যশোরে চিকিৎসকের অবহেলায় হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু

যশোরে চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন স্বজনরা। তবে হাসপাতালে দায়িত্বরতরা এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুধবার (১৫ মে) দুপুরে শহরের চৌরাস্তা এলাকার আদ দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনরা জানান, যশোর শহরের নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার আব্দুল গফ্ফারের স্ত্রী লামিয়া বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে বুধবার সকালে আদ দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের নার্সরা তার স্বাভাবিক ডেলিভারি করান। এরপর নবজাতককে তারা এনসিইউতে নিয়ে যান। পরে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টার পর রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। নবজাতকের নানি মিনারা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে তার স্বামী এ হাসপাতালে ভর্তি করে। আমরাতো সিজারিয়ানের জন্য এনেছিলাম। ডাক্তাররা বলেছে, নরমাল ডেলিভারি হবে। কিন্তু ডাক্তারদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। নার্স ও আয়াকে দিয়ে ডেলিভারি করানো হয়। তাদের অবহেলার কারণেই শিশুটি মারা গেছে। নবজাতকের ফুফু জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখির অভিযোগ, লামিয়া গাইনি বিশেষজ্ঞ শিলা পোদ্দারের রোগী। অথচ ডেলিভারির আগে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। নার্সরা নিজেররাই ডেলিভারি করিয়েছে। ডেলিভারির সময় নার্সরা দুই জন মিলে পেট চেপে বাচ্চা বের করেছে। লামিয়া কষ্টে চিৎকার দিলেও নার্সরা বকা দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বলে। নার্সদের কারণেই শিশুটি মারা গেছে। নবজাতকের বাবা আব্দুল গফ্ফার বলেন, চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়াই নার্স ও আয়া দিয়ে ডেলিভারি করানোর কারণেই তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারী দুর্ব্যবহার করেন। অবহেলাজনিত এ মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। নার্স বিউটি মন্ডল বলেন, সকালে রোগীকে আনার পর পরীক্ষা করা হয়। নবজাতকের মাথা সামনে থাকায় স্বাভাবিক ডেলিভারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চিকিৎসক রিতা দাসও রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন। সাধারণ ডেলিভারির ক্ষেত্রে নার্সরাই সব কাজ সম্পন্ন করেন। সেই মোতাবেকই ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুটি হাফসে (শ্বাস নিতে সমস্যা) যাওয়ায় তাকে এনসিইউতে পাঠানো হয়। সেখানেই শিশুটি মারা গেছে। এখানে কোনও অবহেলা হয়নি। চিকিৎসক রিতা দাস বলেছেন, সকালে রোগীকে পরীক্ষার পর নবজাতকের মাথার সামনের দিকে থাকায় স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য স্যালাইন পুশ করা হয়। রোগীকে ভালো অবস্থায় পেয়েছিলাম। তাছাড়া রোগীর স্বজনরা কেউ সিজারিয়ান অপারেশনের কথা আমাদের বলেননি। ফলে আমরা স্বাভাবিক ডেলিভারি করিয়েছি। প্রসূতির বয়স কম ও প্রথম সন্তান হওয়ায় শিশু চাপে হাফসে গেছে। এনসিইউর চিকিৎসক কিশোর কুমার বিশ্বাস বলেন, শিশুটিকে আনার পর তাকে বাঁচানোর জন্য ভেন্টিলেশনসহ সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনও অবহেলা ছিল না। হাসপাতালের ম্যানেজার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, রোগীকে ভর্তির পরে ডাক্তার রিতা দাস তাকে দেখেছেন। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে সব কাজ করে থাকেন। সেভাবেই ডেলিভারি হয়েছে। নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকেও সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ মৃত্যুতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনও অবহেলা ছিল না। স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি। বরং তারাই উত্তেজিত হয়ে খারাপ ব্যবহার করেছে।