ছাত্রলীগ নেত্রীর অনুমতি না নেওয়াকে কেন্দ্র করে

‘ফুলপরী’ এক প্রতিবাদী নাম

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৪১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , দৈনিক গণঅধিকার

পুরো নাম ফুলপরী খাতুন। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার অখ্যাত এক গ্রাম শিবপুরে জন্ম তার। ভ্যানচালক বাবা ও গৃহিণী মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় দুই ভাইবোন উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ দুই বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত। অগ্রজদের দেখানো পথে হেঁটেছেন ফুলপরীও। চোখেমুখে স্বপ্ন আর উচ্ছ্বাস নিয়ে পা রাখেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)। গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ক্লাস। সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি দেখা দেয় আবাসিক হলে ওঠা নিয়ে। এরপর দুই দফায় নির্যাতনের শিকার হয়ে আপন নীড়ে ফিরতে বাধ্য হন ফুলপরী। ঘটনাটি ছিল ছাত্রলীগ নেত্রীর অনুমতি না নেওয়াকে কেন্দ্র করে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবাসিক হলে ফুলপরী ওঠেন এক পরিচিত বড় বোনের সিটে। বিষয়টি জানতে পেরে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম ইসলামসহ আরও ৭-৮ জন জড়িত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। তবে এ ঘটনায় চুপসে যাননি ফুলপরী। বাবার সাহস আর পরিবারের সহযোগিতায় আবারও ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে। প্রতিবাদমুখর হয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ দেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিবাদী ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘বাবা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তিনি হয়তো খুব ক্ষুদ্র পেশার মানুষ কিন্তু সৎ ও নিষ্ঠাবান। আমাদেরকে শিখিয়েছেন অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করতে। এমনকি তিনি আজীবন এভাবেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই আমিও কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবো না। সাধ্যমতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো।’ সেদিন রাতের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে ফুলপরী বলেন, “অন্তরা আপু, তাবাসসুম, উর্মি, মিম, মুয়াবিয়াসহ ৭-৮ জন আপু উপস্থিত ছিল। তারা নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আপুরা হুমকি দিয়ে বলছিল, ‘এসব বাইরে বললে একেবারে মেরে ফেলবো। তোকে উলঙ্গ করে এখান থেকে বের করে দেবো। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেবো’।” তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে নির্যাতন করে আনন্দ পাচ্ছিল, হাসাহাসি করছিল। তারা এতটাই মজা পাচ্ছিল যে রাত পার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। এমন নির্যাতনের পর অনেকেই ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। কিন্তু ওই হলের কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।’ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান ফুলপরী খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা তো আর ফিরে আসবে না। তবে অভিযুক্তদের এমন শাস্তি হোক যেন আর কেউ এমন কিছু করার সাহস না দেখায়। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আর আমি ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই।’