🇧🇩 গণঅধিকার নিউজ ডেস্ক 🇧🇩
আরও খবর
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়!
ইরান দূতাবাসের ঢাকায় ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটির কথা শুনতে চাই না
মেয়াদ বাড়লো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের
কম্বল কিনতে ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোংলা বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
ঢাকা ওয়াসায় পাস ব্যাতীত প্রবেশ নিষেধ
পাচারের টাকার গন্তব্য কোথায়?
দেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়ছে। তবে পাচারের পথ ও গন্তব্য পরিবর্তন হয়েছে-এমন মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত-বর্তমানে সবচেয়ে বেশি টাকা যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিখ্যাত শহর দুবাইয়ে। এরপরেই রয়েছে সিঙ্গাপুর। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য রয়েছে এই তালিকায়।তবে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সুইস ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটি থেকে গত ১ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশি আমানতকারীরা। বিষয়টি রহস্যজনক। পাচারের টাকা ফেরাতে চলতি অর্থবছর প্রণোদনা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু ১ টাকাও ফেরত আসেনি। এ অবস্থায় সুইস ব্যাংকের টাকার গন্তব্য দেশের স্বার্থেই জানা অতি জরুরি।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই কারণে অর্থ পাচার বাড়ছে। প্রথমত, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। যে কোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে-এমন আশঙ্কায় টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চ্ছে।আন্তর্জাতিক ৬টি সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য আসছে। এগুলো হলো-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে) প্রকাশিত পানামা প্যারাডাইস ও পেনডোরা পেপারস, জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) রিপোর্ট এবং মালয়েশিয়া প্রকাশিত সে দেশের সেকেন্ড হোম রিপোর্ট।এসব রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের সিংহভাগই সুনির্দিষ্ট ১০ দেশে যায়। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কর কম এবং আইনের শাসন আছে, অপরাধীরা সেসব দেশকেই বেছে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে-দুবাই, সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং এবং থাইল্যান্ড। সাম্প্রতিক সময়ে পাচারের বড় অংশই দুবাইয়ে যাচ্ছে। বড় কয়েকটি গ্রুপ সেখানে অফিস খুলে টাকা পাচার করছে। এছাড়াও বড় অঙ্কের ঘুস লেনদেনের জন্য দুবাই নিরাপদ। পরিশোধ করতে হয় ডলারে। এসব লেনদেনে অনেককেই সহায়তা করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান।এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুযোগ দিয়েছিল সরকার। কেউ ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে বৈধ করতে পারবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১ টাকাও ফেরত আসেনি। তবে এ ধরনের সুযোগের সমালোচনা করছে বিভিন্ন সংস্থা এবং অর্থনীতিবিদরা। বর্তমানে দেশে একজন নিয়মিত করদাতা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দেন। সে হিসাবে অর্থ পাচারকারীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, টাকা পাচারের কারণ একাধিক। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুর্বল এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে ইতোমধ্যে টাকার মনে কমে গেছে। ফলে বিত্তবানদের অনেকে, বিদেশি মুদ্রায় নিজের সম্পদ রক্ষা করতে চাচ্ছেন। অপরদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তাদের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা জরুরি। এজন্য তারা টাকা বিদেশে রাখতে চাচ্ছেন। এক কথায় একদিকে অর্থনৈতিক দুর্বলতা, অন্যদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা-এ দুটি একসঙ্গে মিলিত হওয়াতে টাকা পাচার বাড়ছে।তিনি বলেন-পাচার রোধে দেশে জ্ঞান, প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং আইনের অভাব আছে তা আমি মনে করি না। কিন্তু আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার, সেটি নেই। কারণ যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তারা প্রচলিত রাজনৈতিক শক্তির ভেতরেই অবস্থান করছে।ড. দেবপ্রিয় বলেন, অর্থ পাচার রোধে দেশে কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতরে স্থিতিশীল ও দায়বদ্ধ সরকার না থাকলে ওইসব ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। ফলে অন্য কোনো সামাজিক শক্তি, যদি ক্ষমতাবান হয়ে তাদের মোকাবিলা করতে না পারে, তাহলে প্রচলিত রাজনৈতিক শক্তি ও প্রশাসন দিয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়। এমনকি নিয়ন্ত্রণে আনাটাও কষ্টকর। সে কারণে জবাবদিহিমূলক পরিস্থিতি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য-উপাত্ত কোথায় কী আছে-এগুলো ভালোভাবে সংগ্রহ করতে হবে।তিনি আরও বলেন-অর্থ পাচার নিয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন, সিআইডি এবং ইমিগ্রেশনের কাছে তথ্য আছে। সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। এই উদ্যোগের জন্যই রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে প্রতিবছর যে টাকা পাচার হয়, এটি তার আংশিক চিত্র। পুরোটা চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ মোট বাণিজ্যের ৩৬ শতাংশই বিদেশে পাচার হয়। তার মতে, অর্থ পাচারের অনেক কারণ রয়েছে। আর এগুলো বন্ধের জন্য সরকারের সক্ষমতার অভাব হতে পারে। অথবা সরকারের সদিচ্ছা নেই।তারমতে, পাচারকারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা এ দেশে নিরাপদ বোধ করছে না। আর কারণ যাই হোক টাকা পাচার মোটেই শুভ লক্ষণ নয়।ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের টাকার পুরোটাই দেশ থেকে পাচার হয়েছে, তা বলা যাবে না। তবে সিংহভাগই পাচার হয়েছে।তিনি বলেন, শুধু সুইস ব্যাংক নয়, আরও অনেক দেশে টাকা পাচার হয়েছে। এরমধ্যে সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই টাকা গেছে। মোট ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার থেকে পাচার হয়েছে, এটা মোটামুটি বলা যায়। আর এই অর্থ পাচারের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত। পরস্পর মিলেমিশেই এ কাজ করছে।ূ
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।