নিউজ ডেক্স
আরও খবর
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়!
ইরান দূতাবাসের ঢাকায় ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটির কথা শুনতে চাই না
মেয়াদ বাড়লো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের
কম্বল কিনতে ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোংলা বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
ঢাকা ওয়াসায় পাস ব্যাতীত প্রবেশ নিষেধ
আওয়ামী লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ
শক্তির মহড়া ॥ রাজধানীতে দু’দলের আজ
অবশেষে এক কিলোমিটার দূরত্বে দুই বড় দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন মহল থেকে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার বেলা ২টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ আর এক দফা দাবিতে বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করছে। দুই দলই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি শোডাউন করে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজপথ দখলেরও চেষ্টা করছে। আজ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে। এ ছাড়া জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবার মনে একই প্রশ্ন, কী হচ্ছে আজকের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে? সংঘাত-সহিংসতার মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না তো?
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। আর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করতে চায়। কিন্তু কাউকেই পছন্দের ভেন্যুতে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিএনপিকে বলা হয় গোলাপবাগ মাঠে আর আওয়ামী লীগকে বলা হয় শেরেবাংলা নগর পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে কর্মসূচি পালন করতে। দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে বৃহস্পতিবার তাদের ২৩ শর্ত সাপেক্ষে নিজ নিজ পছন্দের ভেন্যুতেই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়। এর পর দুই দলই দ্রুত মঞ্চ নির্মাণসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।
এদিকে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে চায় বিএনপি। তবে এইদিন রাজধানীতে রাজপথের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপি ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে চারদিকে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগেই দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল নিজ নিজ কর্মসূচি সফল করতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকতে বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেয়।
আজকের মহাসমাবেশে সারাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউনের কথা জানিয়েছেন বিএনপির আয়োজকরা। তাদের দাবি, মহাসমাবেশে সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। মহাসমাবেশ থেকে তারা আন্দোলনের আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। অন্যদিকে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনও। বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে তাদের শান্তি সমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত করার কথা জানিয়েছে আয়োজকরা। শুধু শান্তি সমাবেশই নয়, শুক্রবার মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও শান্তি অবস্থানে থাকারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
আজ শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সারাদেশে একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার ফল। ফল জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় করবেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবেন। তাই বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
মহাসমাবেশের আগেই দলের সর্বোচ্চ ফোরাম ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্ত করে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে ফেলতে রাজধানীতে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ প্রথম মহাসমাবেশ পালন শেষে সরকারকে আল্টিমেটাম ও নতুন কর্মসূচি দেবে। দ্বিতীয় মহাসমাবেশ করবে সেপ্টেম্বরে এবং নির্বাচনের আগে আরও অন্তত একটি মহাসমাবেশ করবে। এতে সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জড়ো করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করে রাজপথ দখলে নিতে চায় দলটি। তবে মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগও।
তাই ধারাবাহিক পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ করবে। বড় দুই দলের মাঠ দখলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ থাকবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
গত বছর ১০ ডিসেম্বর আন্দোলনের ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রথম দফায় ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়া সকল মহানগর ও জেলা সদরে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। তবে ওইদিন রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় পালন করা হয় গণমিছিল কর্মসূচি। এর পর থেকে বিএনপি এককভাবে এবং সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ধাপে ধাপে সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রা ও গণমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর গত ১২ জুলাই পল্টনের সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয় আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি। একইদিন আওয়ামী লীগও বিশাল সমাবেশ করে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করে।
আজকের মহাসমাবেশ সফল করতে রাজপথের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপি ও এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ রাজধানীতে নিজ নিজ কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি জোরদার করছে আগেই। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল নিজ নিজ দলের কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে অনেক প্রস্তুতি সভা করেছে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকতে বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলোকে আগেই নির্দেশ দেয়। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসমাবেশে যত নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটবে তারচেয়ে অনেক বেশি নেতাকর্মী ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছে।
বিএনপির এই মহাসমাবেশের টার্গেট আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে চাপে ফেলে দাবি আদায় করা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের টার্গেট অতীতের মতো রাজপথেই বিএনপিকে মোকাবিলা। বিএনপি আজকের মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আগেই। বিপরীতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। দুই পক্ষের এমন অনড় অবস্থানের কারণে জনমনে শঙ্কাও বাড়ছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ কর্মসূচি ॥ আজ শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ নামে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। রাজধানীতে এই শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনসমুদ্রে পরিণত করার টার্গেট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তি দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। লাখো নেতাকর্মীকে নিয়ে শান্তি সমাবেশের ব্যানারে দলটির তিন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে তাদের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস প্রতিহত করতে আজ ঢাকা মহানগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগ বাড়িয়ে বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে না জড়িয়ে যতটা সম্ভব ধৈর্যধারণ করে রাজপথে সজাগ ও সতর্ক অবস্থায় থাকতে দলের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে মহাসমাবেশের নামে বিএনপি কোথাও রাজপথে বসে পড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার কথাও বলা হয়েছে। তবে বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচিকে ঘিরে রাজপথে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতার অপচেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছে, মহাসমাবেশের নামে রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং আগামী নির্বাচনকে ভ-ুল করতে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের মিত্ররা নানা চক্রান্ত করতে পারে।
তাই ফাঁকা মাঠে বিএনপি যাতে কোনোভাবেই গোল দিতে না পারে সেজন্য তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে নিয়ে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। অহিংস শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে তারা, কিন্তু বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাস কিংবা নৈরাজ্যের পথে হাঁটলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে।
তিন সহযোগী সংগঠনের আজকের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে এই তিন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক থেকে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকেও তিন সংগঠনের ব্যানারে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে শান্তি সমাবেশকে রীতিমতো মহাসমাবেশে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জনকণ্ঠকে জানান, তিন সংগঠনই ঢাকা ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীকে নিয়ে শান্তি সমাবেশে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লক্ষাধিক লোকের জমায়েতের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টা থেকেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হবেন নেতাকর্মীরা। সেখানে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল তিনটায় শুরু হবে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও সমাবেশে উপস্থিত হয়ে দেবেন পরবর্তী নির্দেশনা।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব। সমাবেশ সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসমাবেশ ॥ অবশেষে নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করার অনুমতি পেল বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আজ শুক্রবার বেলা ২টায় এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এর মাধ্যমে দলটি রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দেবে।
পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বুধবার থেকেই সারাদেশের সকল জেলা-উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় এসে জড়ো হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাসা, বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। আবার অনেকেই মহাসমাবেশস্থলে অবস্থান নেয়। আরও অনেক নেতাকর্মী বৃহস্পতিবার সকালে সারাদেশ থেকে রাজধানীতে আসার কথা থাকলেও পরে মহাসমাবেশ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার করার ঘোষণা দেওয়ায় তারা আজ সকালে আসছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা মঞ্চ বানানোসহ যাবতীয় কাজ দ্রুত শেষ করে। সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরাও নয়াপল্টনে গিয়ে জড়ো হতে থাকে। সেখানে জড়ো হয়ে তারা স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা মাতিয়ে রাখে।
আজ শুক্রবার রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের তারুণ্যের জয়যাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত কি হতে যাচ্ছে এ নিয়ে জনমনে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করে। এ জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই রাজধানীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। যানবাহন ও লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে আসে। অতি জরুরি কাজ ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করেনি। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়।
বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও জনসভা করার ঘোষণা দেয়। তাই একদিনে রাজধানীতে রাজনৈতিক দলগুলোর লাখ লাখ লোকের জড়ো হওয়াকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকাবে কি না তা নিয়ে বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, যেকোনো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করা হলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর আজকের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর মধ্যে ভীতি সঞ্চার করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুলিশ বলছে কর্মসূচি পালনের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় আজকের মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে আগের চেয়ে বেশি লোকসমাগম হবে বলে বিএনপি নেতারা আশা করছেন। আর এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে চায় বিএনপি। তাই কর্মসূচি সফল করতে সারাদেশের সকল স্তরের কমিটিকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। আগেই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিট ও আশপাশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই আজকের মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হচ্ছে। আর এই মহাসমাবেশ থেকেই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
আজকের মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগ, ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ও সকল উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে নিজ নিজ অবস্থানে থাকবে বলে জানা যায়। এ জন্য দূরের জেলাগুলো থেকে বুধ এবং বৃহস্পতিবারই নেতাকর্মীরা চলে এসেছে। বাকিরা আজ সকালে এসে পৌঁছবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের অনুমতি পাওয়ার দ্রুত সেখানে ছুটে যান দায়িত্বশীল বিএনপি নেতারা। শুরু করেন মঞ্চ নির্মাণের কাজ। দলে দলে সেখানে এসে উপস্থিত হন উৎসুক নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও বাড়ানো হয়। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের গলিমুখে বিপুলসংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সদস্য তৎপর থাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিএনপির এখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তারা আজকের মহাসমাবেশ থেকে আরও কর্মসূচি দিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করবে। তবে এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করবেন।
১২ জুলাই নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় ধরনের সমাবেশ করে ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী ২ দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর পর ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউন করে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এই কর্মসূচি যুগপৎভবে সকল সমমনা দল পালন করবে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই দিনই জানিয়ে দেন। তবে নয়াপল্টনে বৃহস্পতিবার করার অনুমতি না পাওয়ায় আজ শুক্রবার এ মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
আজকের মহাসমাবেশ থেকে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দিতে পারে বিএনপি। এ ছাড়াও স্বাভাবিক আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে-পরে কিছু কর্মসূচি পালন থেকে বিরত আবার আন্দোলন জোরদার করা হবে। এরপর সেপ্টেম্বর রাজধানীতে আকেটি একটি মহাসমাবেশ ও পরবর্তীতে আরও মহাসমাবেশ শেষে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে বিএনপি। তবে বিএনপি আপাতত অহিংস কোনো আন্দোলনে যেতে চায় না। সরকার বিএনপির দাবি মানার বিষয়ে অনমনীয় অবস্থানে থাকলে শেষ দিকে বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যেতে চায়। আর আন্দোলনেই দাবি আদায় করতে চায়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি প্রায় তিন ডজন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে দীর্ঘদিন আগে থেকেই চেষ্টা শুরু করে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে গত ৭ মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি যুগপৎভাবে শতাধিক কর্মসূচি পালন করে। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সক্রিয় করার চেষ্টা করে। আন্দোলন জোরদার করার জন্য এক দফা দাবির পাশাপাশি ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বিএনপি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পর থেকেই বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। যে কারণে রাজপথে জোরালো কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও হতাশ হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি গত বছর ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করে এককভাবে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশশ হিসেবে গত বছর ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করে ১০ দফা দাবি পেশ করে এ দাবি আদায়ে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
আগে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথের কর্মসূচি পালনে তেমন আগ্রহ না দেখালেও এখন মামলা-হামলার ভয় উপেক্ষা করে রাজপথে কর্মসূচি পালন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক দফা দাবি আদায়ে এখন মাঠের আন্দোলনে অধিক সক্রিয় তারা। দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এক দফা দাবির সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিএনপিপন্থি পেশাজীবী ও শ্রমজীবী সংগঠনগুলোও সক্রিয় হয়েছে।
আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে- আব্বাস ॥ সরকারবিরোধী আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। মহাসমাবেশে আসতে বাধা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
২৩ শর্তে দুই দলকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি ॥ ২৩ শর্তে দুই দলকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয় ডিএমপি। যে ২৩ শর্তে সমাবেশের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনুমতি পায় সেগুলো হচ্ছে- ১. এ অনুমতি স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ৩. অনুমোদিত স্থানেই মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না। ৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। ৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৯. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না। ১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। ১৩. সমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ১৪.সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। ১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে ( বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা) মহাসমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ,১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘিœত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। ১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। ২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। ২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।২২. উল্লেখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং ২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এ অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।