
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

যেসব কারণে রোজার ক্ষতি হয় না

কুরআনের সপ্তম পারায় যা যা আলোচনা হয়েছে

দেশ ও সংস্কৃতি ভেদে রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ভাজাপোড়া খাবার বেশ প্রচলিত, যা সাধারণত খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না। বেশিরভাগ রোজাদারের ইফতারে তেলে ভাজা এবং সেহরিতে ভারী খাবারের প্রাধান্য থাকে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও পুষ্টিবিদদের মতে, অস্বাস্থ্যকর সেহরি ও ইফতার নানা রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে এ জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। তাদের পরামর্শ-দিনভর রোজা রেখে শরীরে যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে তা পূরণে সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। একই সঙ্গে যথেষ্ট পানি পানে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণত রমজানে সেহরি ও ইফতারকে কেন্দ্র করে বাহারি খাবার বিক্রি বেড়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের খোলা বাজারে অস্বাস্থ্যকর ও তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার বিক্রির ধুম পড়ে। বেগুনি, পিঁয়াজু, জিলাপি, আলুর চপ, ছোলা, সবজি চপ, বুন্দিয়া ছাড়াও স্পেশাল আইটেম হিসাবে হালিম বিক্রির হাঁকডাক চলে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার চকবাজারে ইফতার, সেহরির জন্য তৈরি অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার যেন দেশীয় সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের খাদ্য তালিকায় প্রসেস ফুড কিংবা ফাস্টফুডও যুক্ত হতে দেখা যায়। অনেকে খোলা বাজারে তৈরি অস্বাস্থ্যকর শরবত, জুস, কোমল পানীয় পানে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দিন রোজা রাখার পর ভাজা-পোড়া খাবার গ্রহণে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ভাজা-পোড়া খাবারগুলো শরীরের শিরা-ধমনিতে চর্বির পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। এতে বুকে ব্যথা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। খোলামেলা নোংরা পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি হওয়া খাবারে ডায়রিয়ার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘক্ষণ রোজা রেখে শরীরে এমনিতেই পানির ঘাটতি থাকে। অনেকে ইফতারে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত, কোমল পানীয় কিংবা বাজারের প্যাকেটজাত শরবত পান করেন। কেউ ইফতার শেষে চা, কফি, অ্যালকোহলও পান করেন। কেউ মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত খেলে কোষরে পানি শুষে নেয়, শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে অবসাদ, অতিরিক্ত ক্লান্তি কিংবা তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। যারা ওজনাধিক্যে ভুগছেন তারা চিনিযুক্ত শরবত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, রোজায় অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খেলে ট্রান্সফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। এতে অ্যাসিডিটি, গ্যাসের সমস্যা, কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) ও আলসার হতে পারে। রোজা রেখে একাধিক ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার খেলে শরীরে ইউরিক এসিড বাড়ে। কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, রক্তের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রমজান মাসে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে কিছু খাদ্যাভাস আছে। বিক্রেতারা রাস্তাঘাটের পাশে তেলে ভাজাসহ নানা পদের মিষ্টিজাতীয় ও ভারী খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন। এগুলো খাওয়ায় নিষেধ নেই, তবে বাইরে খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঘরে তৈরি করে পরিমিতভাবে খাওয়া উত্তম। সেহরির ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে চলবেন। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা বলেন, প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখায় শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালান্স হয়। ফলে ইফতারে ট্র্যাডিশনাল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম ঝরা, মাথাঘোরা, হাইপোগ্লাইসোমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া) হতে পারে। বিশেষ করে হার্ট ও ডায়াবেটিস রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, ইফতারে ডাবের পানি পানে শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ঘাটতি পূরণ করে সাহায্য করে। অনেকে পলিথিনে ভরে ডাবের পানি কেনেন। ফুডগ্রেডহীন পলিথিনে থাকা প্লাস্টিক ন্যানো পার্টিকেল পানির কার্যকারিতা একেবারেই নষ্ট করে ফেলে। ওই পানি পানে ক্যানসার, অটিজমসহ বিভিন্ন ইমিউনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেহরিতে কী খাবেন : পুষ্টিবিদদের মতে, সেহরি হতে হবে সুপাচ্য, সহজে হজমযোগ্য, পর্যাপ্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ সুষম খাবারের সমন্বয়। খাদ্য তালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে যেমন-প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার। সম্ভব হলে লাল চালের ভাত কিংবা লাল আটার রুটি খেতে পারলে ভালো। শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা শাক-সবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। ইফতারে খাবার কেমন হবে : ইফতারে অবশ্যই একটি অথবা দুটি খেজুর খাওয়া উচিত। খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এবং যথেষ্ট পরিমাণে ডাইটারি ফাইবার। খেজুরের ইনস্ট্যান্ট সুগার বা চিনি ক্লান্তি দূর করে। স্বাভাবিক পানি ও পানি জাতীয় খাবার, দই, চিড়া, কলা, সবজি খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। শসা কুচি, গাজর, টমেটো, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা ও সরিষার তেল দিয়ে সালাদ করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া মৌসুমি তাজা ও মৌসুমি ফল গ্রহণে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বায়তুল মোকাররমে খতমে নবুওয়তের সমাবেশ

জান্নাত লাভে মুমিনের আত্মত্যাগ

আবারও ওমরাহর ই-ভিসা দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব
ইসলামের দৃষ্টিতে বাজেট

আমাদের সমাজে বাজেট মানেই পরিসংখ্যানের মারপ্যাঁচ, সংখ্যার জটিল সমীকরণ আর রাজস্ব-ঘাটতির হিসাব। কিন্তু এর বাইরেও বাজেট একটি স্বপ্নের নাম যেখানে দেশ ও জনগণের কল্যাণ, মানবিক দায়িত্ব ও নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হওয়ার কথা। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ইসলামি ভাবনার আলোকে বাজেটের দিকে তাকানো একান্ত প্রয়োজন।ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি দিকের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা, অর্থনীতি, আয়-ব্যয়, কল্যাণমূলক ব্যবস্থা সবকিছুর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলামি বিধানে। বাজেটকেও ইসলাম দেখে একটি জাতীয় আমানত হিসাবে। এটি কেবল অর্থের হিসাব নয়; বরং জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের অন্যতম প্রধান উপায়। তাই বাজেট প্রণয়নের সময় চাই গভীর দায়িত্ববোধ, সততা ও কল্যাণকামী মনোভাব।ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি হলো, প্রথমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া। রাষ্ট্রের আয় সীমিত, কিন্তু মানুষের চাহিদা অসীম, এ বাস্তবতা মেনেই বাজেট করতে হয়। তাই অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা পরিহার করে প্রথমে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাই ইসলামি দৃষ্টিতে সঠিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বাস্তবতায় অনেক সময় এমনও দেখা যায়, কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় বাড়ে, আর প্রয়োজনীয় খাত পড়ে থাকে অবহেলায়। ফলে পুরো অর্থনীতির ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে যায়।বাজেট প্রস্তুতের সময় সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষের মতামত নেওয়ার চল থাকলেও, আলেমসমাজ সেই পরামর্শপ্রাপ্তদের তালিকায় খুব কমই থাকেন। অথচ ইসলামি অর্থনীতির শিক্ষা দিয়ে গড়ে ওঠা এ শ্রেণিটির অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই সময়োপযোগী ও কার্যকর হতে পারে। শুধু তাই নয়, ইসলামি অর্থনীতির মূল শিক্ষা হলো সুদের অবসান, ন্যায্য বণ্টন এবং প্রয়োজনভিত্তিক ব্যয়ের নীতি। এসব বিষয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা অনেকাংশেই সুদনির্ভর। তবে ইসলাম সুদকে ঘোষণা করে হারাম। তাই সুদমুক্ত অর্থনীতি গড়ার চেষ্টাই নয়, বরং এটি একজন মুসলমানের ইমানি দায়িত্বও বটে। বাস্তবতা জটিল, কিন্তু সদিচ্ছা থাকলে রাষ্ট্র নিজস্ব কাঠামোতে ধীরে ধীরে সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থার পথে হাঁটতে পারে। ইসলাম কোনোদিনও এমন দায়িত্ব মানুষের ওপর চাপায় না, যা তাদের সাধ্যের বাইরে। তাই প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা ও সৎ প্রচেষ্টা।স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা মক্তব চলে আসছে সম্পূর্ণ জনগণের সহায়তায়। রাষ্ট্রীয় বাজেটে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ খুবই সামান্য, বরং কোনো কোনো বছর তা প্রায় অদৃশ্য। অথচ এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের নৈতিক ভিত গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ খাতের উন্নয়নে সরকার চাইলেই করতে পারে কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও থাকা প্রয়োজন সৎ, অভিজ্ঞ ও ধর্মপ্রাণ মানুষ, যাতে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ যথাযথভাবে কাজে লাগে।বাজেট নিয়ে আরেকটি বিতর্কিত প্রথা হলো-কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। ইসলাম এ নীতিকে একেবারেই সমর্থন করে না। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কখনো বৈধ হয়ে যেতে পারে না। এগুলোর প্রকৃত মালিক হলো জনগণ এবং রাষ্ট্র। ইসলামি বিধান অনুযায়ী এসব টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে প্রকৃত মালিককে, না পেলে গরিব-দুঃখীর কল্যাণে ব্যয় করতে হবে, তাও সওয়াবের নিয়ত ছাড়া।সার্বিকভাবে বলতে হয়, বাজেট যেন কেবল কাগুজে হিসাব না হয়ে ওঠে এটি যেন হয়ে ওঠে জনগণের স্বপ্ন, রাষ্ট্রের অঙ্গীকার এবং মানবিক দায়িত্ব পালনের একটি সুযোগ। ইসলাম আমাদের সে পথ দেখায়, যেখানে আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু টাকার খাতা নয়, বরং আমানতের খাতা। আর আমানতের সঙ্গে যেমন সততা, তেমনি জবাবদিহির শক্ত অনুভবও জড়িয়ে থাকে।আমরা যদি চাই একটি ভারসাম্যপূর্ণ, মানবিক ও কল্যাণমুখী বাজেট, তবে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে তা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ ইসলাম কেবল একটি ধর্ম নয়, এটি এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যা আমাদের পথ দেখায় ন্যায়, মিতব্যয়ী ও কল্যাণের দিকে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।