সংগঠনের নামই বদলে ফেলল দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা – দৈনিক গণঅধিকার

সংগঠনের নামই বদলে ফেলল দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:১৩
হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি), জামা'আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবির পর দেশে সক্রিয় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। একের পর এক লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা মুক্তমনা ও প্রগতিশীল নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। শুরুর দিকে আনসার আল ইসলামের নাম ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। ২০১৩ সালে এ সংগঠনের সদস্যদের হাতে প্রথম খুন হন ব্লগার রাজীব হায়দার। ২০১৫ সালে নিষিদ্ধ হয় এবিটি। ২০১৭ সালে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার ৬ বছরের মাথায় নাম বদলে ফেলেছে আনসার আল ইসলাম। গত বছরের শেষদিকে নাম বদলের বিষয়টি সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত হয়। সম্প্রতি নাম বদলের বিষয়টি জানতে পারেন উগ্রপন্থিদের তৎপরতার ওপর নজর রাখা গোয়েন্দারা। শুরু থেকে আনসার আল ইসলাম নিজেদের আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা বলে দাবি করে। দুর্ধর্ষ এই জঙ্গি সংগঠন তাদের নাম থেকে 'আনসার' শব্দ বাদ দিয়েছে। নতুন নামের সঙ্গে 'আল কায়দা' যুক্ত করতে চাচ্ছে- এমন কিছু গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এ সংগঠনে নতুনভাবে নারী শাখা যুক্ত হয়েছে। বেশ কয়েকজন জঙ্গির স্ত্রী ও পরিবারের নারী সদস্যকে এরই মধ্যে ওই শাখায় যুক্ত করা হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত চত্বর থেকে যে দু'জন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, সে পরিকল্পনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন সদ্য নাম বদলানো এ জঙ্গি সংগঠনের নারী সদস্য ফাতিমা তানসিম শিখা। ঢাকার একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটপ্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ডে প্রকৌশলী শিখা পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে একজন। সে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ছিনতাই অপারেশনের আগের দিন তার কাছে অর্থ পাঠিয়েছে পরিকল্পনায় যুক্ত আরেক জঙ্গি। আনসার আল ইসলাম তাদের নাম বদল করেছে- এ ধরনের তথ্য আমরা পেয়েছি। এক দশকের বেশি সময় ধরে জঙ্গি তৎপরতার ওপর খোঁজ রাখেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, আনসার আল ইসলাম কেন, কী কারণে হঠাৎ নাম পরিবর্তন করেছে- এর পেছনের কিছু তথ্য পেয়েছেন। আনসার শব্দের অর্থ সাহায্যকারী। এই সংগঠন সাহায্যকারীর ভূমিকায় আর দেখতে চায় না। তারা নিজেদের স্বতন্ত্র, পরিপূর্ণ সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নিজেদের আল কায়দার মতাদর্শে বিশ্বাসী মনে করলেও আল কায়দা তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে- এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পায়নি। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে এ সংগঠনের শীর্ষ নেতা মনে করা হতো মেজর (বরখাস্ত) জিয়াকে। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন, সদ্য নাম বদলে ফেলা আনসার আল ইসলামের ৬ সদস্যের শূরা বোর্ড আছে। ওই বোর্ডের ৬ জনের একজন জিয়া। এই প্রথম এ সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক আমির সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। চমকে দেওয়ার মতো একটি নতুন তথ্য সামনে এসেছে। আনসার আল ইসলামের শুরুর দিকে আমির ছিলেন সোহেল। আফগানিস্তানে যুদ্ধে নিহত হন তিনি। আদালতের ফটকে পুলিশকে মারধর ও চোখে পিপার স্প্রে ছিটিয়ে দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ও আবু ছিদ্দিক সোহেলকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাতে দেখা যায়, জঙ্গি সোহেলের স্ত্রী ফাতিমা ছিনতাই পরিকল্পনার আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আয়মানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ঘটনার পাঁচ দিন আগে ১৬ নভেম্বর নতুন একটি মোবাইল সেট কেনেন ফাতিমা। আর আয়মানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পুরোনো একটি সিম ব্যবহার করেছেন তিনি। ছিনতাই অপারেশনের আগের দিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিখার কাছে এক জঙ্গি ২০ হাজার টাকা পাঠান। ১৯ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ফাতিমা ময়মনসিংহের বাসা থেকে ৬ বছরের বাচ্চাসহ ঢাকায় রওনা হন। ভোর রাতে বাসা ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে ফাতিমা তাঁর বাবা আবু মোহাম্মদ হোসাইনকে বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঢাকায় যেতে হবে।' এর পর দাবি করেন, 'দাওরা পড়ার জন্য অনেক দিন তাঁকে ঢাকায় থাকতে হবে।' শেষ পর্যন্ত ভোররাতে মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তাঁর বাবা। প্রথমে তাঁরা পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে যান। ফাতিমা আগে থেকেই জানতেন, ওই দিন শুনানির দিন ধার্য রয়েছে এবং আদালত চত্বর থেকে তাঁর স্বামীসহ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েকজন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। বাবার কাছে পরিকল্পনার পুরো বিষয়টি আড়ালে রেখে ফাতিমা তাঁর শিশু সন্তানসহ পুরান ঢাকার নারিন্দায় মামার বাড়িতে যান। সেই বাসাটি কমান্ড সেন্টারের মতো ব্যবহার করেছেন তিনি। আর তাঁর বাবা আদালত চত্বরে বসে ছিলেন। তিনি তখনও অন্ধকারে ছিলেন- আসলে কী ঘটছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ডের কাছাকাছি সময়ে পুরান ঢাকায় শিখার মামার বাসার সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশা আসে। তিনি ওই অটোরিকশায় উঠে এলাকা ছাড়েন। ঢাকার নিউমার্কেট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ঘুরে নিউমার্কেট পর্যন্ত ওই অটোরিকশার যাতায়াতের তথ্য মেলে। সর্বশেষ গন্তব্য কোথায় ছিল, তা জানা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দারা ফাতিমার বাবা আবু মোহাম্মদ ও মামার বাসার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সাক্ষী হিসেবে আবু মোহাম্মদ এরই মধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামার বাসার বাসিন্দারা জানান, ঘটনার দিন শিখা আদালত চত্বর থেকে বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে ঘণ্টাখানেক কারও সঙ্গে কথা বলেছেন। এর পর বাসা থেকে চলে যান। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে আনসার আল ইসলামে শিখা প্রথম দাওয়াত পান তাঁর ভাই প্রকৌশলী মোজাম্মেল হোসেন সায়মনের মাধ্যমে। সায়মন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি। তিনি পড়াশোনা করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি। ২০১৫ সালে সায়মন তাঁর বোনকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি সোহেলের সঙ্গে বিয়ে দেন। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। সাধারণত জঙ্গিরা তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী কারও সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী। দীর্ঘ দিন ধরে শিখা ডার্ক ওয়েবে বিট কয়েনের কারবার করে আসছেন। প্রকৌশলী হওয়ায় এ কাজে বেশ পারদর্শী ছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে শিখার বাবা আবু মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মেয়ে আর জামাইয়ের সন্ধান পেলে সবার আগে পুলিশকে জানাব। জামাই জঙ্গি- অনেক আগেই টের পেয়েছি। মেয়ের মনের ভেতর কী ছিল- প্রথমে বুঝতে পারিনি। সিটিটিসির উপ-কমিশনার (ডিসি) এসএম নাজমুল হক বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ে শিখা বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল। সোহেল ও তার সহযোগী শামীমকে নিরাপদ স্থানে তার সহযোগীরা পৌঁছে দিয়েছে- এটা নিশ্চিত হওয়ার পর গোপন জায়গায় চলে যায় শিখা। তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে জঙ্গিরা ছিনতাই অপারেশন চালায়। শিখা ও পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্নেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, অনেক সময় পুরোনো নামে কোনো জঙ্গি সংগঠন তাদের সদস্যদের কাছে আবেদন হারিয়ে ফেললে নতুন নামে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসে। এভাবে তারা সদস্যদের চাঙ্গা করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দেশ-বিদেশ থেকে যারা তাদের আর্থিক ও রাজনৈতিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তা বিচ্ছিন্ন করা। নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে অনেকে অপচেষ্টা চালাবে। অর্থনীতিকে আঘাত করতে চাইবে। জঙ্গিরা যাতে নতুনভাবে সক্রিয় হতে না পারে, এদিকে নজর রাখতে হবে।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে গণঅধিকার পরিষদ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যুদ্ধ-পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে বললেন ড. ইউনূস ভরিতে ২ হাজার টাকা বেড়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্বর্ণের দাম ‘বাজারে সিন্ডিকেট থাকলে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’ কারাগারে থাকা সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ‘ভাইরাল’যা বলল কারা অধিদপ্তর ৪৮ ঘণ্টায় ১০০-র বেশি কম্পন, বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা শেরপুরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ কবিতা – বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যে কারণে ভারতকে আর ছাড় দেবে না বিজিবি আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া হবে যে শর্তে! সীমান্ত হত্যা বন্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ! আমেরিকা দখল কেন অসম্ভব? নির্বাচনে বিএনপি ডাকলে দেশে ফিরবেন মেজর ডালিম, রাশেদরা? ইবি ডিবেটিং সোসাইটির আহবায়ক ইরানী, সদস্য সচিব দিদারুল সাবেক ২ নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা শালিখায় ৩০পিচ ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারি আটক কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন দোয়ারাবাজারের হাসান হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি গ্রেফতার শিবগঞ্জ সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ,আহত-৫ কালিগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় স্কুল শিক্ষককে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে জখম