 
                                                        
                                নিউজ ডেক্স                            
                        আরও খবর
 
                                খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ
 
                                রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, তরুণরা কেন বেশি বিশ্বাস করে
 
                                নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে: জয়ন্ত কুমার কুন্ডু
 
                                নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে: জামায়াত
 
                                জুলাই ঘোষণাপত্র নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের শুরু : ফখরুল
 
                                নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়: রাজশাহীতে মেজর হাফিজ
 
                                মেহেরপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন এ্যাডঃ এহান উদ্দিন মনা
আতঙ্কে বিএনপির সক্রিয়রা গ্রেফতারে নয়া কৌশল
 
                             
                                               
                    
                         বিএনপির মাঠ পর্যায়ের সক্রিয় নেতাদের মধ্যে চলছে গ্রেফতার আতঙ্ক। একদফা আন্দোলনে রাজপথে যারা মূল ভূমিকা পালন করছেন, তাদের টার্গেট করে নীরবে আটক করা হচ্ছে। বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৮ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বে রয়েছেন। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবার কৌশল পরিবর্তন করেছে বলে দাবি দলটির।
তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণা, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কঠোর সমালোচনার পর এমন কৌশল নিয়েছে। গ্রেফতারের বিষয়টি যাতে সব মহলে আলোচনায় না আসে, সেজন্য সিনিয়র নেতাদের আপাতত আটক বা হয়রানি করা হচ্ছে না। প্রতিদিন মাঝারি বা নিচের সারির নেতারা গ্রেফতার হওয়ায় গণমাধ্যমেও তা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার বা প্রকাশ হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকেও পড়তে হচ্ছে না কোনো সমালোচনায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন কৌশল সম্পর্কে মাঠের সক্রিয় নেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে। একা না চলতে দেওয়া হয়েছে পরামর্শ। কর্মসূচির আগের রাতে নিজ বাসায় না থেকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে। হাইকমান্ডের এমন নির্দেশ পেয়ে গ্রেফতার এড়াতে তারা সতর্ক চলাফেরা শুরু করেছেন।
শুধু গ্রেফতার নয়, মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশল পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অতীতে কোনো ঘটনা ঘটলেই দলের সিনিয়র নেতারা ঘটনাস্থলে না থাকলেও অনেককেই আসামি করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেটা দেখা যাচ্ছে না। ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় রাজধানীর একাধিক থানায় এক ডজনের বেশি মামলায় পাঁচ শতাধিক আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু এসব মামলায় দলের সিনিয়র কিংবা মাঝারি সারির নেতাদের আসামি করা হয়নি। যদিও ওই কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে সিনিয়র অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মামলা-হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন, গুম, খুন করেই এ সরকার টিকে আছে। অতীতে দেখা গেছে, আন্দোলন দমানোর কৌশল হিসাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এবারও একই পথ বেছে নিয়েছে। নেতাকর্মীদের জেলে রাখতেই সরকার বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, সরকারের এ খেলা এবার কাজে আসবে না। একদফার দাবিতে এবার গণ-আন্দোলন শুরু হয়েছে। আগামী দিনে এটা আরও তীব্র হবে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কখনো গণ-আন্দোলন দমন করা যায় না। উলটো তা আরও জনসমর্থন পায়, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ধারাবাহিকভাবে নেতাকর্মীদের আটকের পরও আমাদের কর্মসূচিতে উপস্থিতি আরও বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে এবং সেই আন্দোলনে সরকারের পতন হবেই।
তবে বিএনপির এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন  বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। যাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর, নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। তারা ঢাকায় কিংবা যেখানেই থাকুক, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর সবার ধারণা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতীতের মতো বল প্রয়োগ কিংবা গণগ্রেফতার থেকে সরে আসবে। শুরুতে এর কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। ১২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রায় নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখা যায়। অতীতের মতো সমাবেশের আগে গণগ্রেফতারে কোনো অভিযান দেখা যায়নি। এমনকি সমাবেশে আসতে পথে পথে শক্ত ব্যারিকেডও ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর এমন ভূমিকা সবার নজরে আসে। তবে ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং পরের দিন রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকা ছিল আগের মতোই বেপরোয়া। তাদের এমন ভূমিকায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করার আহ্বান জানায়।
তারা মনে করেন, দেশি-বিদেশি নানা সমালোচনার পরও বন্ধ হয়নি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কৌশল পরিবর্তন করেছে। অতীতের মতো গ্রেফতার অভিযানে পুলিশ ভ্যান কিংবা মাইক্রোবাস কম ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে মোটরসাইকেল। সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে চালানো হয় অভিযান। প্রথমে ওই নেতার গতিবিধি লক্ষ করা হয়। এরপর সুবিধাজনক জায়গায় তার পথরোধ করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩ আগস্ট বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে মামলার হাজিরা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ী থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার না করলেও পরে তাকে আটক দেখানো হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বিএনপির সাবেক এ সংসদ-সদস্য। ১৪ আগস্ট আটক করা হয় ওয়ারী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কেএস হোসেন টমাস, গেণ্ডারিয়া থানাধীন ৪৬নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. সোহাগকে। মহানগরীর সবাইকে প্রায় একই কৌশলেই গ্রেফতার করা হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ সরকারের সব কৌশলই হচ্ছে অপকৌশল। নানা মহলের সমালোচনার পরও থেমে নেই গ্রেফতার। তবে ভিসানীতি কিংবা নিষেধাজ্ঞার ভয়ে তারা হয়তো কৌশল পরিবর্তন করেছে। টার্গেট করে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। বাসায় কিংবা কোথাও যাওয়ার পথে অনেকটা নীরবে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিনিয়র নেতাদের আপাতত গ্রেফতার না করে যারা আন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করে থাকেন, তাদের ধরা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার শেষ হলে সিনিয়রদের টার্গেট করা হতে পারে। কারণ, এ সরকারের মূল অস্ত্রই হচ্ছে মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রাখা। যাতে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে। কিন্তু এবারের গণ-আন্দোলন এসব কৌশল দিয়ে দমানো যাবে না।  
                    
                    
                                                            
                    
                                    


দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।