আরেকটু হলে ফাহিমের ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতো!

বাঁ দিক থেকে দ্রুত লয়ে খেলে ক্রস কিংবা বক্সে ঢুকে পাস দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে তটস্ত রাখার সুনাম রয়েছে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের, তা সেটা জাতীয় দলের খেলায় হোক কিংবা ক্লাব দলে। সেই ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড কিনা দেড় মাসের বেশি সময় জুড়ে বিছানায় শুয়ে-বসে কাটাচ্ছেন। কুঁচকির চোটে (অস্থেসিস পিউবিস) আর একটু হলেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। শুধু কি তাই! জাতীয় দলের অন্যতম আলোচিত ফুটবলারের জীবন শঙ্কার মুখে পড়েছিল। ঘটনাটা গত ফেব্রুয়ারির। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে সৌদি আরবের ক্যাম্পে অনুশীলনে কুঁচকিতে ব্যথা পেয়েছিলেন। সেই ব্যথা নিয়ে লাল-সবুজ দলের হয়ে কাতার ও ঢাকাতে ম্যাচ খেলেছেন। ঠিক এর তিন দিন পর প্রিমিয়ার লিগে শেখ রাসেলের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে পুরো সময় জুড়ে মাঠের বাইরে। ব্যথা বাড়ার কারণে মাঠ থেকে উঠে গিয়ে সেই যে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়েছেন, এখনও কুচকির চোটের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ করে যাচ্ছেন। এখন শরীরের যা অবস্থা, তাতে করে এই মৌসুমে শেখ জামালের হয়ে আর কোনও ম্যাচ তো খেলতেই পারবেন না। জুনে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইতেও মাঠে তারা ফেরাটা ঘোরতর অনিশ্চয়তার মুখে। এ নিয়ে ফাহিমের আক্ষেপ কম নয়। জাতীয় দলে ১৯ ম্যাচ খেলে এক গোল করা এই ফরোয়ার্ড বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আসলে বুঝতে পারিনি কুচকির চোট আমাকে এতটা ভোগাবে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ব্যথা নিয়ে খেলেছি। লিগের ম্যাচে তো রাসেলের বিপক্ষে পুরো সময় খেলতে পারিনি। দেখা যাচ্ছিল মাসল শক্ত হয়ে যাচ্ছিল। আর পারছিলাম না। এরপর ডাক্তার দেখালাম। এখন সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াতে আছি। আবার মাঠে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।’ মাঠ থেকে বিসিবির চিকিৎসক ডাঃ দেবাশীষকে দেখিয়ে দুঃসংবাদও শুনতে হয়েছে ফাহিমকে। ফাহিম নিজেই বললেন, ‘ডাক্তার আমার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। আপাতত সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত খেলতে নিষেধ করেছেন। আসলে কুচকি থেকে পেটের নিচে ব্যথাটা চলে আসছিল। এমন অবস্থা নিয়ে খেলতে থাকলে বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। তাতে করে জীবন শঙ্কা তো ছিলই।এরই সঙ্গে খেলাটাও দীর্ঘমেয়াদে চালানোটা কঠিন হয়ে পড়তো।’ আজ দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ক্লাবেই সুস্থ হওয়ার প্রহর গুনছেন ফাহিম। এখন ফিজিওর অধীনে আছেন। আরও দুটো সেশন আছে। এরপর রিহ্যাব হবে। সেসব করে ফিট হতে হতে ততদিনে ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম তো শেষ হবেই, পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও লেবানন ম্যাচও মিস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফাহিম নিজেও পরিস্থিতি বুঝে বলেছেন, ‘আসলে শুরুতে ডাক্তার বলেছিল ঠিকমতো চিকিৎসার মধ্যে না থাকলে দীর্ঘমেয়াদে খেলাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদে চোটে ভুগলে তখন ক্যারিয়ার শঙ্কায় পড়ে যাবে। তাই এখন ডাক্তার-ফিজিওর নির্দেশ মানছি। যা বুঝতে পারছি লিগের আর কোনও ম্যাচ খেলতে পারবো না। এমনকি অস্ট্রেলিয়া-লেবানন ম্যাচে না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা চোট পুরোপুরি না সেরে তো মাঠে নামা যাবে না। আগে জীবন দেখতে হবে। সুস্থ হলে তখন খেলা যাবে।’ ফাহিমের অনুপস্থিতি শেখ জামালে বড় ক্ষতি। দলের সবচেয়ে বড় তারকা। উচ্চ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। ক্লাবও তাকে মাঠে না পেয়ে হতাশ। ফাহিমও তা বুঝতে পারছেন, কিন্তু কী আর করবেন। তবে ক্লাবটির কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু চোটে পড়া খেলোয়াড়দের অভাব তুলে ধরে বলেছেন, ‘ফাহিমসহ আরও কয়েকজন চোটে পড়ায় আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে। ওরা থাকলে দল আরও ভালো করে লড়াই করতে পারতো।’ ফাহিমের আশা এই মৌসুমে ফেরার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তবে নতুন মৌসুমে নিজেকে নতুন রূপে দেখার পণ করতেই পারেন!