
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-মেঘালয় করিডোর চান সাংমা

সীমান্তে ফের বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করল বিএসএফ

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি প্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতায় আসবে: এএফপি

ঢাকা মেডিকেল থেকে হিজবুত তাহরীর চার সদস্য আটক

সাংবাদিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ

নারীর নিরাপত্তা ও সাইবার সুরক্ষার দাবিতে এনসিপির বিক্ষোভ শনিবার

পুঠিয়া যেন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের রাজধানী
৭৪% ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সরাসরি দুর্নীতির শিকার

দেশে সরাসরি দুর্নীতির শিকার হন ৭৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই)। এ খাতের উদ্যোক্তাদের ১০ জনের ৯ জনই মনে করেন, এ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। তাঁরা দুটি কারণকে মুখ্য হিসেবে তুলে ধরেন। এর একটি হচ্ছে ঘুষ দেওয়া, অন্যটি সুবিধা লাভের জন্য রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানো। এর পাশাপাশি চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি এবং অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ করতে উদ্যোক্তারা ভয় পান। কারণ, পরবর্তী সময়ে নিবন্ধন নবায়নে ঝামেলা হওয়া, পরিদর্শকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে হয়রানির সম্মুখীন হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে মাত্র ২৫ শতাংশ দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। আর এ অভিযোগের মধ্যে চারটির একটি আমলে নেওয়া হয়।
কর দেওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল হওয়ায় এ খাতে ব্যবসায়ীদের কর দেওয়ার হার কম। সেই সঙ্গে প্রচলিত করের হার বেশি বলে মনে করেন তাঁরা। তাই কর ফাঁকির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এ খাতের দুর্নীতি বিস্তারের কারণের মধ্যে রয়েছে– দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, সম্পদ ও কর্মদক্ষতার অভাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মহীনতা ও দুর্বলতা, অপরাধীর সঙ্গে অপরাধের যোগসূত্র স্থাপনে অসুবিধা এবং যথাযথ সাংগঠনিক কাঠামোর সঙ্গে বেসরকারি খাতের দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগের অভাব।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ : দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেসরকারি খাতকে একত্রিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের দাবিকে সমর্থন করা’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ ও গবেষণা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সম্মেলনে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও টিআইবির মহাসচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এসএমই উদ্যোক্তা, কূটনীতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী পর্বে উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিজিএসের গবেষণা সহকারী শুহরাত রানা রুশমী।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়েই এটি বিদ্যমান। বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি দমনে এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্নত করতে হবে। ডিজিটালাইজেশন বাড়ানো ও নগদভিত্তিক লেনদেনের পরিবর্তে অনলাইন লেনদেন দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কম দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দুর্নীতি রোধে সহায়তা করবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ অর্জন করবে বলে মনে করেন তিনি।
এ গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এসএমই খাতের ওপর জোর দিতে হবে। তবে, দুর্নীতি এসএমই উদ্যোক্তাদের উদ্যোগকে সীমিত করে দেয়।
স্বাগত বক্তব্যে সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু উইলসন ভিডিও বার্তার বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সামাজিক আন্দোলন ছাড়া দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। আমি আশা করি, দুর্নীতি রোধে সিজিএস যেই উদ্যোগটি নিয়েছে তা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতি রোধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। তিনি মনে করেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেছন থেকে অদৃশ্য হাত দিয়ে পরিচালনা করা হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
ড. মঞ্জুর এ. চৌধুরী বলেন, দুর্নীতি একটা দৈত্যের মতো, সবাইকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সিজিএস ও সিআইপিই গত দুই বছর ধরে এসএমই খাতে দুর্নীতির ওপর গবেষণা করে আসছে। গবেষণা প্রকল্পটি এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বেসরকারি খাত এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের দুর্নীতি-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সিজিএস গত দুই বছর ধরে সিআইপিই সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেসরকারি খাতকে একত্রিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের দাবিকে সমর্থন করা’ শিরোনামে একটি প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।