
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

রাশিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের পাল্টা ড্রোন হামলা

ইসরাইলি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমআ আদায় লাখো ফিলিস্তিনির

শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ, সৌদি যাচ্ছেন জেলেনস্কি

ইসরাইলি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমআ আদায় লাখো ফিলিস্তিনির

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো যুদ্ধ মোকাবিলায় প্রস্তুত চীন

ডেমোক্রেট পাগলদের দল: হোয়াইট হাউস

ট্রাম্প আসলেই একটা গুন্ডা: বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী
মুখোমুখি অবস্থানে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ: বৃহত্তর সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে

ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে লেবানন সীমান্তে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহতের ধোঁয়া এবং দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সৃষ্ট আগুন ইঙ্গিত দিচ্ছে গাজায় চলমান যুদ্ধ বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী উভয় পক্ষের জন্যই এই পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে।
গত বুধবার (১৯ জুন) হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ তার সর্বশেষ ভাষণে হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কোনও অংশ নিরাপদ থাকবে না। এমনকি সাইপ্রাস ও অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাও ঝুঁকিতে থাকবে। গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে নিয়মিত রকেট হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলার ফলে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইসরায়েলি পাল্টা হামলার কারণে দক্ষিণ লেবাননের লক্ষাধিক মানুষও তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইনকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য পাঠিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়ে জোয়াইয়া এলাকায় হিজবুল্লাহর একজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাকে গোষ্ঠীটির একজন অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করেছে। হিজবুল্লাহ তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেছে। কিন্তু তাকে কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করেনি। ঈদুল আজহা উদযাপনের পর হিজবুল্লাহ আবারও ইসরায়েলে ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক কর্মকর্তা ওর্না মিজরাহি বলেছেন, কোনও বিকল্পই ভালো নয়। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল এই আক্রমণ কত দিন সহ্য করতে পারে? আমার মনে হয়, বেশিরভাগ সরকার যুদ্ধ চায় না, তবে সম্ভবত আমরা সেই দিকে এগোচ্ছি।
নাসরাল্লাহর ভাষণকে লেবাননের অনেক মানুষকে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কায় রেখেছে। তবে কিছু কূটনীতিক ও বিশ্লেষক বলছেন, তার হুমকি ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক কথাবার্তার সঙ্গে সংগতি রাখার চেষ্টা।
ইউনিভার্সিটি অব নিকোসিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক হুবার্ট ফাউস্টম্যান বলেছেন, এটি আমার কাছে এখন একটি প্রতিরোধমূলক কৌশল। ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাড়ায় তবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে, যা হিজবুল্লাহ চায় না। তারা কী করতে পারে তা দেখানোর চেষ্টা করছে।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা বৃহত্তর সংঘাত চায় না। যদিও তারা ক্রমাগত শক্তিশালী অস্ত্রের ওপর নির্ভর করছে।
ইসরায়েলের শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকলেও হিজবুল্লাহর হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে। যারা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। গোষ্ঠীটির হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে আঘাত করতে সক্ষম।
গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহর একটি ড্রোন হাইফা বন্দরের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে উড়েছিল। যা ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোসহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য হামলার হুমকি তুলে ধরেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইসরায়েল বৈরুতকে গাজায় পরিণত করবে। তবে বৃহত্তর সংঘাতের ফলে ইসরায়েলের খ্যাতনামা আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়ত কুলিয়ে উঠতে পারবে না। ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহর ছোঁড়া শত শত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে এই ব্যবস্থা।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশ্লেষক সেট জি. জোনস বলেছেন, আমার মনে হয় হিজবুল্লাহর মনে করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের কিছু সুবিধা রয়েছে। কারণ যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়লে লেবানন ও সিরিয়ায় যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি ইসরায়েলে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে।
অভিযানিক প্রস্তুতি:
কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি কমান্ডাররা ‘ভিন্ন মাত্রায় উত্তরের সঙ্গে যুদ্ধ করার বাস্তবতায়’ প্রশিক্ষণ এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে যাচ্ছেন। হামাস যোদ্ধাদের আক্রমণের পর থেকে গাজা এখনও যুদ্ধের প্রধান ক্ষেত্র। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা যুদ্ধের মূল পর্বের সমাপ্তি হতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে।
গাজায় তীব্র যুদ্ধের পরে অনেক ইউনিটের বিশ্রাম ও পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন। তবে এই সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ড বলেছে, তারা লেবাননে আক্রমণের জন্য অভিযানিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।
জ্বালানিমন্ত্রী ইলি কোহেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইসরায়েলের কৌশলগত বিদ্যুৎ অবকাঠামো সুরক্ষিত করতে সেনাবাহিনী জ্বালানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলের ওপর যেকোনও হামলার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
লেবাননের বিদ্যুৎ অবকাঠামো ইতোমধ্যে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। কয়েক দশকের খারাপ শাসন ও সংঘাতে এই পরিণতি হয়েছে। এসব সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষও রয়েছে।
অতীতে লেবাননে অম্লমধুর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে ইসরায়েল। ১৯৮২ সালে তাদের বাহিনী আক্রমণ করার পর তারা প্রায় দুই দশক ধরে একটি বাফার জোন ধরে রাখতে বাধ্য হয়েছিল। ওই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর জন্ম হয়। দুই ইসরায়েলি সেনাকে বন্দি করার পর ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে দ্বিতীয় যুদ্ধে জড়ায় ইসরায়েল। এই যুদ্ধের পর জাতিসংঘ স্বীকৃত লিতানি নদীর তীরে যুদ্ধবিরতির রেখা থেকে কয়েক মাইল ভেতরে হিজবুল্লাহ নিজেকে ক্রমাগত শক্তিশালী করেছে।
তবে নেতানিয়াহুর ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে। কারণ গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে এবং গাজায় সংঘাত শুরুর আট মাস পরেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার কোনও ইঙ্গিত নেই।
সীমান্তে ডজনখানেক ইসরায়েলি শহর খালি। প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে অস্থায়ী বাসস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সঙ্গে খালি রাস্তা পড়ে আছে। প্রায় ৯০ হাজার মানুষ দক্ষিণ লেবানন থেকে পালিয়ে গেছে।
সাবেক ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সারিত জেহাভি, তিনি ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ থিংক ট্যাংক পরিচালনা করেন। তিনি বলেছেন, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর যারা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তাদের মধ্যে কম লোকই সীমান্তের ওপারে হিজবুল্লাহর উপস্থিতি থাকা অবস্থায় ফিরে আসতে রাজি হবে। ১৭ বছর ধরে আমরা হুমকির বিরুদ্ধে কিছুই করিনি। কিন্তু এই হুমকি মোকাবিলা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে।
সূত্র: রয়টার্স
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।