
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

নতুন বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ‘আস্থার ঘাটতি’ কমবে কি?

১৫ লাখের ছাগল বৃত্তান্ত !

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা

এমপি খুন, নিষ্ঠুর সমাজ, মানিক সুনীলের ভালোবাসা

‘ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি’ ও ‘বাড়ি’ ফেরার ঈদ আনন্দ

ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন ও বাংলাদেশের বিভ্রান্ত বিরোধী দল

ভারতের গণতন্ত্র কি সঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ?
অনেক প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাণভোমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সামরিক অভু্যত্থানে সপরিবারে নিহত হন। এ ঘটনা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ট্র্যাজেডি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়/প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ-আপসহীন ভূমিকা রেখে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার অজো পাড়া গাঁয়ের সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। এ ধরনের নেতার সামরিক অভু্যত্থানে সপরিবারে নিহতের ঘটনা নজিরবিহীন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনাটি ৪৮ বছর আগের। বিভিন্ন মহল ৪৮ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার আগে-পরের ঘটনার নানাদিক চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। এটা করবে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য। গত ৪৮ বছরের বিচার-বিশ্লেষণে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সেসব প্রশ্নের বেশির ভাগেরই সদুত্তর মেলেনি। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের আগে-পরের নানা দিক/ঘটনার নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ এবং যেসব ঘটনা জনমনে রহস্যময় হয়ে আছে, খটকা লাগিয়ে রেখেছে সেগুলো ধামাচাপা অবস্থা থেকে বের করা দরকার। যে নেতার ডাকে দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা বানের পানির মতো রাস্তায় নেমে আসত, যে নেতার হুকুমে দেশের আপামর জনতা পরিবার-পরিজন, জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ত, সে নেতাকে সেনাবাহিনীর মুষ্ঠিমেয় সদস্যের অভু্যত্থান ঘটিয়ে সপরিবারে হত্যার দুঃসাহস দেখানোর সুযোগই থাকার কথা নয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে হত্যাকান্ডের শিকার হন তখন তার দল আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি ছিল। দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল। এমন শক্তিশালী জনভিত্তির রাজনৈতিক দলের প্রধানকে বিনা বাধায় মুষ্টিমেয় সেনা সদস্যের সামরিক অভু্যত্থান ঘটিয়ে সপরিবারে হত্যা, সপরিবারে হত্যার পর কোনো প্রকার বাধা-প্রতিরোধ মোকাবিলা না করে নতুন সরকার গঠন, নতুন সরকারের নির্বিঘ্নে রাষ্ট্র পরিচালনা কীভাবে সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে ৪৮ বছর ধরেই জাতির কৌতূহল- প্রশ্ন রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভাগ্যগুণে বেঁচে গিয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। তারও প্রশ্ন রয়েছে। ৪৮ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে যেসব প্রশ্ন সেগুলোর সদুত্তর কি জাতি পাবে না, পাওয়া কি উচিত নয়?
২০১৯ সালে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় আওয়ামী লীগ নেতারা কোথায় ছিলেন এবং হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে নেতাদের একজনও কেন এগিয়ে এসে সাহসী ভূমিকা রাখেননি- সে প্রশ্নের জবাব তিনি আজও খুঁজে ফেরেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের (বঙ্গবন্ধুর বাসভবন) মেঝেতে তার (বঙ্গবন্ধুর) মরদেহ পড়ে ছিল, কেন? এর জবাব তিনি আজও পাননি। ২০২১ সালে জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট) উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'গুলি শুরু হলে বঙ্গবন্ধু অনেককে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তারা কেন সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেননি, সেটি এখনো রহস্য। যখনই আক্রমণ শুরু হয়, প্রথমে যেমন সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় বা শেখ মনির বাসায়, খবরটা আসার সঙ্গে সঙ্গে এবং আমাদের বাসায় ( বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি) যখন গুলি শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয়, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়, সেনাপ্রধান সফিউলস্নাহর সঙ্গে কথা হয়। সেনাবাহিনীরও যার যা ভূমিকা ছিল তারাও কিন্তু সঠিকভাবে করেননি। এর পেছনে রহস্যটা কি, সেটাই কথা।' গত বছর শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় কেন প্রতিবাদ হয়নি সেই প্রশ্ন রেখে বলেছেন, জাতির পিতা তো অনেককে ফোন করেছিলেন। কোথায় ছিলেন তারা? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার জন্য অনেকে আওয়ামী লীগকেই সরাসরি দায়ী করেছেন। ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠমিত্র পরিচিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সভাপতি (তৎকালীন) মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, 'আওয়ামী লীগের লোকরাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে (১৮.০৮.২০১২ আমার দেশ)।'
\হইতিহাস কি বলে? ইতিহাস বলে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর (১৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেশের কোথাও প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, বরং দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ-স্নেহভাজন আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হতে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বড় অংশকে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নতুন সরকারের আনুগত্য প্রকাশ করতে, নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে, খন্দকার মোশতাক আহমদের নেকনজরে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে। ওই সময় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল কমরেড মোজাফফ্র আহমদের নেতৃত্বাধীন মস্কোপন্থি দল পরিচিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে এ দলের নেতা সৈয়দ আলতাফ হোসেনকেও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে সামরিক অভু্যত্থানকারীদের গঠিত খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বেধীন সরকারে যোগ দিয়েছে, সরকারকে সমর্থন-সহযোগিতা দিয়েছে তাতে আওয়ামী রাজনীতি বিরোধীরাও স্তম্ভিত না হয়ে পারেননি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর মূল্যায়নে বাস্তবচিত্র পাওয়া যায়। ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী 'আওয়ামী লীগের চাচা কাহিনী' বইতে লিখেছেন, 'বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ তার ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে ফেলে রেখেই মোশতাক মাত্র ১৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুরো দেশটি করায়ত্ত করে ফেলেন- যা আওয়ামী লীগের নামেই করে এবং আওয়ামী লীগ ঠিক রেখেই বিনা বাধায় করতে সক্ষম হয় (পৃষ্ঠা-৬৯)।' আওয়ামী লীগের প্রবীণ এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহচরদের অনেকেরই ভূমিকা ছিল পটপরিবর্তনের স্বপক্ষে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহচর পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দীন আহমদ নতুন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদের দূত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন গিয়েছিলেন নতুন সরকারের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন আদায়ের জন্য। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। এ ব্যক্তি হয়েছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বধীন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বহুদেশ সফর করেছে। মহিউদ্দীন আহমদ এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ইচ্ছা করলে বিদেশে অবস্থানকালে খন্দকার মোশতাক সরকারের পক্ষ ত্যাগ করতে পারতেন। তারা তা করেননি। কেন করেননি- বিরাট প্রশ্ন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ন্যাপ/ ছাত্র ইউনিয়নের কোনো কোনো নেতা আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নামার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে সাড়া পাননি। এ প্রসঙ্গে ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী 'আওয়ামী লীগের চাচা কাহিনী' বইয়ে লিখেছেন, 'কেউই বাস্তব কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। শুধু কমিউনিস্ট পার্টির নুরুর রহমান ওই সময় আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি (পৃষ্ঠা-৭০)।' আওয়ামী লীগ নেতারা কেন সাড়া দেননি- এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক ক্ষমতা, মেধা, ত্যাগে বিশাল সংগঠনে রূপ নেওয়া আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর কৃপায় বড় নেতায় পরিণত হওয়াদের কাছ থেকে বিপদের দিনে কোনো সাহায্য পাননি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত যদি সেনাপ্রধান (তৎকালীন) মে. জে. সফিউলস্নাহ দায়িত্বশীল হতেন- এমন অভিমত অনেকের। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিজয় মেলায় আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, 'তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল সফিউলস্নাহ'র দায়িত্বহীনতা ও অদক্ষতার কারণেই '৭৫-এর ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল।' এ অভিযোগ গুরুতর। কাদের সিদ্দিকীর এ অভিযোগের জবাবে সফিউলস্নাহ বলেছেন, '৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ- তাদের দোষ দেয়া হচ্ছে না কেন? আবদুস সামাদ আজাদ, আবদুল মান্নান, তোফায়েল আহমদ, আবদুর রাজ্জাক প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে মুখ খুলতে চান না। যদি নিজেদেরটা বেরিয়ে আসে সেই ভয়ে একতরফাভাবে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন (৪.০১.১৯৯৬ দৈনিক বাংলা)।' স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ অনুগতদের নিয়ে রক্ষী বাহিনী গঠন করেছে। এ বাহিনীর সেদিনের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক-প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান ওই সময় সেনাবাহিনী থেকে রক্ষী বাহিনীতে (ডেপুটেশনে) নিয়োগ পেয়ে রক্ষী বাহিনীর অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এক লেখায় মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান লিখেছেন, 'মিরপুর রক্ষীবাহিনীর ঘাঁটিতে রক্ষী বাহিনীর ৪টি ব্যাটালিয়ন ছিল। তাদের জনবল ঢাকা সেনানিবাসের ব্রিগেডের দ্বিগুণ ছিল। রক্ষী বাহিনীর প্রতিরোধের শক্তি ছিল মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামানের তথ্যে প্রমাণ করে। রক্ষী বাহিনীও বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় বা অভু্যত্থান প্রতিরোধে এগিয়ে না আসা জনমনে খটকা লাগিয়েছে। সেনা অভু্যত্থান সংঘটিত হওয়ার সময় ঢাকা সেনানিবাসে স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগ্রেডের (৪৬ পদাতিক ব্রিগ্রেড) অধিনায়ক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা লে. ক. শাফায়াত জামিল। এ সেনা কর্মকর্তা সেদিনের বহুঘটনা কাছ থেকে দেখা দেখেছেন। এ সেনা কর্মকর্তার 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' পত্রিকায় ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট 'আগস্ট হত্যাকান্ডের রহস্য সন্ধানে' শিরোনামে লেখা উপসম্পাদকীর তথ্যমতে, 'রক্ষী বাহিনীর দুই উপ-পরিচালক আনোয়ারুল আলম ও সরোয়ার মোলস্না তাকে বলেছেন, তারা উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে নির্দেশনা চেয়েছিলেন। তারা কোনো নির্দেশনা দেননি।' কেন নির্দেশনা দেননি তা অজানাই রয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত সেনা অভু্যত্থানে অংশগ্রহণকারী ট্যাঙ্কগুলো নাইট এক্সারসাইজের জন্য সমবেত করা হয়েছিল। নাইট এক্সারসাইজরত ট্যাঙ্কগুলোতে নিয়ম-বিধান অনুযায়ী গোলা ছিল না। সেনা কমান্ডার মাত্রই এ তথ্য জানা থাকার কথা। গোলাবিহীন ট্যাঙ্কগুলোই ছিল সেনা অভু্যত্থানের মূল শক্তি। গোলাবিহীন ট্যাঙ্কগুলো ১৫ আগস্ট দুপুরে গোলা পেয়েছে। জানা যায়, গোলাবিহীন ট্যাঙ্কগুলোকে ১৫ আগস্ট দুপুরে তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) ব্রিগেডিয়ার খালেদ মুশাররফের লিখিত আদেশে জয়দেবপুর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকে গোলা সরবরাহ করা হয়েছে। সিজিএস কেন গোলাবিহীন ট্যাঙ্কগুলোকে গোলা সরবরাহ করে অভু্যত্থানকারীদের শক্তি বাড়িয়েছেন তা আজো রহস্যময়। সেদিন আরো বহুঘটনা ঘটেছে যেগুলো আজতক রহস্যজনক হয়ে আছে। সে ঘটনাগুলোর অন্যতম এনডিসি কোর্স সম্পন্নের জন্য ভারতের নয়াদিলিস্নতে অবস্থান করা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিধি মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে গোপনে দেশে এসে সেনা অভু্যত্থানের নায়কদের সঙ্গে বঙ্গভবনে বৈঠক। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য লে. ক. (অব.) শাফায়াত জামিল তার রচিত 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর' বইয়ে দিয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনোই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও শোনা যায়। এ অভিযোগ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের (শেখ সেলিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, সৈয়দ আশরাফ) কাছ থেকে এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার আগে-পরে বহু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো এখনো দেশ ও জাতির কাছে রহস্যজনক রয়েই গেছে। রহস্যজনক ঘটনাগুলো ধামাচাপা দিয়ে রাখা বা ধামাচাপা পড়ে থাকা উচিত নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সম্পর্কিত যেসব ঘটনা জনমনে খটকাবিদ্ধ, রহস্যজনক- সেগুলোর গ্রহণযোগ্য জবাব চাওয়া বা পাওয়ার অধিকার জাতির রয়েছে।
জহির চৌধুরী : কলাম লেখক
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।