ফাগুনের মোহনায় ভালোবাসার রং
আজ দিনশেষে রাত ফুরালেই শুরু হবে হলদে এক ভালোবাসার দিন। ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’-পত্রিকার পাতাগুলোয় বড় বড় করে লিখা থাকবে। সঙ্গে থাকবে ভালোবাসার রঙে রাঙানো কতশত কথা! ছোট্টবেলায় পত্রিকার পাতায় যখন লিখাটি দেখতাম, মায়ের শিফনের বাসন্তী রঙের শাড়িটা পরে বসন্ত পালন করতাম। ইয়াশিকা ক্যামেরাটায় রিল ভরা থাকলে দুটো ছবি। ব্যস, ঐটুকুই। ধীরে ধীরে এই পরিসর বাড়তে বাড়তে বেশ কয়েক বছর যাবত বিশাল পরিসরে পালিত হচ্ছে এই পয়লা ফাল্গুন। পুরো বাংলা জুড়ে বয়ে যায় হলুদ-বাসন্তীর ঢেউ। ছেলেরা পড়ে হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েরা হলুদ শাড়ি। খোঁপায় গাঁদা ফুল আর গাঁয়ে জড়ায় গাঁদা ফুলের গয়না। ইদানীং সঙ্গে থাকে হরেক রকম ফুলের তৈরি মাথার ব্যান্ড। যা ছাড়া এখন সাজটাই অসম্পূর্ণ লাগে। আমরা এক রকম আধা বাঙালী, বাংলা সাল-তারিখ জানি না, মনেও রাখি না। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলো ঠিকই খুঁজে বের করি।
ষড়ঋতুর এই দেশে বসন্তকে বলা হয় ‘ঋতুর রাণী’। এ সময় প্রকৃতি সাজে সম্পূর্ণ নতুনরূপে রঙিন হয়ে। শীতের শেষে পত্রপল্লবে জাগে নতুন শিহরণ। সবুজ কচি পাতায় ভরে যেতে থাকে গাছের ডালগুলো। সঙ্গে আমের মুকুলের প্রাণ মাতানো ঘ্রাণ! প্রকৃতিতে বইতে থাকে মৃদু-মন্দ হিম হিম এক মিষ্টি মধুর মন উদাস করা হাওয়া। সে হাওয়ায় মন উড়ে যায়। কেমন এক নিঃসঙ্গতা অনুভূত হয়! দুপুরটা যেন অনেক বেশি খা খা করে। ঠিক এমনি সময় ভালোবাসা দিবসের সূচনা। এতদিন পয়লা ফাল্গুনের ঠিক পরদিনই ছিল ভালোবাসা দিবস। দুদিনব্যাপী এই উৎসব পালনের জন্য থাকে বিশাল প্রস্তুতি, রীতিমতো ঈদের মতো কেনাকাটাও শুরু হয়ে যায়। একদিন ফাগুনের রঙে হলুদ-বাসন্তী সাজ, আরেকদিন ভালোবাসার আবিরমাখা লাল টুকটুকে সাজ। ২০২০ সালে বাংলা একাডেমির নতুন করে বাংলা তারিখ প্রবর্তনের ফলে পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। উৎসব পাগল কেউ ভাবছেন দুদিনের উৎসবই ভালো ছিল। কেউ আবার ভাবছেন এটাই ভালো, একদিনে দুই উৎসব। এখন তাই লাল-হলুদ দু’রঙে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দিনটি। ভালোবাসা দিবস ভিনদেশী সংস্কৃতি থেকে আসলেও, ফাল্গুন একান্তই আমাদের বাঙালী উৎসব।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।