নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
শূন্য অগ্রগতি নিয়ে বছর পার ২৩৬ প্রকল্পের
রীতিমতো শূন্য অগ্রগতি নিয়েই অর্থবছর পার করেছে সরকারের ২৩৬টি প্রকল্প। এখানেই শেষ নয়-এক টাকাও খরচ করতে পারেনি, রয়েছে এমন ৯৪টি প্রকল্পও। আবার কিছু টাকা খরচ করতে পারলেও প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। কেবল অফিস ব্যবস্থাপনা এবং ভাড়া করা গাড়ির খরচ জোগান দিয়েছে। এছাড়া ৫৫৪টি প্রকল্পে অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
আইএমইডির ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন চিত্র।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন চিত্র শুধু বিস্ময়ই নয়, বড় ধরনের দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এতে বোঝা যায়, কোনো ধরনের জবাবদিহি না থাকায় এমনটি ঘটেছে।
অবশ্য প্রকল্পের এমন বেহাল বাস্তবায়ন নিয়ে কতগুলো গৎ বাঁধা যুক্তিও দেখিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অর্থছাড় না হওয়া বা দেরিতে অর্থছাড় হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, দরপত্র আহ্বানে দেরি, দরপত্র রেসপন্সিভ না হওয়া এবং প্রকল্পের ঋণ না পাওয়াই এর অন্যতম কারণ। এছাড়া দাবি করা হয়, অপ্রতুল বরাদ্দ, মামলাজনিত সমস্যা, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন, আরডিপিপি অনুমোদনে বিলম্ব, দরদাতার সঙ্গে চুক্তিতে দেরি এবং কোভিড-১৯ মহামারির ঘটনাও দায়ী।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার বলেন, এসব ঘটনার দায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও এড়াতে পারে না। তবে মূল দায়দায়িত্ব হচ্ছে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এবং ওই সব মন্ত্রণালয়ের। আমরা মাঝেমধ্যেই প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের ডেকে মিটিং করছি। তাগাদা দিচ্ছি। কিন্তু ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে সামনে আরও কঠোর হতে হবে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, কাগজেকলমে প্রতিবেদন দিয়ে লাভ নেই। কিছু গতানুগতিক কারণ তুলে ধরা হলেও এগুলোর সমাধান হচ্ছে না কিংবা দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে না। তাহলে লাভ কী হয়। দেখা যায়, সব ক্ষেত্রেই শুধু অর্থ ও সময়ের অপচয় ঘটছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এক্ষেত্রে এডিপিতে প্রকল্প গ্রহণে যেমন রাজনৈতিক বিবেচনাসহ নানা দুর্বলতা আছে, তেমনই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অদক্ষতা রয়েছে। এমন ঘটনার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। কিন্তু সেদিকে কারও কোনো নজর নেই। এখন সময় এসেছে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার।
ফেব্রুয়ারির শেষদিকে তৈরি করা আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৮৩৪টি। এগুলোর মধ্যে ৯৪টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। অথচ এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে বাস্তব অগ্রগতি শূন্য থাকা ১০১টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ৫০টি প্রকল্পের অনুকূলে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ১২টি প্রকল্পে সেই টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ৪১টি প্রকল্পে ১ লাখ টাকাও খরচ হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ওই অর্থবছরের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৪৪টির আর্থিক এবং ৩০৭টির বাস্তব অগ্রগতিসহ মোট ৫৪৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। পাশাপাশি ৪৩৪টি প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে ৮২৪ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বাস্তবায়ন সন্তোষজনক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, এজন্য দায় তো অবশ্যই কারও না কারও আছে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দায় থাকে। তবে গত অর্থবছর ক্যাটাগরিভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যে তালিকা করা হয়েছে, সেখানে এসব প্রকল্পের বেশির ভাগই ছিল ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। এছাড়া করোনা এবং চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেখানে গাড়ি কেনা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বিদেশ সফরসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে অনেক প্রকল্পে টাকা খরচ করা যায়নি। সেই সঙ্গে মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নিয়মিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) বৈঠক না হওয়ায় এমনটি হয়েছে। তবে আইএমইডির একটি অধিদপ্তর ও বিভাগীয় অফিস স্থাপন করা গেলে মনিটরিং আরও জোরদার সম্ভব হতো। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মো. নুরুল আমিন বলেন, পুরো একটি অর্থবছর পার হলো। কিন্তু কেন অগ্রগতি শূন্য অবস্থায়, এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহিতা অবশ্যই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে বছরের পর বছর একই ঘটনা ঘটতে থাকলেও কোনো প্রতিকার নেই। এভাবে বাস্তবায়ন পিছিয়ে থাকলে ব্যয়ও বেড়ে যাবে। কেননা রড, সিমেন্টসহ সব পণ্যের দামই তো বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকসহ সব জনবলের বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, যদি এসব প্রকল্প কম গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে শুরুতেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল।
অর্থব্যয় হলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হিলি, বুড়িমারী এবং বাংলাবান্দায় এলসি স্টেশন নির্মাণে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্যই রয়েছে। এছাড়া ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, অগ্রগতি নেই। নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে খরচ হয়েছে ৬ কোটি টাকা।
শূন্য অগ্রগতির আরও কয়েকটি প্রকল্প হলো ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এক্সটেনশন প্রজেক্ট, বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা জেলার হাইওয়ে সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন এবং জেদ্দায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প।
এছাড়া পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, সিলেটে কিডনি হাসপাতাল স্থাপন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা শহরের ড্রেন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অ্যাশফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।