দুর্যোগ মোকাবিলা

আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি হই। যেমন- বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, আগুন লাগা প্রভৃতি। এ সমস্ত দুর্যোগ সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে হাজির হয়। তবে সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে দুর্যোগের ব্যাপকতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করা যদিও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করা বা প্রতিহত করা মানুষের পক্ষে যথেষ্ট সম্ভব। একটু সচেতন হলেই, একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই মানুষ সমস্যাকে সমাধানে রূপান্তরিত করতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারে। আগুন লাগা তেমনই একটা দুর্যোগ। দেশে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মিল, ফ্যাক্টরি, গার্মেন্টস, বস্তি, শপিংমল, হালকা ও ভারি শিল্প এলাকা। বর্তমানে প্রায়ই এ সমস্ত স্থানে আগুন লাগার মতো গুরুতর ঘটনা ঘটছে। একটু অসাবধানতার কারণে একদিকে অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সহায়সম্পদ। সুতরাং এ বিষয়ে জনসচেতনতা জোরদার করা সময়ের দাবি। পরিবারের শিশু থেকে শুরু“করে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত সকলকেই এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। মনে রাখতে হবে- হঠাৎ যদি আগুন লাগে সেক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই বেশি বিচলিত বা ঘাবড়ানো যাবে না। মনে রাখুন- ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’। উদ্বিগ্ন না হয়ে সত্যিই আগুন লেগেছে কি-না সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে। পরিবারের সকলে মিলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে গিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। ফায়ার ব্রিগেডে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যুতের মেইন সুইচ অফ করতে হবে। যেদিকটাতে আগুন লেগেছে সেদিক থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। বিপরীত দরজা বা জানালা দিয়ে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে তবে জানালা দিয়ে কোনো অবস্থায়ই লাফ দেওয়া যাবে না। কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র বাঁচানোর জন্য নিজেদের মূল্যবান জীবন কখনোই হুমকির সম্মুখীন করা যাবে না। বিল্ডিংয়ের মধ্যে আটকা পড়লে অবশ্যই সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে, লিফট ব্যবহার করতে গিয়ে অধিক বিপদ ডাকা যাবে না। অফিস বা শপিংমলের ক্ষত্রে ইমার্জেন্সি ডোর ব্যবহার করতে হবে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া বেশি ক্ষতিকর তাই কাপড় বা মাস্ক দিয়ে মুখ ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে। রুম থেকে বের হতে না পারলে ভেজা কাঁথা, তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা, জানালা ও ভেন্টিলেটরের ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দিতে হবে। গায়ের কাপড়ে আগুন ধরলে মাটি বা মেঝেতে গড়াগড়ি দিতে হবে। দৌড়ালে আগুন বেশি জ্বলে। আধুনিক প্রায় সকল অফিস বা বিল্ডিংয়ে ফায়ার অ্যালার্মের ব্যবস্থা থাকে। সুতরাং শব্দ হলেই দ্রুত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একটি বিপদ একটি দুঃস্বপ্নের মতো। দুর্যোগ, দুর্ভোগ জীবনের অনুষঙ্গ। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে তাই ভেঙে না পড়ে সৃষ্টিকর্তার উপরে ভরসা রেখে ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভয়কে জয় করে টিকে থাকতে হবে। বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে। সকল অসম্ভব পরিস্থিতিকে সামাল দিতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মধুখালী, ফরিদপুর থেকে