নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
ঈদযাত্রা এখনও স্বস্তির চাপ বাড়বে আজ
গাড়ির চাপ বাড়লেও গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো মহাসড়কেই যানজট ছিল না। কয়েকটি স্থানে ধীর গতি থাকলেও স্থবিরতা সৃষ্টি হয়নি। তবে আজ বৃহস্পতিবার গার্মেন্ট, কলকারখানা ছুটির পর যাত্রীর ঢলে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এ সুযোগে ঢাকায় চলা লোকাল বাস, লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে গিয়ে বিকল হলে আগের বছরগুলোর মতোই ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, রেলেও গতকাল পর্যন্ত ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তির। টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ বাধা থাকায় অন্যান্য বছরের মতো এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় নেই। অধিকাংশ ট্রেন ছেড়েছে সময়সূচি মেনে।
বাস মালিক ও শ্রমিকদের ভাষ্য, এ বছর যাত্রীও কম। তাঁদের ধারণা, তীব্র গরম, লোডশেডিং এবং অর্থনৈতিক সংকটে বহু মানুষ ঢাকায় থাকছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ফেসবুকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ সিম।
গত ঈদুল ফিতরের আগের চার দিনে ৭৩ লাখ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছিলেন। ঈদের ছুটির প্রথম দুই দিনে ৩০ লাখ এবং পরের দুই দিনে ৪৩ লাখ সিম ব্যবহারকারী রাজধানী ছাড়েন। ২০২১ সালের ঈদুল আজহায় ১ কোটি ৫ লাখ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছিলেন। সিমের সংখ্যায় দিয়ে ঢাকা ছাড়া মানুষের সংখ্যার প্রকৃত অঙ্ক জানা না গেলেও একটি ধারণা পাওয়া যায়। তা বলছে, এবার গ্রামমুখী যাত্রী কম।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনিবার ঈদ হওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার ছুটি শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নির্বাহী আদেশে সরকার বুধবার ছুটি ঘোষণা করায় মঙ্গলবারই ছিল শেষ কর্মদিবস। এতে যাত্রীরা ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন। গত বছর রোজার ঈদের আগে চার দিন ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তির। ছুটি কমায় কোরবানির ঈদে চরম দুর্ভোগ হয়। এবার দুর্ভোগ এড়াতে ছুটি বাড়িয়েছে সরকার।
মহাসড়কগুলোর গতকালের চিত্র অনুযায়ী, ছুটি বৃদ্ধির সুফল মিলছে। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অংশ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা অংশ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে অসহনীয় যানজটের শঙ্কা থাকলেও তা হয়নি।
রাজধানীর তিন টার্মিনালে গতকাল বিকেল পর্যন্ত যাত্রীর খুব একটা চাপ ছিল না। গাবতলী টার্মিনালে দেখা যায়, ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন চালকের সহকারীরা। ‘ঝিনাইদহ লাইন’র ম্যানেজার কবির হোসেন জানান, পদ্মা সেতু চালুতে খুলনা এবং বরিশালের বাস এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে চলছে। এতে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে চাপ কমেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফেরিতে সহজেই পদ্মা নদী পার হতে পারছে গাড়ি।
এনা পরিবহনের ম্যানেজার আতিকুল আলম জানিয়েছেন, মহাখালী টার্মিনাল থেকে যাত্রা করা বাস স্বাভাবিক সময়ের মতোই দেড়-দুই ঘণ্টায় যানজটপ্রবণ গাজীপুর পার হতে পারছে। সায়েদাবাদ থেকে চলা সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বাসের কর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জে যানজট না থাকায় ঈদযাত্রা এখনও স্বস্তির।
উত্তরবঙ্গের পথে যমুনার বঙ্গবন্ধুর পূর্বপ্রান্তে এলেঙ্গায় যানজটের শঙ্কা ছিল। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাড়ির চাপ বাড়লেও যানজট হয়নি।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। সেতু পেরিয়ে উত্তরবঙ্গে গেছে ১৭ হাজার ২৫৬টি যানবাহন। বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজায় দিনভরই হাজারো মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি ছিল।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের চন্দ্রা, কালিয়াকৈরে ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট হয় প্রতি বছর। এবার চন্দ্রার ত্রিমোড় এলাকায় ভিড় বাড়লেও স্থবিরতা নেই। উত্তরবঙ্গগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহনের যাত্রী আবু মঈদ বলেন, ঢাকার পর যানজট নেই। গতকাল চন্দ্রার ত্রিমোড় পরিদর্শন করেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (হাইওয়ে) শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেছেন, কলকারখানা ধাপে ধাপে ছুটি হলে যানজট হবে না। বৃহস্পতি ও শুক্রবার যাত্রীর চাপ বাড়বে। তা মোকাবিলায় হাইওয়ে পুলিশ প্রস্তুত। যানজট রোধে মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নের কাজ চলায় সিরাজগঞ্জে দুর্ভোগের শঙ্কা রয়েছে। কামারখন্দের কাশেম মোড়ে গতকাল সকাল ৮টার দিকে ধীরগতি ছিল। পুলিশের তৎপরতায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
নাভানা গ্রুপের সহকারী ব্যবস্থাপক এইচ এম তৌহিদুজ্জামান জানান, বাসে মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকার কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে পৌঁছেছেন। কোথাও যানজট হয়নি। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেছেন, ঈদযাত্রার শেষটাও ভালো হলে স্বস্তি পাব।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে গাড়ির চাপ বাড়লে যানজট হয়নি। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, ঈদযাত্রার মূল চাপ শুরু হয়নি। তার পরও গাড়ি বেড়েছে। মেঘনা সেতু হয়ে মঙ্গলবার ৪৪ হাজারের বেশি গাড়ি চলেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। স্বাভাবিক সময়ে এই সংখ্যা থাকে ৩০ হাজার।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী টোল প্লাজা পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। তিনি বলেছেন, এ বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট হবে না।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক এবং পদ্মা সেতুতে গাড়ির চাপ বাড়লেও দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা স্বস্তিতেই গন্তব্যে পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার রাত থেকে এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় ইলেকট্রনিক টোল চালু হয়েছে। ফলে না থেমে চলতে পারবে গাড়ি। আজ থেকে পদ্মা সেতুতে চলবে মোটরসাইকেল। গতকাল টোল প্লাজা পরিদর্শন গিয়ে সেতু সচিব মনজুর হোসেন বলেছেন, নিয়ম মানলে ঈদের পরও পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে। নিয়ম না মানলে আবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
প্রায় এক বছর পর মাওয়া ঘাটে দুটি ফেরি চলছে মোটরসাইকেল পারাপারে। অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন বলেন, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৯৫০ মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুতে গাড়ির চাপ কমেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে। আরিচা ঘাটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে ২০টি ফেরি রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮০০ মোটরসাইকেলসহ ৩ হাজার ৫০টি যানবাহন পার হয়েছে।
ট্রেন ছেড়েছে ঠিক সময়ে
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন থেকে ২৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এগুলো ১০ মিনিট থেকে ২০ মিনিট বিলম্ব করেছে। স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার জানিয়েছেন, ট্রেন শিডিউল মেনে চলছে। আগের দু’দিনের মতো গতকালও কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে টিকিট দেখিয়ে প্রবেশে করতে হয়েছে যাত্রীদের।
অনলাইনে টিকিট না পাওয়া হাজারো মানুষ গতকাল স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য ভিড় করেন কমলাপুরে। মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হয়েছে। তবে কিছুটা নমনীয় হয়েছে রেল। স্ট্যান্ডিং টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের লেখা টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এতে দাঁড়ানো যাত্রীর ভিড় বাড়ছে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।