মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে তরুণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সরকারি দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে সে দেশের সেনাবাহিনীতে তরুণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বর্ণনা করে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ জাতিসংঘের অনেক কর্মযজ্ঞে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বিবেচনা করি।' দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিযোজন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার সক্ষমতার প্রশংসা করেন। নিম্ন আয়ের দেশের সারি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করলে গুতেরেস এ বিষয়ে বিশ্ব সংস্থার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, 'এ জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করা উচিত, শাস্তিদান নয়'। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাতসহ চলমান বিশ্বের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মহাসচিবকে তার নেতৃত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাফায় সংঘাত এড়াতে সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব যেভাবে নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন, শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী তার প্রশংসা করেছে। এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের ওপর সারা বিশ্বের নজর রাখাসহ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির উন্নতির জন্য জাতিসংঘের জোরদার ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের দৃঢ় অংশীদারত্ব এবং উন্নয়নে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের অর্ধশত বছরপূর্তিতে গুতেরেসকে বাংলাদেশ সফরের সাদর আমন্ত্রণ জানান। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ও মিশনের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শান্তিরক্ষী দিবসে জাতিসংঘ সদর দফতরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার যৌথ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তৃতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম সর্বোচ্চ অবদান রাখা বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, 'আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈদেশিক নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ সবসময় শান্তির প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের অগ্রভাগে রয়েছে।' শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এ পর্যন্ত নিহত সবার পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বময় ক্রমাগত সংঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধি শান্তির জন্য হুমকি এবং এ কারণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং এদিন বিকালে জাতিসংঘ সদর দফতরের ওআইসি সম্মেলন কক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিউ ইয়র্কে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকার জন্য তিনি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টায় ওআইসি রাষ্ট্রদূতদের সংহতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
