অযত্ন ও অবহেলা
বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। সুপ্রাচীন এই ভাষার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। ঐতিহ্যবাহী এই ভাষাকে নিয়ে হয়েছে অনেক ষড়ষন্ত্র। এ ভাষার জন্য দিতে হয়েছে রক্ত, করতে হয়েছে আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিকশিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন। আন্তর্জাতিক পরিম-লে রয়েছে বাংলাভাষার ব্যাপক সুনাম। বাংলা ভাষার সাহিত্য জিতে নিয়েছে নোবেল।
এত রক্ত দিয়ে আন্দোলন করে অর্জিত ভাষাটি আজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে দূষিত, বিকৃত। গণমাধ্যম থেকে শুরু“করে সোশ্যাল মিডিয়া শিক্ষিত তরুণদের দ্বারা এ ভাষা সবচেয়ে বেশি বিকৃত হচ্ছে। ভাষা পরিবর্তনশীল, সময়ের সঙ্গে ভাষার বিবর্তন একটি স্বাভাবিক বিষয়। তাই বলে অশুদ্ধভাবে ভাষার পরিবর্তন সমীচীন নয়। আঞ্চলিক ভাষা মূলভাষাকে শক্তিশালী করে কিন্তু বিকৃত আঞ্চলিকতা ভাষাকে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে নেয়। ভাষার প্রতি অযত্ন ও অবহেলা কিংবা ভাষার অশুদ্ধ উচ্চারণ ও বিকৃত উপস্থাপন; ভাষার প্রবহমানতাকে বিনষ্ট করে।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমাধ্যমে প্রচারিত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে। আজকাল গণমাধ্যমগুলোতে হরহামেশা বাংলাভাষার বিকৃতি হচ্ছে।
টিভি নাটকগুলোতে চলে অশুদ্ধ আঞ্চলিকতা যেগুলোর কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলা ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণে নাটকের কথোপকথনে এমন এক জগাখিচুড়ি ভাষা ব্যবহার করা হয় যেগুলো তরুণরা প্রতিনিয়ত শুনে তাদের মধ্যে ধারণ করে এবং এক সময় তারা এগুলো আওড়াতে থাকে। তাদের মুখে এমন বিকৃত শব্দ শুনে তাদের ছোট ভাই বোনেরা মনে করে এটাই বুঝি শুদ্ধ। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়াচ্ছে বাংলাভাষার বিকৃতরূপ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের স্ট্যাটাসে তরুণরা এমন শব্দ ব্যবহার করছে, যেমন- মন্চায়, জোস, খিচ্চা ইত্যাদি। এগুলো শুধু শব্দের বিকৃতি নয় অমার্জিত ও কুরুচিপূর্ণ। এফ এম রেডিওতে চলছে মনগড়া শব্দের ব্যাবহার। আধা বাংলা আধা ইংরেজি। আধুনিকতার নামে চলছে ভাষার দূষণ ও বিকৃতি। অনেকেই মনে করে আধা বাংলা আধা ইংরেজি বলতে পারাটা এক ধরনের আধুনিকতা। শব্দের ভুল উচ্চারণ ও ভাষা বিকৃতি আধুনিকতা নয় বরং মূর্খতা।
রাস্তা-ঘাটে, হাটে, শহরে, অনেক বিলবোর্ডে ভুল বানান পরিলক্ষিত হয়। বিলবোর্ডগুলোর ভুল বানানের শব্দ প্রতিনিয়ত পরিলক্ষিত হয়। আধুনিকতার নামে জগাখিচুড়ি ভাষার ব্যবহার বন্ধ করে শুদ্ধ ও প্রমিতবাংলার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করে যথাযথ তদারকি করতে হবে। গণমাধ্যমে প্রচারিত নাটকগুলোতে কথোপকথনের ভাষা শুদ্ধ হওয়া জরুরি।
ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা থেকে
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।