নিউজ ডেক্স                            
                        আরও খবর
                                খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ
                                রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, তরুণরা কেন বেশি বিশ্বাস করে
                                নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে: জয়ন্ত কুমার কুন্ডু
                                নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে: জামায়াত
                                জুলাই ঘোষণাপত্র নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের শুরু : ফখরুল
                                নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়: রাজশাহীতে মেজর হাফিজ
                                মেহেরপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন এ্যাডঃ এহান উদ্দিন মনা
অভীষ্ট লক্ষ্যের পথিক, একজন সোহানা মহিউদ্দিন
                             
                                               
                    
                         সদা হাস্যোজ্জ্বল এক নারী- নেই ভ্রুকুঞ্চন, নেই বিরক্তি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিশ্রান্ত কাজ করে চলেছেন, কখনো রাজনীতির উত্তাল মাঠে, কখনো আইনি মোকাবিলায় আদালতে, কখনো নিবিষ্ট চিত্তে সমাজকর্মে, কখনো বা ঘরের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ক্লান্তিহীন সেই নারী। 'ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু, পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু'- এই মন্ত্রে ঘরে-বাইরে সর্বক্ষণই কর্মে অনুরাগী আত্মনিবেদিত আত্মপ্রত্যয়ী একজন সোহানা মহিউদ্দিন।
সোহানা মহিউদ্দিন, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একইসাথে পড়ছেন ব্যারিস্টারি, কাজ করছেন তৃণমূল মানুষদের জন্য। দুস্থ, অবহেলিত, অসহায় মানুষের জন্য এবং দেশের কল্যাণে কাজ করাই তার জীবনের লক্ষ্য।
কর্মজীবনের শুরুতে ২০০৩ সালে ঢাকা জজ কোর্ট-এ আইনজীবী হিসেবে পেশাদার জীবন শুরু করেন। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০০৪ সালে এনজিওতে কাজ শুরু করেন। ২০০৮ সালে পিকেএসএফ-এ জেন্ডার কনসালটেন্ট হিসাবে নিযুক্ত হন। ঢাকা জজ কোর্টে ২০১০ সালে এপিপি ও ২০১১ সালে স্পেশাল পিপি হিসাবে সরকারি আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
২০১০-২০১১ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে কার্যকরী সদস্য হিসাবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের নিয়ে কাজ করে ২০১২ সালে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন। কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে এবং দূরদর্শী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ২০১৪ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ লাভ করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান ও কর্মদক্ষতা দিয়ে সকলের দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হন।
সোহানা মহিউদ্দিন ১৯৮৯ সালে এসএসসি, ১৯৯১ সালে এইচএসসি, ১৯৯৩ সালে ডিগ্রি, ১৯৯৮ সালে এলএলবি, ২০০১ সালে এমএসসি, ২০১১ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অফ ম্যানেজমেন্ট এ কর্মী ব্যবস্থাপনায় ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে বার এট ল পড়া শুরু করেন। এছাড়া, বর্তমানে তিনি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় পিআইবিতে মাস্টার্স করছেন।
শিক্ষানুরাগী এডভোকেট সোহানা মহিউদ্দিন ২০১৭ সালে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নে রংমেহার উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ লাভ করেন। নিজস্ব অর্থায়নে স্কুলের কক্ষ নির্মাণ করে দেন। ২০১৮ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের আজীবন সদস্য ও ২০২০ সালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ডেলিগেট নিযুক্ত হন।
২০১২ সাল থেকে তৃণমূল নারীদের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে দুস্থ নারীদের ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য 'ভোরের ডাক' নামে সেবাধর্মী সংগঠন গড়ে তোলেন। ২০১৬ সালে ‘মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর নারী সমিতি’ নামে আরো একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠন থেকে নারীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য হস্তশিল্প ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
নিজ জেলার নারীদের নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছেন সোহানা মহিউদ্দিন। নারীদের স্বনির্ভর করে মুন্সীগঞ্জ জেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। তিনি বলেন, আমি সুযোগ পেলেই বাড়ি বাড়ি যাই, তাদের কথা শুনি, এমনকি তাদের সাথে রান্না করতেও বসে যাই। একসাথে খাই। আমি আমার এলাকার নারীদের উন্নয়ন নিয়ে সর্বাত্মক কাজ করে যেতে চাই।
রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান এডভোকেট সোহানা মহিউদ্দিনের অনুপ্রেরণা তার মা। মা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার মা মোসাম্মৎ হাসিনা একজন লেখক ও স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। অনেক দিন আগের কথা- সেই সময়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বইসহ একাধিক বই আছে মায়ের। ছোটোবেলা থেকেই মাকে দেখেছি ভীষণ কর্মোদ্যোমী। তার প্রচেষ্টাতেই আমরা ভাই বোনেরা পড়াশোনা ও কর্মজীবনে নিজেদের বিকশিত করার চেষ্টা করছি।
সোহানা মহিউদ্দিন জানান, দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় বোন শর্মিলা জেসমিন পেশায় আইনজীবী, ছোট ভাই মো. আবদুল্লাহ আল মারুফ কানাডার একটি কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। মাকে সবসময় দেখেছি পড়াশোনার ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহ দিতেন। আমি যখন ব্যারিস্টারি পড়ছি, অন্য বিষয়ে নয়- মা বকা দিচ্ছেন, পরীক্ষা সামনে কেন পড়ছি না? মা যেমন আমার জীবনে অনুপ্রেরণা, তেমনি আমার আরো একটি অনুপ্রেরণা আছে। সেই অনুপ্রেরণা আমার শক্তিও বটে। এই অনুপ্রেরণা আর শক্তি হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি শুধু দেখি তিনি কীভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি তাঁকে দেখে কাজ করার প্রেরণা পাই প্রতি মুহূর্তে।
সোহানা মহিউদ্দিন আরো বলেন, আমার বাবা হাজি মো. শহীদুল আলম (খোকা মুন্সী) বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ৯ নম্বর সেক্টরের হয়ে যুদ্ধ করেছেন। আমার চাচা শামসুল হক (সান্নু মুন্সী) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আগরতলা (ভারত) গকুলনগর ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬৪ জেলায় গভর্নর নিযুক্ত করেন। সেইসময় সোহানা মহিউদ্দিনের চাচা শামসুল হক মুন্সীগঞ্জ জেলায় গভর্নর মনোনীত হন। তিনিই মুন্সীগঞ্জের প্রথম গভর্নর। এছাড়া আরেক চাচাও বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অর্থাৎ সোহানা মহিউদ্দিনের বেড়ে ওঠাই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের সাথে। তিনি মনে করেন, তার সকল প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে গেছে জীবনসঙ্গী হিসেবে মো. মহিউদ্দিনকে পাওয়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিফ সিকিউরিটি অফিসার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মহিউদ্দিন। বর্তমানে তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
সোহানা মহিউদ্দিন বলেন, এটা যে আমার কত বড় পাওয়া, আমি মো. মহিউদ্দিনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। আমি জাতির পিতাকে স্বচক্ষে দেখিনি, দেখছি মহিউদ্দিন সাহেবের চোখ দিয়ে। মহিউদ্দিন সাহেব যত কাছ থেকে গভীরভাবে বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন- আমিও যাপিত জীবনের প্রতি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকে, তাঁর আদর্শকে নিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছি। এখনো মহিউদ্দিন সাহেব ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুকে দেখেন, যন্ত্রণায় কোঁকান। আমি তার পাশে থাকি, আর ভাবি, কতটা গভীর এই অনুভব, কতটা তীব্র এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হারিয়েছি। আমার সৌভাগ্য, আমি মহিউদ্দিন সাহেবের সহধর্মিণী হিসেবে জাতির পিতার চরিত্রের শিক্ষণীয় দিকগুলো তার কাছ থেকে জানতে পারছি। আমি তার কাছ থেকে প্রতিদিনই শিখছি।
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সোহানা মহিউদ্দিন আরো জানান, আমার দুই ছেলে, বড় ছেলে রাদিয়াত হোসেন সুইডেন থেকে এমবিএ করে ব্যবসায় করছে, আর ছোট ছেলে শাফাকাত হাসনাত অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করছে।
এডভোকেট সোহানা মহিউদ্দিনের আরেকটি দারুণ প্রয়াস দৈনিক ‘মুন্সীগঞ্জের খবর’। তিনি এই কাগজের প্রকাশক এবং সম্পাদক। এটি মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা হলেও তথ্য ও সংবাদে অনেক বেশি সমাদৃত। এছাড়াও অভিযাত্রা ডট টিভি নামে একটি আইপি টিভির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি।
রাজনীতিক, সমাজকর্মী সোহানা মহিউদ্দিনের আরেকটি পরিচয় তিনি লেখালেখিও করেন। সোহানা মহিউদ্দিনের প্রকাশিত গ্রন্থ 'বঙ্গবন্ধুর মহিউদ্দিন', যেখানে মো. মহিউদ্দিনের মাঝে খুঁজে ফিরেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ইতোমধ্যেই নতুন গ্রন্থ লেখার কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। রাজনীতি, সমাজকর্মের মতোই তার গভীর ভালোবাসার জায়গা সাহিত্য। সর্বোপরি বলা যায়, সোহানা মহিউদ্দিন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও আত্মনিবেদিত, দেশ ও মানুষের কল্যাণে অভীষ্ট লক্ষ্যের পথিক তিনি।  
                    
                    
                                                            
                    
                                    


দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।