হোটেলে হোটেলে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরবে ভারত

আর মাত্র ৪ দিন। তারপরই জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। ভারতের ইতিহাসে প্রথম এত বড় আয়োজন। একসঙ্গে কয়েক ডজন রাষ্ট্রপ্রধানের পা পড়বে রাজধানী নয়াদিল্লির মাটিতে। দুদিনের (৯-১০ সেপ্টেম্বর) সম্মেলন ঘিরে বিশ্বনেতাদের আগমনে জমকালো আয়োজনে মেতে উঠেছে ভারত। নিরাপত্তা মহড়া শুরু হয়েছে দুমাস আগেই, এখন নজর থাকা-খাওয়ায়। বিলাসবহুল পাঁচতারা/চারতারা হোটেলগুলোকে আরও চাকচিক্যময় করে তুলতে কোনো কসরতেই কমতি রাখেনি মোদি সরকার। বিশেষত রাজধানী দিল্লি। হাজার হাজার হোটেল রুম বুকিং, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর দেশি-বিদেশি স্বাদের খাবারের চোখ ধাঁধানো সমারোহে আলোকিত পুরো শহর। পাশাপাশি চলছে রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থায় অতিথি আপ্যায়নের তোড়জোড়। অভ্যর্থ্যনা-আতিথেয়তায় নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতেই বিশ্বনায়কদের মুগ্ধ করতে চায় ভারত। সে লক্ষ্যেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি। নাচ-গান, ঢোল-তবলা আর ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের তালে তালে হবে অতিথি বরণ। হোটেলের প্রবেশমুখেই নেতাদের জন্য রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতির স্বাদ। অতিথিদের স্বাগত জানাতে বাজানো হবে ঢোল, তবলা, সেতার, সরোদ ও সানাই। বাদ্যযন্ত্রের সুরে সুরে বাজবে মৃদু সংগীত। সুরের মূর্ছনার সঙ্গে থাকবে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের ঝঙ্কার। সব ধরনের প্রস্তুতিই শেষ। এখন চলছে চূড়ান্ত মহড়া। মধ্য ও দক্ষিণ দিল্লি, অ্যারোসিটি ও গুরগাঁও শহরজুড়ে ছোট-বড় ৩০ হোটেলে ৩৫ হাজার রুম বুক করা হয়েছে। যেখানে আতিথেয়তার জন্য বাবুর্চিসহ ১০ হাজারেরও বেশি পেশাদার নিযুক্ত করা হবে। সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলগুলো আইসিটি মৌর্য, তাজ প্যালেস, তাজ মহল, দ্য ওবেরয়, দ্য লোধি, দ্য ইম্পেরিয়াল, লে মেরিডিয়ান, শাংরি-লা ইরোস, হায়াত রিজেন্সি, লীলা প্রাসাদ, দ্য ললিত, দ্য ক্লারিজেস ৭ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য আইসিটি মৌর্য। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর তাজ প্যালেসে থাকার কথা থাকলেও তিনি আসবেন না বলে জানা গেছে। তবে বাজ্রিলের প্রতিনিধিরা থাকবেন তাজ প্যালেসে। শাংরি-লা ইরোসে থাকবেন যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট ঋষি সুনাক ও জার্মান প্রতিনিধিদল। অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ইন্দোনেশিয়ান প্রতিনিধিদের দ্য ইম্পেরিয়ালে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌদি আরবের প্রতিনিধিদল থাকবে লীলা প্যালেসে। তাজমহল হোটেলে অবস্থান করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিদল। দ্য ললিত হোটেলে থাকবে কানাডিয়ান ও জাপানি প্রতিনিধিদল। দ্য ক্লারিজেসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দ্য ওবেরয়ে রাশিয়ান ও তুর্কি প্রতিনিধিদল থাকবে। মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া ও স্পেনের প্রতিনিধিরা জাতীয় রাজধানীর লে মেরিডিয়ানে থাকবে। হায়াত রিজেন্সিতে ইতালীয় ও সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিদের রাখা হবে। ওমানের প্রতিনিধিদল লোধি হোটেলে ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল গুরুগ্রামের গ্র্যান্ড হায়াতে অবস্থান করবে। সাকেতের আইটিসি শেরাটনে থাকবে মিসরীয় প্রতিনিধিদল। দিল্লি পুলিশ, বিদেশি মন্ত্রক ও অন্যান্য দূতাবাস প্রায় দুমাস আগে থেকে নিরাপত্তা মহড়া শুরু করেছে। হায়াত রিজেন্সি হোটেলের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে টিওআই এ কথা জানায়। অথিতিদের খাবারের আয়োজনও করা হবে বিশেষভাবে। খাবারের তালিকায় বাজরার তৈরি সুস্বাদু খাবার থাকবে। হোটেলের টপ ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ ও শেফ সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে প্রস্তুত আছেন। খাবারের প্রস্তুতি সম্পর্কে শেফ মুসতাক বলেন, ‘আমরা ৪০ বছর ধরে রাষ্ট্রপ্রধানদের খাবার দিয়ে আসছি। এজন্য আমরা জানি যে, তাদের পছন্দ কী। কী ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। খাবারের মেন্যুতে বাজরা চালু করার কথাও বলেন। আরও বলেন, অতিথিদের একটি মহারাজার মতো বিশাল টেবিলের ব্যবস্থা করা হবে, যেখানে ভারতীয় থালায় সজ্জিত থাকবে নানা ধরনের খাবার। মেন্যুতে থাকবে লাড়ু, আম ট্রাফল, কাজু পিস্তা রোল, রাগী বাদাম পিন্নি, রাগী পানিরাম, কাকুম মাথরি, নাইজেলা ক্যানোলি, বাজরি কি খির, ল্যাম্ব চপস, ভাপা দই, অ্যাভোকাডো সালাদ। অন্যদিকে জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলের একজন মুখপাত্র বলেন, হোটেলগুলো একটি বাজরা বার হোস্ট করবে যার মধ্যে সালাদ, খেজুর, বাদাম ও ফল থাকবে। পুরোনো দিল্লির ঐতিহ্যবাহী তরকারি ও চাটও থাকবে মেন্যুতে। ভারতীয় খাবারের পাশাপাশি থাকবে আন্তর্জাতিক মানের খাবারও। রন্ধনসম্পর্কীয় অপারেশনের শেফ সন্দীপ কারলার মতে, সতেজতা ও স্বাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে। আরও বলেন, ৬ হাজার ৫০০ বর্গফুটের একটি বাগান থেকে বেশিরভাগ খাদ্য সরবরাহ করা হবে। কারণ এ বাগানে কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই শস্য উৎপাদন করা হয়। শুধু তাজ হোটেলে ১২০ জনেরও বেশি শেফ নিযুক্ত করা হবে। প্রায় ৫০০ আইটেমের একটি মেন্যু সাজানো হবে। ফিউশন খাবারসহ বাজরাভিত্তিক খাবার থাকবে। হোটেলের দলগুলো গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিদর্শন করার জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞা তৈরি করতে আয়োজনের কমতি রাখছেন না। নিরাপত্তা জোরদারেও দেওয়া হবে বিশেষ নজর। কিছু হোটেলে বুলেট প্রুফ কাচ ব্যবহার করা হবে। হোটেল ব্যবস্থার সুষ্ঠু তদারকি করতে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সিনা বিশেষ দল গঠন করেছেন। প্রত্যেক হোটেলে পর্যাপ্ত পাওয়ার ব্যাকআপ থাকবে। প্রতিনিধিদল থাকার সময় বাইরের অতিথিদের হোটেলের কোনো খাবারের অনুমতি দেওয়া হবে না। হোটেল প্রস্থানের সময় নেতাদের উপহার দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। হোটেল রুমের আসবাবপত্র নেতাদের পছন্দ অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্সও স্থাপন করা হবে। দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালগুলোকে বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অ্যালার্ট রাখা হয়েছে।