রূপপুর ও রুশ জাহাজ নিয়ে আলোচনা চায় না বাংলাদেশ – দৈনিক গণঅধিকার

রূপপুর ও রুশ জাহাজ নিয়ে আলোচনা চায় না বাংলাদেশ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ মার্চ, ২০২৩ | ৭:২৫
মান ভাঙাতে জাতিসংঘে মস্কোর বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ। তবুও অভিমান ভাঙেনি রাশিয়ার। রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে আজ শুরু হতে যাওয়া আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিশন বৈঠকে প্রসঙ্গটি উঠাতে পারে রাশিয়া। অপরদিকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধের বিষয়েও আলোচনা করতে চাইতে পারে দেশটি। কিন্তু এ দুটি ইস্যুর কোনোটিই আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈঠকে আলোচনা চায় না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দুদিনব্যাপী আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈঠক আজ সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজের ওপর বাংলাদেশের সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তি আছে। তার ওপর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। রুবলের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করতে বলছে রাশিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ বলছে, অর্থ লেনদেনের সমস্যার জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। এমন একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে এবারের আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিশন বৈঠক হচ্ছে। প্রথম দিন কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা হবে। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব শরিফা খান। রাশিয়া নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কোনো কর্মকর্তাকে নয় বরং একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেছে। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, রেলওয়ে প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন। বৈঠকে রাশিয়া জাহাজের ইস্যু তুলতে পারে বলে ধারণা করছেন ঢাকার কোনো কোনো কর্মকর্তা। পাশাপাশি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি নিয়েও রাশিয়া জানতে চাইতে পারে। জানতে চাইলে ইআরডি সচিব শরিফা খান আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিশন বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান। তিনি রোববার বলেন, ‘সোমবার কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনার ফলাফল থেকে জানব। তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের পর্যায়ে বৈঠকে আলোচনা করব।’ তবে ইআরডি ইউরোপ ডেস্কের অতিরিক্ত সচিব উত্তম কুমার কর্মকার বলেছেন, ‘৬৯ রুশ জাহাজের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রাজনৈতিক বিষয়। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করে থাকে। ফলে এই বৈঠকে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। অপরদিকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি নিয়ে আলাদা বৈঠক হতে পারে। এই বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই না।’ ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ উরসামেজর ভারতে কিছু সামগ্রী নামানোর পর বাংলাদেশ অভিমুখে রওয়ানা করে। ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মান্য করে না। জাহাজটিতে রীপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম ছিল। গত ২০ ডিসেম্বর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের কাছাকাছি এলে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে যে, উরসামেজরের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে জাহাজটিকে তীরে ভিড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। উরসামেজর পরে ভারতে ভিড়তে চাইলে এবার আর ভারত নোঙর করতে দেয়নি। ভারত থেকে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে উরসামেজর কোথায় গেছে সেটা আর জানা যায়নি। দুই দেশের দুই মত : রুশ জাহাজের ওপর সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা নিয়ে দুই দেশের দুই মত। রাশিয়া বলছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ বলছে, সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে। উরসামেজর বিদায়ের পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা ৬৯ জাহাজকে বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দেয় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি ঘোষণাও করে। এতেই ক্ষুব্ধ হয় রাশিয়া। রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে রাশিয়া বলেছে, কোনো দেশের চাপে বাংলাদেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের পাশে ছিল রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশের সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বলেছেন, জাহাজ কিংবা অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির আগে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করেছিল রাশিয়া। বাংলাদেশ সম্পর্কের অস্বস্তি কাটাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল। এ কারণে বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়ার অভিমান ভাঙেনি। ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দার মান্তিৎস্কি ৬৯ জাহাজের ওপর বাংলাদেশের সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অভিজ্ঞ কূটনীতিকরা মনে করেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ বাংলাদেশে আসতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। তবে এভাবে ঘটা করে চিঠি ও ঘোষণা নিয়ে রুশ জাহাজের ওপর সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল না। বরং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজগুলোর কোনোটি বাংলাদেশে আসতে অনুমতি চাইলে অনুমতি না দিলেই যথেষ্ট ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ায় বিষয়টি বেশি ফলাও হয়েছে। এতে রাশিয়া উদ্বেগ দেখিয়েছে। রূপপুর নিয়ে পৃথক বৈঠক : রূপপুরে ১৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া। তাদের অর্থ পরিশোধ করা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর থেকে এই জটিলতার সূত্রপাত। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আরও কঠিন অবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিছুদিন আগেও পরমাণু হামলার ভয় দেখা দিয়েছিল। এখন ইউক্রেনের ড্রোন মস্কোর কাছাকাছি গিয়েও পড়ছে। অপরদিকে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা সুপারসনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেবে শোনার পর রাশিয়া আকাশ থেকে হামলা শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে চলছে এই হামলা। তারপর সুপারসনিক বিমানেও হামলার আশঙ্কা রয়েছে। ন্যাটো এফ-১৬ সুপারসনিক যুদ্ধবিমান দিলেও সেগুলো পরিচালনায় দক্ষতা অর্জনে সময় নেবে ইউক্রেন। তাই আগেভাগে রাশিয়া বিমান হামলা শুরু করে দিতে পারে। ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে ইউরোপকে পালটা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়া বলছে, রুবলে পরিশোধ না করলে তেল সরবরাহ করবে না। বাংলাদেশে রূপপুরের অর্থ পরিশোধেও রুবলের শর্ত দিচ্ছে। কিন্তু ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় রুবল কিংবা ডলার কোনো মাধ্যমেই লেনদেন করতে পারছে না বাংলাদেশ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় অর্থ পাঠানোর কোনো অ্যাকাউন্টও কার্যকর নেই। ফলে অর্থ পরিশোধে জাটিলতার জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। কমিশন বৈঠকে এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চায় না বাংলাদেশ। পৃথক বৈঠক করে আলোচনা করা যায়।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোনে শহীদদের স্বরণে নাগরিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত। ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ–ভারতের নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব: প্রধান উপদেষ্টার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার অচল চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যস্ত ১২ জেলা, মৃত্যু ৮ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট শুনানি ঘিরে সারাদেশে সতর্ক পুলিশ তাহিরপুর বিভিন্ন ছড়া ও নদীর খনিজ বালু হরিলুট,যেন দেখার কেউ নেই নোয়াখালী-কুমিল্লা-ফেনীতে ভারী বৃষ্টি থাকতে পারে আরও ৪৮ ঘণ্টা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেন হাফিজ উদ্দিন খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিদেশে নেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রংপুর কারাগারে বন্দিদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ১ আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার নিয়ন্ত্রণে আসেনি জামালপুর জেলা কারাগার, রাতেও থেকে থেমে চলছে গুলি গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের ২ কর্মী নিহত