নিউজ ডেক্স                            
                        আরও খবর
                                বৃদ্ধ শ্বশুরকে পুত্রবধু ও তার স্বজনদের নির্যাতন
                                রাজশাহীতে স্কুলছাত্রী অপহরণের মূলহোতা গ্রেফতার, ভিকটিম উদ্ধার
                                গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার ৪
                                অসুস্থ স্ত্রীকে কবর দেওয়ার চেষ্টা স্বামীর, ভিডিও ভাইরাল
                                ব্যাগের ভেতর ছিল অজ্ঞাত ব্যক্তির খণ্ডিত মরদেহ
                                মৌলভীবাজারে হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
                                নাটোরে প্রাইভেটকার থামিয়ে চালককে গলা কেটে হত্যা
গরিবের পুরাতন কাপড়ে সিন্ডিকেটের থাবা
                             
                                               
                    
                         দেশে এবার গরিবের পুরাতন কাপড় আমদানিতেও পড়ছে সিন্ডিকেটের থাবা! আমদানি বিলম্বিত করতে সিন্ডিকেট নানা কৌশল অবলম্বন করছে। আমদানিকারকের তালিকা তৈরি তথা পূর্বানুমতি প্রদানের শিডিউল ১ মাসের মধ্যে তিন দফা সংশোধন করা হয়েছে। চতুর্থ দফা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সরকারের আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এ গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে গণঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, রংপুর ও চট্টগ্রামভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর মধ্যে একজন আছেন বাণিজ্যমন্ত্রীর এলাকার লোক। যাদের কাছে প্রচুর পুরাতন কাপড় মজুত আছে। এ কারণে তারা চাইছে-পুরাতন কাপড় আমদানির প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে। এতে তারা পুরাতন কাপড় নিয়ে ‘মনোপলি’ ব্যবসা করতে পারবে। আর সিন্ডিকেট সফল হলে সস্তায় গরিব মানুষের পুরাতন কাপড় পড়ার স্বাদও উবে যাবে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ফুটপাতের হাজার হাজার হকারের পেটেও পড়বে লাথি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রচলিত আমদানি প্রক্রিয়ার চেয়ে খানিকটা ভিন্ন পুরাতন কাপড় আমদানির বিষয়টি। পুরাতন কাপড় আমদানির জন্য প্রতিবছর সারা দেশে ৩০ হাজার লাইসেন্স বা পূর্বানুমতিপত্র দেওয়া হয়। বিভিন্ন জেলার আগ্রহীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতিপত্র ইস্যু করে আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তর। কোন জেলার জন্য কতটি লাইসেন্স ইস্যু করা হবে তা নির্ধারণ করা হয় সেই জেলার জনসংখ্যার অনুপাতে। আগ্রহী ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাই করে তা আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়। আঞ্চলিক দপ্তর থেকে পূর্বানুমতিপত্র জারি করা হয়। আর এ অনুমতিপত্র নিয়ে ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকরা ঋণপত্র (এলসি) খোলেন। কাপড় জাহাজিকরণের জন্যও সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যাতে যথাসময়ে কাপড় চলে আসে এবং কেউ মনোপলি করতে না পারে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রতিটি আমদানি অনুমতিপত্রের বিপরীতে ১৫ কোটি টাকার পুরাতন কাপড় আমদানির অনুমোদন দেয়। সাধারণত শীত মৌসুম শুরুর আগে অক্টোবরের মধ্যে কাপড় আমদানি করা হয়। ৪-৫ জন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি যৌথভাবে এলসি খোলেন। পুরাতন কাপড়ের মধ্যে রয়েছে-সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, কম্বল, কানটুপিসহ নানা রকম গরম কাপড়। দেশের উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ শীতপ্রধান অঞ্চলে এ কাপড়ের চাহিদা সবচে বেশি। চীন, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পুরাতন কাপড় আমদানি করা হয়। আমদানির পর পাইকারদের মাধ্যমে প্রতি ‘বেল’ পরিমাণ ভেদে ৫-৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ কাপড় চলে যায়। ফুটপাতে ভ্যানের হকাররা খুচরা পর্যায়ে এ কাপড়ের বিক্রেতা। একইসঙ্গে গরিব মানুষই এর ক্রেতা। প্রতি অর্থবছরে মাত্র একবার এ কাপড় আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, প্রতিবছর শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে পুরাতন কাপড় আমদানি করা হয়। অক্টোবরের মধ্যে কাপড় আমদানি করা হয়। আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরের গণবিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছে এ দপ্তর। ১০ জুলাই জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে-৩০ সেপ্টেম্বর আবেদনের তারিখ, যাচাই-বাছাই শেষে ৩০ অক্টোবর আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে আমদানিকারকের তালিকা প্রেরণ এবং ৩০ নভেম্বর কাপড় আমদানির পূর্বানুমতি জারি বা প্রদানের সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। এতে করে এ খাতের সাধারণ আমদানিকারকরা বিস্মিত হন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আগ্রহী আমদানিকারকরা এর প্রতিবাদ জানান। লাইসেন্স ইস্যুর তারিখ এগিয়ে আনার আবেদন করেন তারা। গণবিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে আমদানি লাইসেন্স ইস্যুর তারিখ এক মাস এগিয়ে অর্থাৎ ৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২৮ আগস্ট একই বিষয়ে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দপ্তর। সহকারী নিয়ন্ত্রক তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়-কাপড় আমদানির পূর্বানুমতিপত্র জারি বা লাইসেন্স ইস্যুর তারিখ প্রায় দুই মাস পিছিয়ে ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। দপ্তরের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী অনুমতিপত্র নিয়ে কাপড় আমদানির এলসি খুললে তা বন্দরে আসতে সময় লাগবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে চলতি বছরের শীত মৌসুম পেরিয়ে যাবে। তখন আর এ কাপড় আমদানি হলেও বিক্রির সুযোগ থাকবে না।
এ খাতের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর এলাকার মেজবাহ উল হক এবং চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করেছেন। তাদের কাছে প্রচুর পুরাতন কাপড় মজুত আছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করতে তারা মন্ত্রণালয়কে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।
খাতুনগঞ্জের পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম  বলেন, আগের অনুমতির প্রচুর পুরাতন কাপড় আমদানিকারকদের হাতে রয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে কাপড়ের সরবরাহ সংকট তেমন হবে না। সিন্ডিকেট করার কথা সত্য নয়। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সব পণ্যের দাম বাড়ছে। পুরাতন কাপড়ের দাম বাড়লেও কিছু করার থাকবে না। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। কয়েক দফা প্রজ্ঞাপন সংশোধন এবং আমদানি অনুমতিপত্র ইস্যু বিলম্বিত করায় এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  
                    
                    
                                                            
                    
                                    


দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।