বিক্ষোভ সমাবেশে রিজভী
আজিজ-বেনজীর থেকে মনযোগ ফেরাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে

আজিজ-বেনজীরের দিকে নজর যেন না যায়, মনোযোগ যেন না থাকে, সে জন্যই জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। শুক্রবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পানি-বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বারবার বৃদ্ধি ও বগুড়ায় তারেক রহমানের উদ্বোধন করা ‘ম্যুরাল’ ভাঙার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতেই বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। জনগণ এই নিয়ে হইচই করুক। আর বেনজীর-আজিজের দিকে নজর যেন না যায়, মনোযোগ যেন না থাকে। যেগুলো এখন সবার চোখের সামনে ভাসছে। এ কারণে তারা এই দাম বাড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান ও পুলিশের প্রধানও যে মাফিয়াতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, সেটা জনগণ কিছুটা জানলেও, বিস্তারিত জানতো না। তারা আন্দোলন দমন করেছে। তৎকালীন আইজিপি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু তারা নিজেরাও যে এত বিত্তবৈভবের মালিক, এটা জনগণ এখন জানছে। কেন তাদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে? কারণ এরাই তো বিএনপির মিছিল, কর্মসূচি, যেকোনও ধরনের সমাবেশ অত্যন্ত নির্দয়-নির্মমভাবে দমন করেছে। এর পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনা তাদের একের পর এক পদোন্নতি দিয়েছেন। বেনজীরকে এসপি থেকে পুলিশ কমিশনার, তারপর আইজিপি করেছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বেনজীর যে অপকর্ম করেছেন, শেখ হাসিনা সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেছেন। কারণ তিনিই তো অবৈধ। তিনি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্যই এরা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছে। এ জন্য তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ব্যবস্থা তারা নিতে পারে না। বেনজীর-আজিজের মতো আরও অনেকে ঘাপটি মেরে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা জনগণকে দমন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে, তারা মাফিয়াবান্ধব সরকার, তারা সিন্ডিকেট বান্ধব সরকার। এই সরকারই হচ্ছে অপরাধী সরকার। বেনজীর ও আজিজের সব দায়দায়িত্ব আওয়ামী সরকারের। একদিন জনগণের আদালতে জনগণ বিচারক হয়ে এই সরকারের সব অপকীর্তির বিচার করবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, পানির দাম বাড়বে কেন? যুগ যুগ ধরে বলা হয়েছে জীবনের অপর নাম পানি। যারা এই পানি কেড়ে নেয়, তারা হচ্ছে ইয়াজিদের মতো। ইয়াজিদ যেমন ইমাম বাহিনীর পানি কেড়ে নিয়েছিল ফোরাত নদী অবরোধ করে। ইয়াজিদের সঙ্গেই আওয়ামী লীগের তুলনা করা যায়। নিত্য ব্যবহার্য যে পানি বাসায় বাসায় যায়, সেই পানির যদি দাম বাড়ায়, তাহলে মানুষ প্রান্তিক হয়ে যাবে। মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়বে। মানুষের বেঁচে থাকার কোনও অবলম্বনই শেখ হাসিনা রাখতে চান না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গতকাল ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডিজেলের দামের সঙ্গে অনেক কিছুর সম্পর্ক। সেচ, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, গণপরিবহনের সম্পর্ক। অর্থাৎ এখানেও সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট পায়, তাকে যদি বেশি ভাড়া দিতে হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে গতকাল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে। অর্থাৎ জনগণ হচ্ছে ওদের (সরকার) কাছে একটা পাইলট প্রজেক্ট। বিএনপির এই নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদের সময় বাড়ি যেতে একটু কষ্ট হবে। ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনার তো কষ্ট হয় না বাড়ি গেলে। আপনার সামনে-পিছে পুলিশের হুইসেল বাজে। কিন্তু যারা সাধারণ যাত্রী, তারা যে কত কষ্ট করে যায়, এটার কি হিসাব রাখেন আপনি? এ কথা বলে জনগণের সঙ্গে ব্যাঙ্গ করছেন, ঠাট্টা করছেন, রসিকতা করছে? বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়ের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ নেসারুর হক, তাঁতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু প্রমুখ।