ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয়ে স্বজনের নাভিশ্বাস – দৈনিক গণঅধিকার

ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয়ে স্বজনের নাভিশ্বাস

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৭ আগস্ট, ২০২৩ | ৯:২৮ 45 ভিউ
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয় প্রায় বেসরকারির মতো। ফলে হাসপাতালটিতে পেয়িং বিছানার পাশাপাশি বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে ৫০ শয্যার আলাদা ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। সেখানেও ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি এখনো পুরোপুরি সরকারি হয়নি। বার্ষিক বরাদ্দ আগের মতোই ৩৬ কোটি টাকা রয়েছে। এরপরও ফ্রি বিছানায় ভর্তি রোগীদের ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৬৮১ শয্যার হাসপাতালটির বহির্বিভাগে বিভিন্ন রোগব্যাধি নিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় হাজার শিশু চিকিৎসা নেয়। কিন্তু পেয়িং বিছানায় ভর্তি হয়ে রোগীদের বিছানা ভাড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এমনকি স্যালাইন পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসার খরচ জোগাতে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠছে। বুধবার সরেজমিন শিশু হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগের টিকিটের মূল্য ৬০ টাকা হলেও জরুরি বিভাগে নিচ্ছে ১২০ টাকা। জরুরি বিভাগের কনসালটেন্ট ফি ২৫০ টাকা। তবে বহির্বিভাগের আগত রোগীদের মধ্যে কেউ ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যয় মেটাতে অক্ষম হলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের বিনামূল্যে পরীক্ষার জন্য ১৩৬ নম্বর কক্ষে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু সেখানে সবাই সুযোগ পাচ্ছে না। ডেঙ্গুজ্বর নির্ণয়ে প্রথম তিন দিনের মধ্যে এনএস-১ পরীক্ষা করতে হয়। শিশু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য এই টেস্টের খরচ ৫০০ টাকা। জ্বরের ইতিহাস পাঁচ দিন বা এর বেশি হলে আইজিএম ও আইজিজি পরীক্ষায় ৫০০ টাকা গুনতে হয়। বেসরকারি ক্লিনিকেও এই টেস্টের জন্য ৫০০ টাকাই নেওয়া হয়। শিশু হাসপাতালে রোগীর রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি পরীক্ষায় ৩০০ টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে ডেঙ্গু রোগীর আরও কিছু পরীক্ষা যেমন: আরবিএস বা র‌্যানডম ব্লাড সুগার পরীক্ষায় ১২০ টাকা রাখা হয়। যাদের মাঝারি মাত্রায় ডেঙ্গু উপসর্গ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এসজিওটি টেস্টে ২৪০ টাকা রাখা হয়। রোগীর বমি, পাতলা পায়খানাজনিত কারণে অন্ত্রে সমস্যা এবং শরীরে লবণের ঘাটতি হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে সিরাম ইলেকট্রোলাইট টেস্টের জন্য ৫৪০ টাকা। কিডনির সমস্যা থাকলে সিরাম ক্রিয়েটিনন টেস্টে ৩০০ এবং ইনফেকশনের মাত্রা বোঝার জন্য সিআরপি টেস্ট ৫৪০ টাকা রাখা হয়। প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন হলে সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট অ্যাফেরেসিস (এসডিপি) ও র‌্যানডম ডোনার প্লাটিলেট অ্যাফেরেসিস (আরডিপি) প্রয়োজন হলেও শিশু হাসপাতালে এ সুবিধা নেই। অভিভাবকরা জানান, ৫০ শয্যার নন-পেয়িং ডেঙ্গু কর্নারে সিট ভাড়া না লাগলেও ভর্তির সময় ২০০ টাকা দিতে হয়। পেয়িং বিছানায় (জেনারেল ওয়ার্ড) ভর্তি ফি ২৫০ এবং দৈনিক বিছানা ভাড়া ৭০০ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ডে ভর্তি ফি ২৫০ এবং দৈনিক ভাড়া ৮০০ টাকা। শেয়ার কেবিন (৪ শয্যাবিশিষ্ট) ভর্তি ফি ৩০০ এবং দৈনিক ভাড়া ১ হাজার টাকা। শেয়ার কেবিন (২ শয্যাবিশিষ্ট) ভর্তি ফি ৩০০ এবং দৈনিক ভাড়া ১৫০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনে ভর্তি ফি ৩০০, দৈনিক ভাড়া ৩ হাজার, ভিআইপি কেবিনে ভর্তি ফি ৩০০, দৈনিক ভাড়া ৩৫০০, ভিভিআইপি কেবিনে ভর্তি ফি ৩০০ এবং দৈনিক ভাড়া ৬ হাজার টাকা। এছাড়া পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে (পিআইসিইউ) ভর্তি ফি ৩০০ এবং দৈনিক ভাড়া ৬ হাজার টাকা করে। অন্যদিকে পাশেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের টিকিটের মূল্য ১০ এবং হাসপাতালে ভর্তি ফি ১৫ টাকা। এনএস-১ পরীক্ষা ৫০ এবং আইজিজি ও আইজিএম ১০০ টাকা নেওয়া হয়। ডেঙ্গু রোগীর রক্তের সিবিসি পরীক্ষা ফি মাত্র ১৫০ টাকা। আরবিএস ৬০ এবং ৭০ টাকায় এসজিওটি পরীক্ষা করা হয়। ২৫০ টাকায় সিরাম ইলেকট্রোলাইট টেস্ট, ৫০ টাকায় সিরাম ক্রিয়েটিনিন, ১৫০ টাকায় সিআরপি এবং প্লাটিলেট কাউন্ট করতে মাত্র ৩০ টাকা নেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের বিছানা ভাড়া দিতে হয় না। স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে পাঁচ দিন ধরে শিশু হাসপাতালের ২নং ডেঙ্গু কর্নারের (বিনামূল্যের ওয়ার্ড) ৪৯নং বিছনায় ভর্তি সাত বছর বয়সি শিশু জুনায়েদ। শিশুটির বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার ছেলের হঠাৎ জ্বর হয়। সঙ্গে পাতলা পায়খানা, তীব্র বমি এবং পেট, মাথা ও শরীর ব্যথা ছিল। শনিবার স্থানীয় রেমিকন ডায়াগনস্টিকে এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ হয়। রোববার সকালে মিরপুর-২-এর শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে শয্যা ফাঁকা নেই জানিয়ে অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসকের পরামর্শে ওইদিন শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। জরুরি বিভাগে আসার পর টিকিটের জন্য ১২০ এবং ২৫০ টাকা কনসালটেন্ট ফি নেওয়া হয়। তিন দিনের বিছানা ভাড়া বাবদ অগ্রিম ২১০০ টাকা জমা দিয়ে ছেলেকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পেয়িং বিছানায় ভর্তি করি। দুই দিনে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। অবশেষে খরচ জোগাতে না পারায় এক চিকিৎসকের সহায়তায় ফ্রি বিছানা পেয়েছি। তিনি বলেন, বিনামূল্যের বিছানায় ভর্তি থাকলেও মঙ্গলবার অ্যালবুমিন নামে একটি ইঞ্জেকশন এবং ইঞ্জেকশন সেট কিনতে ৫ হাজার ১১০ টাকা লেগেছে। আজ (বুধবার) ইঞ্জেকশন, স্যালাইন ও সেট কিনতে ২ হাজার ৩৭১ টাকা খরচ হয়েছে। ১৪ আগস্ট ৩ হাজার ৪০ এবং ১৩ আগস্ট ২ হাজার ৮০ টাকার ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে হয়েছে। তার স্ত্রী পপি আক্তার আক্ষেপ করে বলেন, স্বামী ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সামান্য অর্থে সংসার চালানো কঠিন। এখানে ফ্রি বিছানায় সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়ার নিয়ম থাকলে খাবার, স্যালাইন ও কম দামি কিছু ওষুধ ছাড়া সবই কিনতে হচ্ছে। শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় ৯২টি বিছানার মধ্যে ৫০টিই ফ্রি। যাদের ডেঙ্গু পরীক্ষা ছাড়াও সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে যেগুলোয় রি-এজেন্ট খরচ বেশি, সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছু অর্থ লাগে। শুধু পেয়িং বিছানা ও কেবিনে ভর্তি রোগীদের অর্থ খরচ হয়। চিকিৎসকের ফি ও সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না। বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়া হয়। অনেকে বলে এটা সরকারি, তবে এখনো কিন্তু পরিপূর্ণভাবে হয়নি। এখনো আগের মতোই বার্ষিক ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছি। সরকার বরাদ্দ বাড়ালে সবকিছুই কমিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসক-নার্স ও অন্য স্টাফদের বেতনভাতা দিতেই বছরে ৬০ কোটি টাকা লাগে। এর বাইরে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ আছে। প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। সবমিলে আমাদের বার্ষিক বাজেট ১০৫ কোটি টাকা, যা টাকা পেয়িং, কেবিন ভাড়া এবং পরীক্ষা ফি, বহির্বিভাগের টিকিট বিক্রি থেকে আসে। চলতি বছর শিশু হাসপাতালে ৭৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ জন শিশু মারা গেছে। বুধবার পর্যন্ত ১১৮ জন ভর্তি ছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ জুন ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন হয়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেস্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিলটি সংসদে পাশের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়। ওই বছর জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন, ২০২১’ পাশ হয়। যেটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কুষ্টিয়ার স্বনামধন্য ইংলিশ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বনামধন্য ইংলিশ প্রতিষ্ঠান CEL এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত ভূ-রাজনীতির ফাঁদে বাংলাদেশ শায়েস্তাগঞ্জ পূজা উদযাপন সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ওসির! ইসরাইলের অভিযান নিয়ে যা বললেন পুতিন বেরিয়ে আসছে ব্যাটারদের হতশ্রী চেহারা নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটের হার উন্নয়নের কারণে আমরা উন্নত জীবন যাপন করতে পারছি: শিক্ষামন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ চার অগ্রাধিকার নীতি ঘোষণা চালকের কিস্তি আর সংসারের চাকা ঘুরাল ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি ভালো হয় না: ফখরুল পিটার হাসের বক্তব্যের প্রতিবাদে যা বললেন সাংবাদিকনেতারা ‘কোনো চুক্তিতে দেশে ফিরছেন না নওয়াজ শরিফ’ পদার্থে নোবেল পেলেন ৩ জন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমনে কঠোর অবস্থানে সরকার: বাহাউদ্দিন নাছিম সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ১৫৭৭ অগ্নিকাণ্ড, ১১ প্রাণহানি ৩ মেয়েকে হত্যার পর নিখোঁজের নাটক মা-বাবার! এবার অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটালে রেহাই নেই: প্রধানমন্ত্রী এবার দুদকের মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৩ জনকে তলব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমনে কঠোর অবস্থানে সরকার: বাহাউদ্দিন নাছিম ডেঙ্গুতে সহস্রাধিক মৃত্যু শক সিনড্রোমের রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে