ইউক্রেনে ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া

কিয়েভের একটি ছাদের ওপর, নভেম্বরে ঠান্ডা রাতে, অল্প কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক সোভিয়েত আমলের পুরনো মেশিনগান হাতে ড্রোন প্রতিরোধে পাহারা দিচ্ছেন। দিনের বেলা তারা ইউক্রেনের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, কিন্তু রাতে তারা পরিণত হন অস্থায়ী আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটে। সুপ্রিম কোর্ট বিচারক এবং দলটির সদস্য ইউরিই চুমাক বললেন, এটাই সুলভ পদ্ধতি। তার এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে ইউক্রেন পশ্চিমা সরবরাহকৃত ব্যয়বহুল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক। চুমাক ও তার দল চা আর হাস্যকৌতুকে তাদের ২৪ ঘণ্টার ডিউটি চালিয়ে যান। তবে তাদের কাজের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। গত ৬ মাসে, রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে ড্রোন আক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে আক্রমণের সংখ্যা ছিল ৪০০, নভেম্বর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪০০। রাশিয়ার ড্রোন যুদ্ধের পিছনে থাকা একটি গোপন কারখানার নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। রাশিয়ার তাতারস্তান অঞ্চলের আলাবুগা স্পেশাল ইকোনমিক জোনে অবস্থিত এই কারখানা ইরানি নকশার ড্রোন এবং ‘ডিকয়’ ড্রোন তৈরি করছে। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানায়, কারখানাটিতে কম বয়সী, কম দক্ষ রাশিয়ান কিশোর-কিশোরী এবং আফ্রিকান নারীদের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। ইউক্রেনের সাইবার ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ ইনফর্মনাপাল্মের ফাঁস করা নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আলাবুগা প্রায় ২ হাজার ৭৩৮টি শাহেদ ড্রোন উৎপাদন করেছে। ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৬০। রাশিয়া এখন ড্রোন যুদ্ধের নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। ‘গারবেরা’ নামে ‘ডিকয়’ ড্রোনগুলো ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলোর উৎপাদনে ব্যয় শাহেদ ড্রোনের তুলনায় ১০ গুণ কম। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, আলাবুগা কারখানার পরিধি ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। কারখানার চারপাশে নিরাপত্তা বেড়েছে এবং নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চীনের ৩৪টি কোম্পানি ড্রোন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করছে। রাশিয়ার বাড়তি ড্রোন আক্রমণ ইউক্রেনের প্রতিরোধের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল বেন্ডেট বলেন, রাশিয়া একাধিক মিথ্যা লক্ষ্যবস্তু তৈরি করে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। তবে, ইউক্রেন এখনও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে রাশিয়ার ড্রোন হামলার মাত্র ৫ শতাংশ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলছেন, রাশিয়ার ড্রোন ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রভাব ফেলছে এবং চীনের এই কাজে অংশগ্রহণ উদ্বেগজনক। সূত্র: সিএনএন