জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির সুধী সমাবেশ, সন্দেহ বিএনপির

১৭ মার্চ, ২০২৩ | ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , দৈনিক গণঅধিকার

গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটিয়ে ছোট বড় সকল দলকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি। নতুন এই সংগঠনের প্রস্তবনায় নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার সংবিধান প্রণয়ন সভা আহ্বান করবে এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এই সংবিধানে স্বাধীন, নিরপেক্ষ শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সকল নির্বাহী ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। সংবিধান প্রণয়নের পরপরই জাতীয় সরকার পদত্যাগ করবে এবং নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বনানীস্থ হোটেল শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। পরে নৈশভোজে অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাবেক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকার্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দেড় শতাধিক বিশিষ্টজন অংশ নেন। সংগঠনটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার এবং সদস্য সচিব বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে হঠাৎ করে নৈশভোজের আয়োজনের বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। বিশেষ করে এই কমিটির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদকে ঘিরে বিএনপিতে আগে থেকেই নানা সন্দেহ ও কথা চালু আছে। তাই এই অনুষ্ঠানের ওপর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায় থেকে তীক্ষ্ণ নজর ছিল। যে কারণে শওকত মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকে ফোন করে অনুষ্ঠানে না যেতে বলা হয় দলের পক্ষ থেকে। যারা নৈশভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন। পরে তারা অংশ নেন নি। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সংগঠনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের জন্য শওকত মাহমুদকে শোকজ করেছিল বিএনপি। পরে শোকজের জবাব দেওয়ার পর দলের প্রতি আনুগত্য থাকার শর্তে তাকে ক্ষমা করে চিঠি দেয় দলটি। এরপর থেকে শওকত মাহমুদকে দলে তেমনটা সক্রিয় দেখা যায়নি। বিএনপিও সভা-সমাবেশে তাকে আমন্ত্রণ জানায় নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এই সংগঠন ও তাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিএনপিকে কিছুই জানানো হয়নি। এসব নেতাদের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে দল। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে কথিত তৃতীয় শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে দলের কাছে আগে থেকেই তথ্য রয়েছে। সংগঠনের পক্ষে থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শওকত মাহমুদ। সংগঠনের চার দফা লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরেন তিনি। প্রথম দফায় বলা হয়, যথাসম্ভব বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে যৌথ কিংবা যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আন্দোলন-সংগ্রাম তখনই পরিণতি লাভ করবে যদি তা জনগণের বিজয়ী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা উৎখাত করে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল ছোট বড় সকল দলকে নিয়ে একটি অন্তবর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। বিজয়ী গণঅভূত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা না গেলে গত কয়েক দশকে গড়ে ওঠা সুবিধাবাদী, সন্ত্রাসী ও লুটেরা শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে না। ফ্যাসিস্ট শক্তি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাবিরোধী জনগণের বিজয় ছাড়া ফ্যাসিস্ট শক্তির কবল থেকে জনগণ কখনই মুক্তি পাবে না, নানান রূপে তা আবার বারবারই ফিরে আসবে। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় নিশ্চিত না করে তথাকথিত জাতীয় বা অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে ক্ষমতা লাভের খায়েশ মাত্র। দ্বিতীয় দফায় আছে, জনগণের বিজয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তবর্তী সরকারের কাজ হবে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী একটি নতুন 'গঠনতন্ত্র প্রণয়ণের জন্য কাজে হাত দেওয়া। শান্তি-শৃঙ্খলা ও জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ হিসাবে শক্তিশালী গণপ্রতিরক্ষার ব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে যেন কোন ষড়যন্ত্র হতে না পারে সে জন্য আইনরক্ষী, সুবিধাভোগী ও আমলাদের মধ্যে গণবিরোধীদের শনাক্ত করা। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করা, লুটে নেওয়া বাংলাদেশের জনগণের অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের ব্যবস্থা করা, অবিলম্বে স্থানীয় সরকারের পুনর্গঠনসহ খাদ্য, পুষ্টি, আবাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তৃতীয় তফা বলা হয়েছে, এরপর অন্তর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সভা আহবান করা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করা। নতুন গঠনতন্ত্রে স্বাধীন, নিরপেক্ষ শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা নিশ্চিত করবার জন্য নির্বাচনের সময় সকল নির্বাহী ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের পরপরই অন্তবর্তী জাতীয় সরকার পদত্যাগ করবে এবং নতুন গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে নতুন জাতীয় নির্বাচন হবে। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে নতুন ভাবে বাংলাদেশ গঠনের এটাই সঠিক পথ। আমরা সকলকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কিংবা পাশাপাশি কাজ করার আহ্বান জানাই। শওকত মাহমুদ প্রস্তাবনা পাঠ করে আরও বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্রমাগত চলেছে সংবিধানের অদ্ভূত কাটাছেড়া, একদলীয় শাসন, সামরিক ও বেসামরিক একনায়কতন্ত্র কায়েম, মৌলিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশকে এক গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এই সংবিধান এখন জুলুমের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বহু রাজবন্দী এবং আলেম সমাজের উল্লেখযোগ্য নেতারা আজ কারাগারে। এই অবস্থার দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার। এখন রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারের দাবি উঠেছে। তবে শুধু সংবিধান সংস্কারে পদক্ষেপ অথবা রাষ্ট্র মেরামতের বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ সমাস্যার সমাধান হবে না। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড.রেজা কিবরিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মজিদ, লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী, কর্নেল (অব.) আলী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, দিগন্ত মিডিয়ার চেয়ারম্যান শিব্বির মাহমুদ প্রমুখ।