ভারতের কেউ জড়িত কি-না, সেই তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম হত্যা রহস্য ও হত্যাকারীদের প্রায় সবকিছুই চিহ্নিত। শুধু ঘোষণা দেওয়া বাকি আছে। তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে ভারতের কেউ জড়িত আছে কিনা, এমন কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে দুই দেশের গোয়েন্দারা সেটা খুঁজে বের করবেন। প্রয়োজনে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতে যাবেন।’ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য খুন হয়েছেন। সরকার খুব গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছে। তদন্ত বাধাপ্রাপ্ত হয়— এমন কোনও তথ্য না দিয়ে যতটুক বলা যায়, সেটাই বলছি। এরমধ্যে ভারতের কেউ হত্যায় জড়িত কিনা সব তদন্ত হচ্ছে। মৃতদেহ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ এর আগে বুধবার (২২ মে) রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন! এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমানকে। কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসে শাহীন। পরে আমানসহ ছয় জন মিলে এমপি আজীমকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। একইসঙ্গে কলকাতায়ও পৃথক একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। কলকাতার পুলিশ লাশের টুকরো বহনকারী এক প্রাইভেটকার চালককে আটক করেছে। উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ (সদর ও কালীগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিন বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। গত ১২ মে তিনি চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যান। কিন্তু ১৪ মে থেকে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ছিল। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ ছিল। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতায় উপদূতাবাসে যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলা হয়। বুধবার কলকাতা পুলিশ জানায়, দিল্লি ও কলকাতা দূতাবাসের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই আনোয়ারুল আজীমের খোঁজে তৎপরতা শুরু করে তারা।কলকাতায় এসে এমপি আনোয়ারুল আজীম তার কথিত বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেছিলেন। ১৮ মে গোপাল স্থানীয় বরাহনগর থানায় আজিম নিখোঁজের বিষয়ে ‘নিখোঁজ’ দাবি করে জিডি করেন। বুধবার সকালে গোপাল বিশ্বাস স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, এমপি আজিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ তাকে জানিয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনের বিলাসবহুল আবাসন ‘সঞ্জিভা গার্ডেনে’ এই এমপি হত্যার শিকার হন। ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত খুন’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এমপি আনার খুনের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না। এর আগে মঙ্গলবার (২১ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আমাদের ও ভারতের ইমিগ্রেশন পার হয়ে যথাযথভাবেই তিনি ভারতে যান। তার পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল যে, তার কোনও খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সব সংস্থা এটা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এনএসআই, এসবি ও পুলিশ কাজ করছে। ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।