মিলনছলে বিরহ আনো – দৈনিক গণঅধিকার

মিলনছলে বিরহ আনো

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৩:০৭
আমি নিশ্চিত নই পুবের দুনিয়ায় এ বিষয়টি কতটা আলোচিত হচ্ছে, কিন্তু পুরো পশ্চিমা বিশ্ব আকাশে Unidentified Flying Object (UFO)-এর আনাগোনায় বিচলিত, উদ্বিগ্ন। কয়েক সপ্তাহ ধরে চাইনিজ গোয়েন্দা বেলুন দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হলেও চাইনিজ বেলুনগুলো ভূপাতিত করার পর পর আমেরিকা ও কানাডার আকাশে কিছু অদ্ভুত আকৃতির অচেনা উড়ন্ত বস্তুর দেখা পাওয়া যায়, যার সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। এগুলোকে আমেরিকা ও কানাডার সংবাদমাধ্যম বলছে Unidentified Object বা অচেনা বস্তু। এখানে লক্ষণীয় খুব সতর্কতার সঙ্গে ভষুরহম শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। যদিও এই বস্তুগুলো উড়ন্তই বটে। অনুমান করা যায় মানুষ যাতে ভিনগ্রহের প্রাণির অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়, সেজন্য শব্দগত সতর্কতা নিয়েছে এ দুটি দেশের প্রশাসন। এখানে একটি জিনিস খেয়াল রাখা দরকার, বহু বছর ধরে গোপন রাখার পর কয়েক বছর আগে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা পৃথিবীতে অচেনা উড়ন্ত বস্তুর উপস্থিতি স্বীকার করে নেয় এবং এ বিষয়ক হাজার হাজার গোপন দলিলাদি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এ ঘটনাটি যদিও মানব সভ্যতার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কিন্তু সেটি সংবাদমাধ্যমে খুব ঘটা করে প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে এই প্রথম আমেরিকা ও কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান জনসম্মুখে অচেনা উড়ন্ত বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। গত সপ্তাহের শেষে আমেরিকার মন্টানায় প্রথম, তারপর আলাস্কায় দ্বিতীয়, গত শনিবার কানাডার ইয়োকুন প্রদেশে তৃতীয় ও রবিবার কানাডার সীমান্তের কাছাকাছি লেইক হুরনে চতুর্থ এই অচেনা উড়ন্ত বস্তু যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কানাডার আকাশের বস্তুটিকে কানাডিয়ান যুদ্ধবিমান থেকে হাজার রাউন্ড গুলি করেও ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব না হলে, অবশেষে আমেরিকান এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করা হয়। আর লেইক হুরনের ওপর যে চতুর্থ অচেনা উড়ন্ত বস্তুটিকে ভূপাতিত করা হয়, সেটিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে একটি আমেরিকান এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এছাড়া আরও অনেক এমন অচেনা উড়ন্ত বস্তু গত কিছুদিন ধরে পৃথিবীজুড়েই দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া, চায়না, কলম্বিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশের সাধারণ মানুষ এসব বস্ত দেখেছেন এবং তার ভিডিও করে নানা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করছেন। আগের দিনে যেমন যোগাযোগ মাধ্যমের অপ্রতুলতার জন্য এমন ঘটনা ধামাচাপা দেয়া সহজ ছিল সরকারগুলোর জন্য, এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও আগের দিনের বেশিরভাগ অচেনা উড়ন্ত বস্তুর আকৃতি সসারের মতো দেখা গেলেও বাস্তবে এখন যেগুলো দেখা যাচ্ছে, সেগুলো বরঞ্চ গাণিতিক নানা আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন, Octagonal ev AófyR, Cylindrical বা নলাকার আকৃতির। ইতোমধ্যে অসংখ্য ছবি বিবিসি, সিএনএন, সিএনবিসিসহ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে এবং সারাদিনই এগুলো নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আলোচনা করছেন। উল্লেখ্য, এগুলোর সঙ্গে চাইনিজ আবহাওয়া কিংবা গোয়েন্দা বেলুনের কোনো সম্পর্ক পায়নি নাসা বা পেন্টাগন। এগুলো ২০ হাজার ফিট থেকে ৪০ হাজার ফিট উচ্চতায় উড়ছিল যা বাণিজ্যিক বিমান ওড়ার উচ্চতা। ফলশ্রুতিতে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও ছিল। মূলত বাণিজ্যিক বিমানের ওড়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এগুলোকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আমেরিকা ও কানাডার প্রশাসন। কিন্তু মনে রাখতে হবে একেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য ন্যূনতম ৮-১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোনো চিহ্নিত শত্রুর যুদ্ধাস্ত্র না হওয়া সত্ত্বেও জনসম্মুখে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তা ধ্বংস করা একদমই বিরল ঘটনা। ইউক্রেনে আমেরিকা ও ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যে নানা ঘটনা প্রবাহ বিরাজমান আছে, এগুলোর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটি নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এই অচেনা উড়ন্ত বস্তুগুলো হয় অন্য কোনো শক্তিশালী সামরিক শক্তির দেশের আবিষ্কৃত গোয়েন্দা যুদ্ধযান অথবা ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো উড়ন্ত বস্তু। উভয় ক্ষেত্রেই তা আমেরিকা ও তার মিত্রদেশগুলোর জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর ও চিন্তার বিষয়। যদি এমন হয় যে, এই অবিশ্বাস্য উন্নত প্রযুক্তির উড়ন্ত অচেনা বস্তগুলো রাশিয়া বা চায়না তৈরি করেছে, তবে আমেরিকা ও ন্যাটো যে তাদের চাইতে সামরিক শক্তিতে অনেক পিছিয়ে গেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে, এগুলো যদি অন্যগ্রহ অথবা ভিনগ্রহের প্রাণিদের যান হয়, তাহলে সেটি পুরো মানবসভ্যতার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু এবারের এই ঘটনা লুকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তাই মানুষের কাছে দ্রুত বাস্তব ঘটনা তুলে দেয়াই হবে রাষ্ট্রগুলোর জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও কানাডা ও আমেরিকার সচেতন মানুষ এই অচেনা উড়ন্ত বস্ত নিয়েই বেশি সচেতন ও উদ্বিগ্ন থাকবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ ও কলকাতায় চলছে বইমেলা। উভয় বইমেলায় মাতাচ্ছেন বাংলাদেশী লেখক সাদাত হোসেন ও মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন। এই বিষয়টি আমাকে খুব আনন্দ দেয়। এক সময় হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখকদের ভারতীয় বাজারে অভিগম্যতা ছিল না। সেখানে এই দুই লেখক কলকাতার পাঠকদের হৃদয় দখল করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন লেখক বেশ ভালো করছেন। মাসউদ আহমেদের লেখা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে কলকাতার পত্রপত্রিকায়। এ বড় আনন্দের বিষয়। দেশের বইমেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম হলেও প্রকাশকরা বরাবরের মতোই বলছেন বইয়ের বিক্রি তেমন নয়। বইয়ের প্রচার নিয়েও নানা মুনির নানা মত। বইমেলা আসলেই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বইয়ের খবরে সয়লাব হয়ে যায়। বহু লেখক তাদের হাজার হাজার বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন। মেলায় গেলে সেই খবর দেন। পাঠককে আহ্বান জানান মেলায় আসার। বইমেলায় এখন যত বই বিক্রি হয়, তার অনেক লেখকের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য, তাদের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। প্রচুর লেখককে দেখা যায় ক্রেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন এবং ছবির সঙ্গে ক্যাপশন পড়ে বোঝা যায় ক্রেতাদের অধিকাংশই তাদের সহকর্মী, বন্ধু, আত্মীয় ইত্যাদি। এই ধরনের ক্রেতাদের কতজন আসলে পাঠক? কতজন বইটি কিনে আদৌ তা ঘরে গিয়ে পড়েন? শুদ্ধ, সনাতন ও সুশীল লেখকরা নিজেদের বইয়ের প্রচারে বিরক্ত হন, উষ্মা প্রকাশ করেন। তারা আশা করেন, তাদের বইয়ের খবর অন্যরা প্রচার করবে। কিন্তু উনারা কারও বইয়ের প্রচার করবেন না। অন্যরা তাদের বইয়ের প্রচার না করে নিজের বইয়ের প্রচার করে জনপ্রিয়তা পেলে, সেটা তারা ‘সস্তা’ তকমা দিয়ে থাকেন। ২০১৪-১৫তে দেখেছি সাদাত হোসেনের বই শত শত মানুষ লাইন ধরে কিনছে। তখন গোষ্ঠীবদ্ধ লেখকরা বলত, সাদাত কড়াইল বস্তি থেকে মানুষ ভাড়া করে প্রচারের জন্য এই কাজ করে। আজ ২০২৩ সালে সাদাত হোসেনের বই কেনার জন্য কলকাতা বইমেলায় শত শত মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বর্তমান যুগে শুধু লেখার ‘মান’ ভালো হলেই কি সেটা বিক্রি হয়? বইকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন কি খারাপ? বইয়ের রূপসজ্জা, একে দামি করে উপস্থাপনে সাফল্য আসলে সেটাকে কি আপনি প্রত্যাখ্যান করবেন? বই বিক্রি আসলে কিভাবে হওয়া উচিত? সঠিক পন্থাটি কী? আদৌ কোনো সঠিক পন্থা আছে? লেখক বই লিখে দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকবে? এই ঘটনা কি এখন আর সারাবিশ্বের কোথাও ঘটে? একজন পাঠক মেলার দরজা দিয়ে ঢোকার পর অর্ধসহস্র প্রকাশনা সংস্থার স্টলের লক্ষ বই থেকে নিজের পছন্দের বই কিভাবে খুঁজে নেবেন? বই ও প্রকাশনা সংস্থার প্রচার ও প্রসার, চাকচিক্য, ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকাশনা উৎসব করা কি আসলে খারাপ? মানুষ তো খুঁজে খুঁজে যেসব লেখকের বড় বড় ছবি স্টলের দেয়ালে ঝোলে, তাদের বই-ই কেনে। যেসব লেখকের ফেসবুকে হাজার হাজার ফলোয়ার, তারা প্রতিদিনে একটু একটু করে উপন্যাসের গল্প সারা মাসে পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করেন, তাদের বই দেখা যাচ্ছে মানুষ বেশি কিনছেন। প্রথমা, অন্যপ্রকাশের মতো নামিদামি প্রকাশনা সংস্থার বই বাঁধানোর মান ভালো হয়, প্রচ্ছদ দামি হয়, অঙ্গসজ্জা ভালো হয়। তারা প্রচারও করেন অনেক, দামও রাখেন বেশি, সেসব বইও মানুষ কিনছে দেদার। শুরুতে যে আলাপটা করছিলাম শুধু লেখার মান ভালো হলেই কি সে বই পাঠকদের কাছে পৌঁছবে? তাহলে তো আমাদের দেশের অনেক উন্নত সাহিত্য লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকত না। আমরা জানি, অনেক ভালো লেখা পাওয়া যায় লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে। কিন্তু সেগুলোর বেচাবিক্রি কম। গত সপ্তাহের কলামে অর্থনীতির একটা তত্ত্ব নিয়ে লিখেছিলাম ‘The Prisoner’s Dilemma’। পাঠকেরা এ বিষয়ে লেখা পছন্দ করেছেন এবং আমাকে অর্থনীতির অন্যান্য তত্ত্ব সহজ ভাষায় লিখে তাদের জানাতে বলেছেন। অর্থনীতিতে একদম প্রথম বছরে আমরা ‘consumerÕs choice’ নিয়ে পড়তে গিয়ে একটা উদাহরণ পড়েছিলাম। সেটা হচ্ছে, ধরুন আপনি বাজারে গিয়েছেন আম কিনতে। দুজন দোকানি পাশাপাশি দুটো ঝুড়িতে আম বিক্রি করছে। একটি ঝুড়িতে লেখা আছে আমের কেজি ১০০ টাকা, আর অন্যটিতে লেখা আছে আমের কেজি ১২০ টাকা। মূলত এই দুই দোকানি একই জায়গা থেকে আম কিনে এনেছে এবং তাদের আমের মান একই। একজন ক্রেতা যখন বাজারে গিয়ে এই দুই ঝুড়ির আম নেড়েচেড়ে দেখবে, তখন তার মনে খটকা লাগবে একই রকম দেখতে আম, একটির মূল্য অন্যটির চাইতে কম কেন? তখন ‘Psychology of consumption’ সূত্রের একটি প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় ক্রেতা ভাববে, যে ঝুড়ির আমের মূল্য কম সেটিতে নিশ্চয় কোনো ‘ঝামেলা’ আছে। তার মন বলবে হয় ওখানে কিছু আম পচা হতে পারে, মান খারাপ হতে পারে, তখন ক্রেতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১২০ টাকা কেজি মূল্যের আম কিনবে এবং ক্রেতার অবচেতন মন তাকে বোঝাবে ১২০ টাকা কেজি দামের আমের ঘ্রাণ ভাল, আকার বড় ইত্যাদি। আবার কিছু বিক্রেতা নিজেই দুটো ঝুড়িতে একই পণ্য নিয়ে দুই দামে বিক্রি করে। সেক্ষেত্রেও দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতার মনে হয়, যে পণ্যের মূল্য বেশি, সেটার মান ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। আরেকটি তত্ত্ব ‘A consumerÕs constrained choice’। এই তত্ত্বের মাধ্যমে দেখা যায়, ওপরের ঘটনাগুলো যখন ঘটবে তখন ক্রেতার কাছে মনে হবে কেজিপ্রতি ২০ টাকার পার্থক্য খুব বেশি নয়। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব কাজ করবে না। সে দুটো কাছাকাছি মানের পণ্যের মধ্যে যেটির দাম কম সেটি কিনবে। এই ক্ষেত্রে একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। শুক্রবার ড্যানফোর্থের একটা দোকান থেকে কাচকি মাছ কিনলাম। অহনাকে কয়েক সপ্তাহ আগে জিজ্ঞেস করলাম, কি মাছ খেতে চাও। আমাকে খুব অবাক করে বলল, কাচকি মাছ। কাচকি মাছ রান্নার পর একবেলাতেই আমরা তিনজন খেয়ে শেষ করে দিলাম। শনিবারে তাই আবার কাচকি মাছ কিনলাম। হিমায়িত প্যাকেটজাত ২৫০ গ্রাম ওজনের কাচকি মাছ কিনলাম ৩ দশমিক ৪৯ ডলারে। বেশ সস্তা দামে মাছ কিনে খুশি মনে অন্য দোকানে গেলাম অন্য জিনিস কিনতে। সেসব দোকানে দেখি একই কাচকি মাছ ২৫০ গ্রাম মাত্র ২ দশমিক ৯৯ ডলার। যদিও দামের পার্থক্য মাত্র ৫০ সেন্ট, তাও মনের মধ্যে খচখচ করতে থাকল। যেহেতু এই মাছ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিমায়িত অবস্থায় দেশ থেকে প্যাকেটজাত হয়ে আসে, তাই ৫০ সেন্ট বেশি যেটার দাম সেটার মান ভাল হবে, অন্যগুলোর চাইতে তা মনে হয়নি। বরঞ্চ মনে হয়েছে, আমি যেই কোম্পানির মাছ কিনেছি তারা অহেতুক অতিরিক্ত ৫০ সেন্ট দাম রেখেছে। এই ক্ষেত্রে ‘A consumer’s constrained choice’ ই কাজ করেছে। কিন্তু যেই ফ্যাক্টরটি কাজ করেছে সেটি কেনার সক্ষমতা কিংবা ক্রেতার সাইকোলোজি নয়, বরঞ্চ ক্রেতা হিসেবে আমার এই সাড়ে ৩ ডলারের মাছের ’utility’ কিংবা উপযোগিতা এবং ‘individual preference’ বা ব্যক্তির চাহিদা। এখন এই ক্ষেত্রে যদি আমি একটা ৪ কেজি ওজনের রুই মাছ কিনতাম, তখন দামের পার্থক্য ৩-৪ ডলারের ব্যবধান হলেও মাছ টিপেটুপে আমি মূলত মান কেমন বোঝার চেষ্টা করতাম। যেই মাছটি দেখে বেশি তাজা লাগত, কম নরম লাগত (যদিও সব পাথরের মতো শক্ত হয়ে থাকে বরফের জন্য), প্যাকেজিং বেশি সুন্দর লাগত, সেটিই কিনতাম। আরেকটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব রয়েছে যা ব্যাখ্যা করে যে, কেন মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশি দামের জিনিস কেনার প্রবণতা রাখে এবং সেই তত্ত্বটিকে বলে ‘Veblen Effect’ বা ভেবলেন প্রভাব। এই তত্ত্ব অনুসারে, একটি ‘ঠবনষবহ ঊভভবপঃ’ জিনিসের দাম যত বেশি হবে, কিছু ভোক্তাদের কাছে এটি তত বেশি আকাক্সিক্ষত হয়ে ওঠে। এটি সমাজের ‘Abnormal market behaviour’ কিংবা বাংলা অস্বাভাবিক বাজার আচরণকে ব্যাখ্যা করে। আপনাদের মনে আছে ২০২২ সালে ভালোবাসা দিবসে ঢাকার একটি হোটেলে সোনার ভোগ্য কাগজে মুড়ে এক বাটি আইসক্রিম বিক্রি করছিল প্রায় সোয়া এক লক্ষ টাকায় এবং ওই আইসক্রিম খাবার জন্য বুকিং ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই শেষ হয়ে যায়। এখন এটি নিঃসন্দেহে অন্য আইসক্রিমের চেয়ে কিছুটা আলাদা। অন্য আইসক্রিমে সোনার ভোগ্য কাগজ মুড়ে দেয়া হয় না। কিন্তু সোনার কাগজ মুড়ে দিলেও এক বাটি আইসক্রিমের মূল্য যা হওয়ার কথা, দাম ধরা হয়েছিল তার চাইতে শতগুণ বেশি। কিন্তু তবুও ভোক্তার অভাব হয়নি। কারণ, যাদের হাতে টাকা আছে তারা অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে এই সেবা গ্রহণ করতে চান নিজেদের বিশেষত্ব, মর্যাদা এবং প্রতিপত্তির উপলব্ধি অন্যদের বোঝানোর জন্য, অন্যদের চেয়ে নিজেদের আলাদা দেখানোর জন্য। Veblen Effect অর্থনীতিবিদ Thorstein Veblen এর কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, যিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মানুষ সামাজিক স্ট্যাটাস দ্বারা চালিত হয় এবং তারা তাদের সামাজিক অবস্থানের সংকেত দিতে এবং তাদের সম্পদ প্রদর্শন করার উপায় হিসেবে উচ্চমূল্যের পণ্য ব্যবহার করে। আমরা প্রায় বলি স্টারে যে বিরিয়ানি আপনি ২০০ টাকায় কিনে খেতে পারবেন, সেই একই বিরিয়ানি আপনার হোটেল শেরাটনে খেতে হয়ত ব্যয় করতে হবে ২০০০ টাকা। ভেবলেনের মতে, কিছু পণ্যের মূল্য শুধু তাদের অন্তর্নিহিত উপযোগের জন্যই নয়, তাদের বহন করা প্রতীকী মূল্যের জন্যও, যা মূল্য ট্যাগের সঙ্গে আবদ্ধ। এক্ষেত্রে এই যে আপনি আপনার স্ত্রী, স্বামী কিংবা প্রেমিকাকে একটি বড় হোটেলে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই সামাজিক উচ্চমর্যাদার প্রতীকী মূল্য আপনি খাবার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিচ্ছেন। Veblen Effect মূলত দামি ভোক্তা বাজারে দেখা যায়, যেমন বিলাসবহুল পণ্য, হাই-অ্যান্ড ফ্যাশন এবং দামি গাড়ি, মোবাইল ইত্যাদি। এই বাজারগুলোতে ভোক্তারা একটি পণ্য কিনতে আগ্রহী হয় শুধু এর উচ্চ মূল্যের কারণে এবং এটির মালিকানার সঙ্গে আসা অনুভূত প্রতিপত্তি উপভোগ করার কারণে। সুইস ঘড়ি, টেসলা গাড়ি ইত্যাদি পণ্য হিসেবে ভাল হলেও তাদের দাম পণ্যের মানের চেয়েও অনেক বেশি যা আপনি বেশি দামে কিনতে ইচ্ছুক হন আপনার ’socia status’ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। বই যদিও ঠবনষবহ এড়ড়ফ নয়, কিন্তু আপনি যে বইয়ের প্রচার বেশি, যে লেখকের সামাজিক অভিগম্যতা বেশি, যে প্রকাশনীর চাকচিক্য বেশি, সেখানে বেশি দামে বই কিনতে আগ্রহী হবেন। বইয়ের ভেতরে কী আছে সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনার পছন্দের লেখকের সঙ্গে নামিদামি ও চাকচিক্যময় প্রকশনীর স্টলে ছবি তোলা বা লেখকের অটোগ্রাফ নেয়া। কারণ, পরবর্তীতে আপনি সবাইকে যেয়ে বলতে পারেন আপনার পছন্দের ও বিখ্যাত লেখকের সঙ্গে ছবি আছে। টরন্টোতে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমেছে এই সপ্তাহে। যদিও তা এখনও শূন্যের নিচে, তাও আগের চেয়ে কম। আগামী কয়েকদিন লাল আর হলুদ শাড়িতে ভরে যাবে মেয়েদের প্রোফাইল। অনেক উদাসী, বিষণ্ণ লেখা আসবে ফেসবুকজুড়ে, যা চলতে থাকবে আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত টরন্টোর ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের মানুষ রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে রঙিন পোশাকে উদ্যাপন করবে তাদের এইসব বিশেষ দিন সন্দেহ নেই। দিনের শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভালোবাসার প্রকাশের চেয়ে ভালোবাসার সততাটুকু। প্রতিবছর নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে উল্লাসের চেয়ে সময় নিয়ে একজনের সঙ্গে স্থিতধী হওয়া কাম্য। নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রেম পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তীব্র অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ। আসলে তাদের সম্পর্কের গভীরতার অভাবকে নির্দেশ করে। যা আমাদের বাবা-মার প্রজন্মে অনেক কম ছিল, খুব স্পষ্ট করে বললে আমার বাবা-মা’র মধ্যেও এই নাটকীয়তা কম দেখেছি। তাই ১৫ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা-মার ৪৭তম বিবাহবার্ষিকীতে তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই আমার পাঠকদের পক্ষ থেকে। তাদের মতো স্থিতধী হোক আজকের প্রজন্ম। সত্য ভালোবাসায় ভরাট হোক সবার হৃদয়। টরন্টো, কানাডা ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ shamimahmedjitu@gmail.com

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
চাটমোহরে ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ, কাটা হয়েছে পায়ের রগ দেশ গঠনের বার্তা দেবেন তারেক রহমান পিতাপুত্রের টাকা পাচার যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে: মুজিবুর রহমান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোনে শহীদদের স্বরণে নাগরিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত। ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ–ভারতের নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব: প্রধান উপদেষ্টার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার অচল চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যস্ত ১২ জেলা, মৃত্যু ৮ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট শুনানি ঘিরে সারাদেশে সতর্ক পুলিশ তাহিরপুর বিভিন্ন ছড়া ও নদীর খনিজ বালু হরিলুট,যেন দেখার কেউ নেই নোয়াখালী-কুমিল্লা-ফেনীতে ভারী বৃষ্টি থাকতে পারে আরও ৪৮ ঘণ্টা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেন হাফিজ উদ্দিন খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিদেশে নেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা