নের কৃষক উৎপল জানান, দুইভাবে তরমুজ বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা দাকোপে এসে মাঠ থেকে সরাসরি তরমুজ কেনেন। চলতি সপ্তাহে ছোট আকারের তরমুজ (৩-৫ কেজি) প্রতি বিঘা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। একই তরমুজ গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। এছাড়া বড় আকারের (৮ কেজির ওপরে) তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ টাকায়। এতে তাঁরা খুশি বলেও জানান তিনি।
এছাড়া কিছু কৃষক নিজেই তরমুজ নিয়ে খুলনার কদমতলায় পাইকারি বিক্রি করেন। পাইকারি তরমুজ বিক্রি হয় পিস হিসেবে। গতকাল ছোট আকারের প্রতি পিস তরমুজ (৩-৫ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। বড় তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকায়।
বরিশালের বাজারে নেই তরমুজ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল নগরের পোর্ট রোডে ফলের পাইকারি বিক্রির অন্যতম আড়ত ‘দত্ত বাণিজ্যালয়’। তরমুজের ভরপুর মৌসুমে প্রতিবছর এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি পাইকার ও কৃষকদের কোলাহলে থাকে মুখর। সোমবার সন্ধ্যার পর তার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ঘর ফাঁকা। দু’জন কর্মচারী অলস সময় কাটাচ্ছেন। আশপাশের অন্যান্য আড়তেও একই অবস্থা। কেউ কেউ আনারস ও পেয়ারা রেখেছেন ঘরে।
দত্ত বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী গণেশ দত্ত জানালেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁর আড়তে তরমুজের আমদানি নেই। কমপক্ষে ১০ দিন আগে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের তরমুজ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভরসা খুলনা-বাগেরহাটের তরমুজ। বরিশালের পোর্ট রোডে তরমুজ পাইকারি বিক্রির বৃহৎ মোকাম। কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মার্চের শেষ সপ্তাহে কয়েক দফা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে তরমুজে পচন ধরে। লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকরা আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন। যে কারণে এবার রমজানের শুরুতে বাজার ছিল তরমুজে সয়লাব। ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের ভালো মানের তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। আগাম বিক্রি করে দেওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকদের ক্ষেতে এখন আর তরমুজ নেই।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চাষি মনির হোসেন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি উঠে যাওয়ায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই বিক্রি করে দেন। এতে কোনোমতে আসল টাকা নিয়ে ঘরে উঠতে পেরেছেন।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।