পুতিনের আস্থাভাজন প্রিগোশিন যেভাবে ক্রেমলিনের শত্রু হয়ে ওঠেন – দৈনিক গণঅধিকার

পুতিনের আস্থাভাজন প্রিগোশিন যেভাবে ক্রেমলিনের শত্রু হয়ে ওঠেন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৮ আগস্ট, ২০২৩ | ৮:৩৫
ভাড়াটে যোদ্ধা গ্রুপ ভাগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিনকে অবশেষে মৃত বলে ঘোষণা করেছে মস্কো। বুধবার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই প্রিগোশিনের নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে ডিএনএ পরীক্ষা শেষে রোববার তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয় ক্রেমলিন থেকে। কিন্তু একসময় যে কিনা মস্কোর অন্যতম আস্থাভাজন ছিলেন সে কি করে হয়ে ওঠে মারাত্মক শত্রু? ২৪ জুন তারিখে মস্কোমুখি একদিনের সশস্ত্র বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রিগোশিন। তার আগ পর্যন্ত ক্রেমলিনের অন্যতম আস্থাভাজনই ছিলেন তিনি। বিদ্রোহে তার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের অপসারণ। এই বিদ্রোহকে বিশ্লেষকরা পুতিনের শাসনকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর ২৪ জুন, ২০২৩ তারিখ ছিল রাশিয়ার ইতিহাসের অস্থিরতম দিন। সেদিন রাশিয়ার রোস্তব অন দন শহর থেকে সামরিক সজ্জিত ভাগনার গ্রুপ তার যোদ্ধাদের নিয়ে প্রিগোশিনের নেতৃত্বে মস্কো অভিমুখে যাত্রা করে। রোস্তভ অন দনের সামরিক স্থাপনাও দখলে নিয়েছিল ভাগনার। বিদ্রোহের দিন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল রুশ ঘাঁটিতে হামলা করেছে ভাগনার। তখন ভাগনার বলেছিল, দেশের সামরিক নেতৃত্ব যে দুষ্টতা এনেছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিন শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী বেলারুশে বিদ্রোহীদের এবং প্রিগোশিনকে নির্বাসনের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটান। কিন্তু তখন আফ্রিকাতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন ভাগনার প্রধান। রাষ্ট্রপতি পুতিন ঘটনার পর প্রিগোশিনকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে অভিযোগ করেন। ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার হয়ে সেনা পাঠিয়েছিল। এর আগেও তারা রাশিয়ার হয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় যুদ্ধ করেছে। তিনি পুতিনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। ওয়াগনার প্রধান হিসেবে নিজেকে ঘোষণার পর প্রিগোশিন সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার কারাগার থেকে পদাতিক সেনা নিয়োগ দিয়েছিলেন। বাখমুতসহ ইউক্রেনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলের নেতৃত্ব দিয়ে জনসাধারণের প্রশংসা অর্জন করেন প্রিগোশিন। কিন্তু তিনি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিস্টেমিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জানাতে শুরু করেন। পূর্ব ইউক্রেনে সীমিত লাভের জন্য ব্যয়বহুল যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাসব্যাপী ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত হন প্রিগোশিন। তিনি এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে ওয়াগনার থেকে রসদ ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ করেন এবং মস্কোর আমলাতন্ত্রকে নিন্দা করেন। তিনি সরাসরি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে তার যোদ্ধাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে বলেন, মস্কো পর্যাপ্ত গোলাবারুদ সরবরাহ করেনি। প্রাক্তন হটডগ বিক্রেতা এবং পুতিনের নিজ শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের সন্তান প্রিগোশিন সোভিয়েত আমলে প্রায় এক দশক জেলে ছিলেন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে তিনি স্বীকার করেন যে তিনি ফাইটিং ফোর্স প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সেন্ট পিটার্সবার্গে সদর দপ্তর খুলেছেন। ধীরে ধীরে ইয়েভজেনি প্রিগোশিন রাশিয়ার প্রাক্তন সাম্রাজ্যের রাজধানীর একটি বিনয়ী পটভূমি থেকে পুতিনের ঘনিষ্ঠ অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ হয়ে ওঠেন। তিনি জালিয়াতি এবং চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে ইউএসএসআর-এর চূড়ান্ত সময়কালে নয় বছর কারাগারে কাটিয়েছেন এবং ১৯৯০-এর বিশৃঙ্খলার সময় তিনি মাঝারিভাবে সফল একটি ফাস্ট ফুড কোম্পানি শুরু করেন। এরপর তিনি রেস্তোরাঁ ব্যবসায় সময় দেন যা সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি অভিজাত এলাকায় খোলা হয়েছিল। তার নিয়মিত গ্রাহকের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিনও ছিলেন। রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে খাবার সরবরাহ থেকে ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ শুরু করেন তিনি। এরপর স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ভাগনার প্রধান। রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে অর্জিত বিশাল সম্পদের কারণে ইয়েভজেনি প্রিগোশিনকে বিলিয়নিয়ার খেতাব দেওয়া হয়। তবে তার প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ ছিল অজানা। এক সময় ওয়াশিংটন প্রিগোশিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে তার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। জুলাই ২০১৮ সালে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ভাগনারের অভিযান নিয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় একটি সংবাদ মাধ্যমে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট তিন সাংবাদিক তখন অতর্কিত হামলায় নিহত হয়। মালিতে সামরিক জান্তাকে সহায়তা করার জন্য প্রিগোশিনের ব্যক্তিগত ফাইটিং গ্রুপকে অভিযুক্ত করে পশ্চিমা দেশগুলো। তার কারণে দেশটিতে প্রায় এক দীর্ঘ দশক সামরিক অভিযান শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্স।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আতঙ্কে চলন্ত ট্রেন থেকে দম্পতির লাফ, কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু কমছে বাজেটের আকার শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস, একইসঙ্গে সুসংবাদও সংসদ ভবনের সামনে চলছে নববর্ষের কনসার্ট কমল স্বর্ণের দাম মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী অপরাধীদের ‘সেকেন্ড হোম’ বস্তির ৩০০ ঘর সরকারি ফার্মেসি: সম্ভাবনার পাশাপাশি আছে নানা চ্যালেঞ্জও রাজশাহীতে ১১০ পিচ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার সোনারগাঁ থেকে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের পদবঞ্চিতদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, আহত-৮জন চাঞ্চল্যকর সেই শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেফতার ৪ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-মেঘালয় করিডোর চান সাংমা সীমান্তে ফের বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করল বিএসএফ ঈদের পর আসছে জিম্বাবুয়ে, সূচি প্রকাশ সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় হিজবুত তাহরীরের ৩৬ সদস্য গ্রেফতার বাড়িতে বসে রোজা রাখা সহজ, খেলতে নেমে নয়! নাটক সিনেমায় নারীদের গুরুত্ব কতটুকু? রাশিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের পাল্টা ড্রোন হামলা