
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

আ.লীগ নেতার গ্রেফতার নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ

চাঁদা দাবির অভিযোগে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নেতার সদস্য পদ স্থগিত

বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ গুলি আগুন আহত ২০

ঈদের পর বড় কর্মসূচি দেবে এনসিপি

২ জামায়াত কর্মী ছনখোলায় কেন গেলেন, উত্তর খুঁজছে পুলিশ

এইচ টি ইমামের সাবেক পুত্রবধূর বাসায় ভাঙচুর লুটপাট, আটক ৩

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এনসিপি
বেগম জিয়ার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’, অনুমতি পেলেই বিদেশ নিতে প্রস্তুত বিএনপি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রবিবার (২৩ জুন) দুপুর থেকে খালেদা জিয়ার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার লাগানোর কাজ শুরু করেন এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সন্ধ্যার পর তার চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। সেজন্য হার্টে ব্লক ছিল। একটা স্টেনটিংও করা ছিল। সব কিছু পর্যালোচনা করে এখন মেডিক্যাল বোর্ড ম্যাডামের হার্টে পেসমেকার লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই পেসমেকার ট্যাম্পোরারি। এভারকেয়ার হসপিটালের ডাক্তাররা ম্যাডামের হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাকে বিশেষায়িত কক্ষ নেওয়া হয়েছে।’
পেসমেকার হৃদযন্ত্রের নিয়মিত ছন্দে চলতে সাহায্য করে। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ঠিকমতো চলছে কিনা, সেটাও এই যন্ত্র তদারকি করে, বলে জানান চিকিৎসকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পেসমেকার পরানোর অপারেশন হয়েছে। তবে ম্যাডামের পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকেরা বলতে পারবেন। কতখানি উন্নতি বা অবনতি সেটা চিকিৎসকরা নির্ণয় করবেন।’
হঠাৎ শারীরিক অবনতির কারণে শুক্রবার (২১ জুন) রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। শনিবার (২২ জুন) থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হৃদপিণ্ডে পেসমেকার লাগানোর সিদ্ধান্ত দেন।
দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠকে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন।
মেডিক্যাল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জুবাইদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন। সরকারের অনুমতি পেলেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে এবং বিএনপির সে ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আবেদন করেছি, ম্যাডামকে বিদেশে নেওয়া দরকার। রাজনৈতিক না হোক, সরকার অন্তত মানবিক কারণেও বিবেচনা করছে না।’
রবিবার দুপুরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অভিযোগ করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘খালেদার জিয়া যে অসুখ, তার চিকিৎসা বাংলাদেশে করা সম্ভব নয়, মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে, সেটার চিকিৎসার জন্য উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন।’
যদিও দলীয় প্রধানের শারীরিক ‘ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনের’ মধ্যে বিএনপি বা পরিবার—কোনও তরফেই তাকে বিদেশে নেওয়ার আলোচনা বা কার্যক্রম শুরু করার খবর পাওয়া যায়নি। খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার অবশ্য দ্বিমত পোষণ করেন।
আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন দেওয়া আছে। আবেদন পেন্ডিং পড়ে আছে। আজকে অনুমতি দিলে আজকেই নিয়ে যাবো, এরকম প্রস্তুতি আমাদের আছে।’
শারীরিকভাবে খালেদা জিয়ার অবস্থার অবনতির খবরে দলের তৃণমূল ও সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে শনিবার দেশব্যাপী দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। রবিবার (২১ জুন) নয়া পল্টনে দোয়ায় অংশ নেন মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ।
বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে কোনও উদ্যোগ বা আলোচনা শুরু করেনি বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ে বা পরিবার, কোনও পক্ষই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
‘এক্ষেত্রে সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর’- বলছিলেন একজন নেতা। তিনি মনে করেন, ‘‘ওনার পক্ষ থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দেশনা না আসবে, ততক্ষণ কেউ কোনও উদ্যোগ নিতে পারবে না। চিকিৎসকরা তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে চিকিৎসা করছেন। তবে ম্যাডামকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা শুরু করবে কিনা, এমন কোনও ইঙ্গিত বা নির্দেশনা এখনও আসেনি’ বলে জানতে পেরেছি।’’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সংশ্লিষ্ট নেতা উল্লেখ করেন, তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দিলে প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিগত সময়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা, টেলিফোন বার্তার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য দেনদরবার করেছে বিএনপি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২০২০ সালের এপ্রিলে জানিয়েছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম, বোনের স্বামী রফিকুল ইসলাম মুক্তির আবেদন করেন। পুরো বিষয়টিই আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করে।
রবিবার নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসচিব সরাসরি উল্লেখ করেছেন, ‘শেখ হাসিনা তার যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সেই প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে, তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’
গত বছরের (২০২৩) শেষ দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিঠি দেওয়া হয় পরিবারের তরফে। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পর ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। ওই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় (১ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হলে আগে কারাগারে যেতে হবে এবং তারপর আদালতে আবেদন করতে হবে।’ এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে তা ‘তামাশা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। পরে ২৬ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার যকৃতের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করেন।
২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী (এফএম সিদ্দিকী) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘২০২১ সালের ১৭ ও ১৮ নভেম্বরের পর ২৮ নভেম্বর তৃতীয় দফায় রক্তক্ষরণ হয় খালেদা জিয়ার। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে উন্নত চিকিৎসা দরকার। এসব রোগীর ফেইলর হলে লাইফ সেভ কীভাবে করা হয়, তার চিকিৎসা সেখানে সম্ভব।’ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে কমপক্ষে ১৫ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।