পহেলা বৈশাখ ও অপূর্ব ঢাকাই আবিষ্কার – দৈনিক গণঅধিকার

পহেলা বৈশাখ ও অপূর্ব ঢাকাই আবিষ্কার

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ | ৫:১৫
একই সূর্য প্রতিদিন ওঠে, কিন্তু মানুষের কাছে তা নিয়ে আসে নতুন একটি দিন। নতুন দিনের আশা কে না করে! আরেকটু ভালো করে বাঁচার এই আশা হাজার বছরের চাইতেও পুরোনো। এই আশা কখনও তামাদি হয় না। প্রতিটি নতুন বছরের প্রথম দিনে সেই পুরোনো আশাকে আমরা নবায়িত করে নিই। বাংলা সালের হিসাবে আজ আমাদের নতুন বছর। ১৪২৯ সাল পেরিয়ে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি কালের কিনারে–১৪৩০-এর নতুন সূর্যের সামনে। এই সূর্য তো কোনো সম্প্রদায়ের একার নয়। সূর্য সবাইকেই আলো দেয়, সে কারুকে করে না বঞ্চনা। এই সূর্য এই দিন এই নতুন পাওয়া সুযোগ সবার কাজে ৫২ বছর পেরুনো বাংলাদেশের অর্জন কম না। ব্যর্থতাও আছে নিশ্চয়। তবে বাংলাদেশ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গোলাঘর হয়ে উঠেছে; সেই গোলাঘরের ফসল বৈশ্বিক বাঙালিরা সাদরে বরণ করে নিচ্ছেন; সেই কথাটি বলা হয় কই? বাঙালির সাংস্কৃতিক রাজধানী পশ্চিম থেকে পুবে সরে এসেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন রাজধানী এখন সংস্কৃতিরও রাজধানী। সেই রাজধানী নতুন দুটি বৈশ্বিক ঐতিহ্যের জন্ম দিয়েছে। প্রথমটি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান পাওয়া মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় হলো বাংলা নববর্ষ উদযাপনের শোভাযাত্রা উৎসব। দুটি ঐতিহ্যেরই জন্ম ও বিকাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে। এটিই প্রমাণ করে যে, ঐতিহ্য যেমন অতীত থেকে চলে আসতে পারে, আবার তাকে নতুন করে গড়েও নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশি সমাজে এই ঐতিহ্য দুটি যেভাবে তা উদযাপিত হয়, সেই আদলে তার উদযাপন হয় ভারতে, ইউরোপে, আমেরিকায়, কানাডাসহ যেখানেই বাঙালিরা আছে সেখানেই। বাঙালিরা আলাদা আলাদা রাষ্ট্রে বাস করলেও এই দুটি ঐতিহ্য কেবল বাঙালির মধ্যে ছড়িয়েই পড়েনি, বিশ্বায়িতও হয়েছে। আমরা একে বলতে পারি বাংলায়ন। এই বাংলায়ন কি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা ছাড়া হতে পারত? বিশ্ববাঙালিরা যদি সংকীর্ণতা দেখাত, তাহলে কি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জনগুলোকে নিজেদের করে নিত? তবে সর্বজনীন হয়ে ওঠার পথে ভেতর ও বাইরের বাধাও আছে বলে দেখা যায়। কোনো কিছুই আপনাআপনি সর্বজনীন হয় না। রাষ্ট্র জাতি গঠন করেনি, জাতিই রাষ্ট্রকে গঠন করেছে। রাষ্ট্রের হুকুম বা প্রতিষ্ঠানের চাপাচাপি দিয়ে সংস্কৃতির আঙিনায় কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সর্বজনীনতাকে আগে সর্বজনের হয়ে উঠতে হয়, সবাইকে বুকে তুলে নিতে হয়। সেই অর্থে সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যকে সর্বজনীন হয়ে ওঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। কোনো সম্প্রদায়ের দিকে বেশি ঝুঁকে যাওয়া বা অন্য কোনো সম্প্রদায়কে ‘অপর’ করা সর্বজনীনতার সঙ্গে যায় না। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে কোনো ধর্মেরই বিরোধ নেই। বাঙালি সংস্কৃতি একধর্মীয় ব্যাপার না। বাংলাদেশ বহু সংস্কৃতির মিলনের এক মোহনা। এখানে আরব-ইরানি-তুর্কি-আফগানরা এসেছে। অগ্নি উপাসক আর্যরা এসেছে। সর্বপ্রাণবাদী লোকধর্মের মানুষ এখানে ছিল। বৌদ্ধরা ছিল বিপুল মাত্রায়। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরাও প্রভাব ফেলে গেছে। সব মিলিয়েই বাংলাদেশ। সবারই শরিকানা আছে এই দেশ, এই ভাষা ও সংস্কৃতিতে। বাংলা নববর্ষ বা বঙ্গাব্দ সম্রাট আকবরের অবদান। তার আগে ছিল শকাব্দ ইত্যাদি। বৈদিক নববর্ষ বৈশাখে শুরু হতো না, তা হতো অগ্রহায়ণ মাসে। বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস ধরে সাল গণনার নিয়ম চালু করেন মুঘল সম্রাট আকবর। ভারতীয় শকাব্দ ও আরবি হিজরি মাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে মিলিয়ে তিনি এই ক্যালেন্ডার চালু করেন। এ কাজের ভার দিয়েছিলেন সেকালের বিশিষ্ট ইরানি জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজির ওপর। হিজরি চান্দ্রবর্ষপঞ্জিকে ভারতীয় সৌরবর্ষপঞ্জিকার সঙ্গে মেলান শিরাজি। বাংলা সাল ও হিজরি সাল এ জন্যই ঘনিষ্ঠ। বাংলা পঞ্জিকার সব ধর্মীয় উৎসব ও পার্বণের তারিখও আরবীয় ও ভারতীয় সাল গণনার এই মিশেল অনুযায়ীই চলে আসছে। হিসাবটা হয় এভাবে: সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের হিজরি সাল (৯৬৩) + বর্তমান গ্রেগরিয়ান সাল (২০২৩)–আকবরের সিংহাসন পাওয়ার গ্রেগরিয়ান সাল (১৫৫৬)= বাংলা বর্তমান সন ১৪৩০। বাংলা মাস-বছর বাংলাদেশের আবহাওয়া ও অর্থনীতির সঙ্গে মেলানো। এই সময়েই নতুন ফসল ঘরে থাকে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ যে জনগণ, যাঁরা নাকি কৃষক, তাঁরা খুশি থাকেন। ফলে যাবতীয় গ্রামীণ উৎসব, ওয়াজ মাহফিল, ওরস অনুষ্ঠান, মেলা ও গানের পালার মৌসুম এটিই। এটি ধানচাষ হয় এমন সব দেশেরই চিত্র। ইন্দোচিন তথা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস থেকে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার থেকে ভারত-নেপাল হয়ে বাংলাদেশেও কৃষিবর্ষের প্রথম দিনটা ক্যালেন্ডারের ঘরে কাছাকাছি বাস করে। এমনকি খোদ বাংলাদেশে বাংলাভাষীদের নববর্ষের কাছাকাছি দিনেই হয় এই দেশের পার্বত্য প্রধান তিনটি জাতির বৈসাবি (বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু) উৎসবও বাংলা নববর্ষের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে উদযাপিত হয়। এই নববর্ষ তাই কোনো একটি ধর্মের বিষয় নয়। বরং এর যোগ ফসলের সঙ্গে, কৃষকের সঙ্গে, আবহাওয়ার সঙ্গে। তাই দেখা যায় এই বিরাট এলাকার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসী, খ্রিষ্টান, জৈন অনেকেই বছরের এই সময়টায় নববর্ষ উদযাপন করে। বৃহৎ মুসলমান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দেশীয় নববর্ষও উদযাপিত হয়, হিজরি সালের প্রথম দিনেও সরকারি ছুটি থাকে, তার উদযাপন অনুষ্ঠান হয়। দেশীয় সংস্কৃতি নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো হীনম্মন্যতা দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে একসময় বাংলা ভাষা নিয়ে অনেকের বিরাগ ছিল, এখন পহেলা বৈশাখের উদযাপন নিয়েও অভিযোগ-অভিমান দেখা যায়। কোনো প্রতীক বা চর্চা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। তাই বলে উৎসবটাকেই বাতিল করে দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। তাঁরা হয়তো জানেন না যে, সেন রাজাদের আমলে রাজদরবারে ও ধর্মচর্চায় বাংলাকে দূর দূর করা হতো। বাংলার সুলতানি আমলের শাসকেরা বাংলা ভাষাকে রাজদরবারে ঠাঁই দেন, বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা ও ধর্মগ্রন্থ অনুবাদে মদদ দেন। সে সময় থেকে চারশ বছর ধরে যাঁরা ছিলেন বড় ও জনপ্রিয় কবি, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান পরিচয়ের মানুষ। নিজেদের সম্পদকে এভাবে পায়ে ঠেলা দেখে মনে পড়ে ফকির লালন শাহের কথাটি: থাকতে রতন ঘরে, এ কী বেহাত আজ আমারি।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ই-গভর্নেন্স এর ভূমিকা ও যুব সমাজের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনু‌ষ্ঠিত। মেহেরপুর জেলার কৃতি সন্তান শাইনা শোভা যুক্তরাজ্যের বায়োমেডিকেল সাইন্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন ‘ড্রোন নির্মাতা’ আশির উদ্দিনের পাশে তারেক রহমান এর পক্ষে রুহুল কবির রিজভীসহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ হাওরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ পর্যটক, বাড়ছে ভিড় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা নেই: ইরানের প্রেসিডেন্ট জরুরি বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আজ বাবাদের দিন রাতভর ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলা, নিহত ৬ ভারতে নি’হ’ত সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীমের কোটি টাকার গাড়ি কুষ্টিয়ায় মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদিতে দুটি মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ আটিগ্রাম মাঠে ঈদের সন্ধ্যায় মানুষের ভিড়, পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসনীয় মিরপুরে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হক আর নেই এডভোকেট নুরুল ইসলাম দুলাল আর পৃথিবীতে নেই শেরপুরে ৭ গ্রামে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত ‘বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছিল ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য’ দক্ষিণ চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শাহিন রামু সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক কুষ্টিয়া বাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কাজল মাজমাদার খোলা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক চাচা গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি