আবার শুরু প্রকল্পের ‘মিটিং সম্মানি’ – দৈনিক গণঅধিকার

আবার শুরু প্রকল্পের ‘মিটিং সম্মানি’

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৭ আগস্ট, ২০২৩ | ৯:৩১
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্ধ ছিল উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানি দেওয়া। কিন্তু পরিপত্রের ফাঁকফোকরের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এই ‘মিটিং সম্মানি’ নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, গত অর্থবছরের জন্য সম্মানি স্থগিত করা হলেও সেই নির্দেশ কতদিন কার্যকর থাকবে সেটি স্পষ্ট করা হয়নি জারি করা পরিপত্রে। ফলে বৈশ্বিক মন্দা অবস্থার পরিবর্তন না হলেও শুরু হয়েছে সম্মানি নেওয়া। বিভিন্ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনে সম্মানি নেওয়ার নৈতিকতা ও যৌক্তিকতা কতটুকু সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে। এছাড়া সম্মানি থাকায় রুটিন কাজ ফেলে সেদিকেই বেশি ঝোঁক লক্ষ করা যায় কর্মকর্তাদের। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মিটিং করে সম্মানির নামে অর্থ নেওয়াটা নৈতিকতার মাপকাঠিতে প্রশ্নবিদ্ধ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে কতদিন এই নিয়ম বলবৎ থাকবে এ বিষয়ে সময় সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। তাহলে ধরে নিতে হবে সেটি চলমান আছে। এই নির্দেশ রহিত কিংবা নতুন নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেটিই অনুসরণ করার কথা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বুধবার বলেন, পরিপত্র স্পষ্টীকরণ বা নতুন পরিপত্র দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ। তবে আমি মনে করি এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকা উচিত। দীর্ঘদিন ধরে এটা একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। তবে একবারেই হয়তো হবে না। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। দেখা যায় এক প্রকল্পে দুই কমিটির মিটিং একই সঙ্গে করেও দুবার সম্মানি নেওয়া হয়। এটা ঠিক না। সম্মানি না থাকলে কর্মকর্তারা মিটিংয়ে আসেন না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় এটা দেখা যায়। তবে যদি একজন সচিব মিটিং ডাকেন তাহলে সেখানে অন্য সংস্থার অতিরিক্ত সচিব বা তারও নিচের কর্মকর্তারা আসবেন না এটা মেনে নেওয়া যায় না। কেননা সচিব যে মন্ত্রণালয়েরই হোক তিনি তো সরকারের সচিব। এ বিষয়ে শৃঙ্খলা আনা দরকার। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তাদের নিজস্ব নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরেও এসব মিটিংয়ে অংশ নিতে হয়। কিন্তু সেটিও তার কাজের অংশ। কেননা অফিস সময়ের মধ্যেই তো তিনি যাচ্ছেন। ফলে অফিসে ফাইল জমে থাকছে। বলা হয় স্যার নেই, মিটিংয়ে আছেন। যদি এমন হতো অফিস সময়ের বাইরে মিটিং হয়। তাহলে ওভারটাইমের কথা আসত। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন হলো অফিসারদের তো ওভারটাইমের কোনো বিষয় নেই। এটি তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা, গাড়িচালক অথবা ক্লার্ক হলে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। এই সম্মানির রীতির বিষয়টি কখনোই পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে অনেক উন্নয়নন সহযোগীদের সঙ্গে এ নিয়ে সমস্যা হতো। সম্মানির কোনো বিধান বেশিরভাগ দাতার নেই। ফলে কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজই শুরু করা যায়নি, এমন উদাহরণও আছে। কৃচ্ছ সাধনের এই সুযোগে সম্মানির রীতি থেকে সরকার চাইলে বেরিয়ে আসতে পারে। সূত্র জানায়, গত বছর ৩ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রায়ত্ত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন ও নিজস্ব তহবিলের আওতায় সব প্রকল্পে সম্মানি বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করা যাবে না। শুধু প্রকল্পই নয়, কর্মসূচি ও স্কিমগুলোর ক্ষেত্রে ‘৩২৫৭২০৬ সম্মানি’ অর্থনৈতিক কোডের বরাদ্দ থেকে এ খাতে ব্যয় করা যাবে না। এক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি), প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি), বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিপিইসি), বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (এসপিইসি) এবং বিভাগীয় বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিএসপিইসি) সভার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই পরিপত্রের মেয়াদ শুধু গত অর্থবছর নাকি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এ ধরনের কোন নির্দেশনা ছিল না। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই (জুলাই মাস) আবারও সম্মানি দেওয়া ও নেওয়া শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, সম্মানি না দিলে মিটিংয়ে আসতে অনীহা থাকাটা দুঃখজনক। এটা সরকারি কাজ। সুতরাং দায়িত্বে থাকলে আসতেই হবে। তবে প্রকল্প যেহেতু রুটিন কাজের বাইরে ভিন্ন ধরনের কাজ, অনেক স্টাডি করতে হয়, সেহেতু সরকার সম্মানির ব্যবস্থা শুরু করেছিল। কিন্তু এটি স্থগিত করলে যে মিটিংয়ে আসা বন্ধ করতে হবে সেটি সঠিক কাজ নয়। সম্মানি দিলেও আসতে হবে, না দিলেও আসতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রকল্প পরিচালক জানান, পরিপত্রে গত অর্থবছরের কথা বলা হলেও সেটি কতদিন চলবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে এ অর্থবছরের শুরু থেকেই সেটি চালু হয়েছে। এতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় এক বৈঠকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েকটি প্রকল্পের বৈঠক সেরে ফেলেন। কিন্তু সম্মানি দিতে হয় আলাদা করেই। এতে বছরে সরকারি তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তা সম্মানি না দিলে মিটিংয়ে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে থাকেন।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আতঙ্কে চলন্ত ট্রেন থেকে দম্পতির লাফ, কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু কমছে বাজেটের আকার শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস, একইসঙ্গে সুসংবাদও সংসদ ভবনের সামনে চলছে নববর্ষের কনসার্ট কমল স্বর্ণের দাম মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী অপরাধীদের ‘সেকেন্ড হোম’ বস্তির ৩০০ ঘর সরকারি ফার্মেসি: সম্ভাবনার পাশাপাশি আছে নানা চ্যালেঞ্জও রাজশাহীতে ১১০ পিচ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার সোনারগাঁ থেকে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের পদবঞ্চিতদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, আহত-৮জন চাঞ্চল্যকর সেই শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেফতার ৪ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-মেঘালয় করিডোর চান সাংমা সীমান্তে ফের বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করল বিএসএফ ঈদের পর আসছে জিম্বাবুয়ে, সূচি প্রকাশ সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় হিজবুত তাহরীরের ৩৬ সদস্য গ্রেফতার বাড়িতে বসে রোজা রাখা সহজ, খেলতে নেমে নয়! নাটক সিনেমায় নারীদের গুরুত্ব কতটুকু? রাশিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের পাল্টা ড্রোন হামলা