৩৪টি কোর্টের জন্য এজলাস ২৩ টি

‘বকশিশ’ ছাড়া নথি নড়ে না ঢাকার আদালতপাড়ায়

৮ জুন, ২০২৪ | ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , দৈনিক গণঅধিকার

সাভারের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন মধ্যবয়সী মর্জিনা বেগম। হেমায়েতপুর আর্জেন্টপাড়ায় পরিবার নিয়ে ভাড়া করা বাসায় থাকেন। মর্জিনার স্বামী নুরুল ইসলামের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা ধার নেন দূরসম্পর্কের আত্মীয় রিকশাচালক রুবেল। দীর্ঘদিনেও টাকা ফেরত না দেওয়ায় এক দিন সন্ধ্যায় রুবেলের জামার কলার চেপে ধরেন নুরুল ইসলাম। প্রতিশোধ নিতে পরদিন মর্জিনার বিরুদ্ধে সাভার থানায় অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করেন রুবেল। ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর তিন মাস জেল খাটেন মর্জিনা। তিনি নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন ঢাকার আদালতে। এক বছর ধরে মামলার বাদীর খোঁজ নেই। তাই অভিযোগ গঠন হচ্ছে না। শুধু মর্জিনা নন, অসংখ্য বিচারপ্রার্থী বছরের পর বছর ঘুরছেন ঢাকার আদালতপাড়ায়। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় এখানে প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিচারপ্রার্থীদের। আইনজীবীদের অভিযোগ, সিএমএম আদালত, মহানগর আদালত ও জেলা জজ আদালত সময়মতো বসে না। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টায় বসার কথা থাকলেও বসে ১১টায়। আদালতে মামলা বদলি নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। কোন মামলা বিচারের জন্য কোন আদালতে বদলি করা হয়েছে, তা জানা কষ্টসাধ্য। মামলায় সময়ক্ষেপণ, মামলার নথি দেখানোর নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ওকালতনামায় স্বাক্ষরে টাকা আদায়, জামিননামা তোলাসহ নানা অজুহাতে বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা আদায়– এসব ভোগান্তি লেগেই থাকে। আদালতপাড়ায় ঘুরে জানা যায়, অধিকাংশ আদালতের পেশকার, জিআরও, পুলিশ, পিয়নকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া কোনো কাজই হয় না। ‘বকশিশ’ না দিলে মামলার নথি নড়ে না। তবে দুর্ভোগের সবচেয়ে বড় কারণ, বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকা। আইনজীবী আশরাফ-উল আলম প্রতিবেদককে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে আদালত বসলে বিচারপ্রার্থীর দুর্ভোগ অনেক কমে যাবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার। পারিবারিক আদালতের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান আছে। কিন্তু বিচারিক আদালতে তা অনুসরণ করা হয় না। জানা গেছে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও এজলাস ভাগাভাগি করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এখানে ৩৪টি কোর্ট থাকলেও এজলাস আছে মাত্র ২৩টি। এ জন্য মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। মামলার বিচার কার্যক্রমের পাশাপাশি আদালতের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনারও ঘাটতি আছে। সেরেস্তা, রেকর্ড রুম ও নকলখানা পর্যাপ্ত নয়। বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, বিশ্রামাগার ও পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান হাওলাদার জানান, তারা বিচারপ্রার্থীর ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন। আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন বলেন, কোনো মামলায় চার্জশিট দাখিলের পর বিচার শুরু হয়ে যায়। এর পর তদন্ত কর্মকর্তা যখন ঢাকার বাইরে বদলি হয়ে যান, তখন সাক্ষীর জন্য ডাকা হলে তিনি আর যথাসময়ে আসেন না। ঢাকা মহানগর জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, আদালতে কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো সামগ্রিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।