রোগী ভোগান্তির আরেক নাম কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল
পর্ব-০১ (সার্জারী ওয়ার্ড)

বুলবুল আহমেদ সাগর:- ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সার্জারী (পুরুষ) ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের অবহেলায় সেবা পাচ্ছেন। ঐ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান- “এখানে নিয়মিত ডাক্তার রাউন্ড দেয় না। সকালে একজন আসে, তো রাতে আর আসে না। আবার রাতে আসলে সকালে আসে না। আবার যে ডাক্তার কোন পরীক্ষা করাতে দিয়ে যায়, সে আর আসে না। এক ডাক্তারের দেয়া রিপোর্ট আরেক ডাক্তার দেখতে চায় না।” বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানা যায়- কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নং (পুরুষ সার্জারী) ওয়ার্ডটি দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ২ টি ইউনিটে বিভক্ত। একটি রেড ইউনিট ও অপরটি ব্লুু ইউনিট। রোস্টার অনুযায়ী এই ২ টি ইউনিটে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব সার্জারী বিভাগের সকল চিকিৎসকদের ওপর বন্টন করে দেয়া হয়েছে। ৩০ টি শয্যার অর্ধেক রেড ইউনিটের অন্তর্ভূক্ত এবং বাকি অর্ধেক ব্লু ইউনিটের অন্তর্ভূক্ত। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ২ বেলা ২ টি ইউনিটে ভর্তি রোগীদের জন্য অন্তত দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের রাউন্ড দেয়ার কথা থাকলেও নিয়মিত রাউন্ড দেন না কোন চিকিৎসকই। গত ২২ মে (বুধবার) সন্ধ্যায় পেটে পিত্তথলীর পাথর, পেটে ব্যাথা ও বমির সমস্যা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নং (পুরুষ সার্জারী) ওয়ার্ডে ভর্তি হন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যাক্তি। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আরিফুল ইসলাম রাউন্ড দেয়ার সময় তাকে ৪ টি পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা করে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সেই রিপোর্ট আর কাউকে দেখাতে পারেননি তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও সেই রিপোর্ট আর কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে পারেননি তার স্বজনেরা। ওনার ছেলে জানান, আমার বাবা যে ইউনিটে ভর্তি সেই ইউনিটের ডাক্তার সকালে রাউন্ডে আসছিলো। এসে কয়েকটা টেস্ট করাতে বলেন এবং তার রিপোর্ট ওনাকে দেখাতে বলেন। আমরা রিপোর্ট করে আনার পর গত কয়েক ঘন্টায় কোন ইন্টার্ণ চিকিৎসককেও রিপোর্ট দেখাতে পারিনি। আমার বাবা ব্লু ইউনিটে ভর্তি। কিন্তু এখানকার কেউই নাকি ব্লু ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত না। তাই বাবার রিপোর্ট তাদের কাছে নিয়ে গেলেও কেউ দেখছে না। এদিকে আব্বার পেট ফোলা কমছে না। এসব বলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তিনি। সার্জারী ওয়ার্ডের এরুপ অব্যাবস্থাপনা ও রোগীদের প্রতি অবহেলার কারণ জানতে চেয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মোঃ আরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবার এই বেহাল দশার কারণ সম্পর্কে জানতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনার এই বেহাল দশা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি।