মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ চার অগ্রাধিকার নীতি ঘোষণা – দৈনিক গণঅধিকার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ চার অগ্রাধিকার নীতি ঘোষণা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ৮:৪২
বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইসহ চারটি অগ্রাধিকার নীতি ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ। অন্য নীতিগুলো হচ্ছে-আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, রাজস্ব আদায় এবং মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো। মরক্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র চলমান বার্ষিক বৈঠকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, নতুন করে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বিশ্বের দুর্বল প্রবৃদ্ধি ও অর্থনীতির গতি। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি করেছে এবং চরম দুর্ভোগে ঠেলে দিয়েছে মানুষের জীবনকে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র মতে, অগ্রাধিকার নীতিগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে স্মার্টভাবে সংস্কার করতে পারলে অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। যার সুফল হিসাবে অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি আগামী চার বছরের মধ্যে ৮ শতাংশের ঘরে পৌঁছে যেতে পারে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির আসর বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক গত ৯ অক্টোবর থেকে মরক্কোতে শুরু হয়। আগামী ১৫ অক্টোবর এ বৈঠক শেষ হবে। বৈঠকের পঞ্চম দিনে সংকটের মুখ থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে চারটি অগ্রাধিকার নীতি ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, এখন বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে। মূল্যস্ফীতি পর্যায়ক্রমে কমছে। এই মুহূর্তে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা রাখা এবং ঋণের স্থিতিস্থাপককে শক্তিশালী করাই এখন চ্যালেঞ্জ। বৈঠকে আইএমএফ’র পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রবৃদ্ধি কম থাকবে। ২০২০ সালের পর থেকে অর্থনীতিতে নানা ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী জিডিপির তিন লাখ ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিুআয়ের অর্থনীতির দেশগুলো। কারণ তাদের হাতে সম্পদের পরিমাণ কম ছিল। ফলে অর্থনীতি ও মানুষের দুর্ভোগ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র পক্ষ থেকে আগামী দিনগুলোতে প্রথম অগ্রাধিকার নীতির মধ্যে মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, এটি পণ্য মূল্য বৃদ্ধির পূর্বশর্ত। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সমাজের সাধারণ মানুষকে দরিদ্র হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। তবে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমলেও এখনো অনেক দেশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ওপরে বিরাজ করছে। ফলে সুদের হার আরও বেশি দিন ধরে রাখতে হবে। এতে নানা ধরনের আঘাত আসতে পারে। তবে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে সেক্ষেত্রে জয়ী হতে হবে। এদিকে বিশ্বের অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিকে উদ্বেগজনক হিসাবে অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি না কমার কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে গেছে। টাকা ছাপানো, ডলারের দাম ও উৎপাদন খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ও সতর্ক দৃষ্টি রাখলে এ হার নিয়ন্ত্রণ করা যেত। যদিও শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশসহ বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামও কমছে। কিন্তু দেশে এ হার কমছে না। তবে চলতি অর্থবছরে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি আরও বাড়বে। ফলে চলতি অর্থবছরেও ডলার সংকট অব্যাহত থাকবে। তবে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে। গত অর্থবছরে এ হার ৯ দশমিক ৭ শতাংশে উঠেছিল। চলতি অর্থবছর শেষে তা কমে ৭ দশমিক ২ শতাংশে নামতে পারে। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার নীতির মধ্যে রয়েছে আর্থিক স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করা। সেখানে বলা হয় আগামীতে ব্যাংক এবং আর্থিক খাতকে আরও বেশি আঘাত করতে পারে। যে কারণে দেশগুলোতে শক্তিশালী আর্থিক তত্ত্বাবধায়ন আরও প্রয়োজন। অগ্রাধিকারের তৃতীয় খাত হিসাবে ধরা হয়েছে রাজস্ব খাতকে। সরকারি অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি রাজস্ব খাত পুনরুদ্ধারের দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। বলা হয়, রাজস্ব খাত পুনরুদ্ধার করতে পারলে আগামীতে যে কোনো ধাক্কা সামাল দেওয়া যাবে। পাশাপাশি ঋণ নেওয়ার পরিমাণও কমবে। এতে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে। তবে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সম্পদ জোগানের চাপ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ-এসব চাপ সামলে এনবিআর যেন কিছুতেই শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। এনবিআরের সাময়িক হিসাবে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে চার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় ঘাটতি হয়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। এই সময়ে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৫০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এদিকে মধ্য মেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে শেষ অগ্রাধিকার নীতিতে। সেখানে বলা হয়, এটি করতে পারলে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা মোকাবিলায় নিয়মক হিসাবে কাজ করবে। তবে বিশ্ব অথনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সে হিসাবে এর সুফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ পাবে এমনটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে রেকর্ড-উচ্চ ঋণ, উচ্চ সুদের হার এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে অনেক দেশের প্রকৃত চাহিদা পূরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে বলে সেখানে বলা হয়।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
তাপদাহে আয় কমেছে নিন্ম আয়ের শ্রমজীবীদের গোদাগাড়ীতে মাদক মামলা দেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরু, স্লোগান কম দেওয়ার আহ্বান নিউমার্কেট সায়েন্সল্যাব চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্য ‘ঠেকায়ে কারও কাছে কিছু নেইনি, কাউরে উপকার করে যদি…’: এসআই ওবায়েদুর রহমান বীর বাঙালি মুক্তির শপথে অনড় উৎস চিহ্নিত, প্রতিকারে নেই কার্যকর উদ্যোগ চট্টগ্রামে নির্দেশনা মানছেন না ব্যবসায়ী-আড়তদাররা গাজায় ২,০০০ টন খাদ্য পাঠাল যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের পতন ঠেকাবে যুক্তরাষ্ট্র ক্যানসারের টিউমার অপসারণে বিশ্ব রেকর্ড রুশ চিকিৎসকদের পুলিশ না চাইলে ফুটপাতে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না চীন পরিচালিত পাকিস্তানের সমুদ্র বন্দরে হামলা, নিহত ৮ দেশের জনগণ ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে: মির্জা আব্বাস সরকারি চাকরিতে ঢুকলেই পেনশন স্কিম বাধ্যতামূলক এবার সাকিবকে একহাত নিলেন রুমিন ফারহানা ‘দেশের মানুষ খেতে পায় না, আ.লীগ নেতারা বিদেশে সম্পদ গড়ে’ প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কাছে বিএনপি-জামায়াত পরাজিত হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৮শ বছরের পুরোনো রোমান মূর্তি ঈদে যেসব ব্যাংকে নতুন নোট মিলবে ৩১ মার্চ থেকে