নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
চট্টগ্রামের সড়কে জাল ফেলে মাছ ধরা, চলছে নৌকা
চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ এলাকার মানুষ চারদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
নগরীর প্রাসাদোপম বাড়ি কিংবা শপিং মলের সামনে রাস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়া সড়ক দিয়ে চলছে নৌকা।
নগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ির ভেতর কোমর থেকে বুক সমান পানিতে অবস্থান করে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে হাজারও পরিবারকে। শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। কোমর থেকে গলা সমান পানি ডিঙ্গিয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।
চান্দগাঁও থানা ভবনের নিচতলা পানির নিচে। জেলা পুলিশ লাইনেও পানি আর পান। এখানে নৌকা নামিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে বাসিন্দাদের। স্কুল-কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অলিগলি, মার্কেট, কাঁচাবাজার দোকান-পাট সব পানির নিচে। অতীতে এমন দুর্ভোগ আর দেখেননি নগরবাসী।
চতুর্থ দিনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি টিম পানি নিষ্কাশনের পথ খুঁজতে বের হয় সোমবার। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন টিম পানি কোথায় আটকে আছে, কেন নিষ্কাশন হচ্ছে না- তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
কেবল চট্টগ্রাম মহানগরী নয়; জেলার ১৬টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৬টি উপজেলায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বন্যা। এসব উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার খেতের ফসল, পুকুর, মাছের ঘের ডুবে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস; যা গত ৩০ বছরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ৫৩০ দশমিক ৬ মিলিমিটার; কিন্তু গত ছয় দিনেই ৫৪৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস; যা গত ৩০ বছরে সর্বোচ্চ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবারও নগরীর বেশির ভাগ এলাকা ছিল পানির নিচে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় নাওয়া-খাওয়া ছিল বন্ধ। অনেক পরিবারের শিশু বৃদ্ধ থেকে সবাই খাটের ওপর নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। করতে পারছেন না শৌচকর্ম, রান্না-বান্না। জরুরি প্রয়োজন এমনকি ডাক্তার বাড়িতেও যেতে পারছেন না রোগীরা।
ভারিবর্ষণে জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছে বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদারপাড়া, মুন্সী পুকুরপাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে।
অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় জমে থাকা পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। অনেক সড়কে বাস-মিনিবাস কিংবা প্রাইভেট গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা চলছে না। কেবল রিকশাই ভরসা। গলাপানিতে রিকশা করে অতি জরুরি কাজে বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষকে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পাশাপাশি জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বাড়ে আরও।
জোয়ারের ফলে আগ্রাবাদ, বন্দর, ইপিজেডের বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। যেখানে আগে হাঁটু পানি উঠত সেখানে এখন কোমর সমান পানি। বাসা-বাড়ি, দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়েছে। দুই নম্বর গেট মুরাদপুর ও চকবাজার ব্যস্ততম সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানির স্রোত। এসব এলাকার বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে বাসিন্দাদের।
চান্দগাঁও থানা ভবনের নিচতলা পানির নিচে। দোতলায় ওঠে জরুরি কাজ সারতে হচ্ছে। চকবাজার এলাকার কাঁচাবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখা গেছে বাসিন্দাদের।
শুক্রবার থেকে টানা বর্ষণে পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ, বোয়ালখালী এবং রাউজান উপজেলার নিচু এলাকায় লোকালয়ে পানি উঠে গেছে।
এসব উপজেলার হাজার হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পটিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণে পৌরসভার ৫-৬টি ওয়ার্ড যেখানে কখনো বর্ষা মৌসুমে পানি উঠেনি সেসব ওয়ার্ডও তলিয়ে গেছে।
বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়াসহ নদীতীরবর্তী বিভিন্ন উপজেলায় ফসলের খেত ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বীজতলা ও নতুন রোপণ করা ধানের চারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য প্রকল্প।
চন্দনাইশে পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে এ পানি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সাঙ্গু নদীর দুইপাড়ের শত শত পরিবারের বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শত শত একর জমির রবিশস্য বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। নদীপাড়ের বহু পরিবার সোমবার রাত থেকে সাঙ্গু নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, উঁচু জায়গাতে পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
দোহাজারী পৌরসভার বেগমবাজার, কিল্লাপাড়া, রায়জোয়ারা, দিয়াকুল, চাগাচর, বারুদখানা, উল্লাপাড়া এসব এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে। উপজেলার দোহাজারী, হাশিমপুর, কাঞ্চনাবাদ, বরমা, বৈলতলী, বরকল, জোয়ারা, ধোপাছড়িতে নিচু এলাকায় জলবদ্ধতা ও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
এসব এলাকার যোগাযোগ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মৎস্য খামারগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে মৎস্য খামারের মালিকরা লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। কিছু কিছু ইউনিয়ন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
এ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েক জানান, উপজেলার বেশকিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ওইসব এলাকায় শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইন ও চাল বরাদ্দ করা হয়েছে; যা সোমবার থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কেঁওচিয়া, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, চরতী ও আমিলাইষসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ও ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঞ্চনা, এওচিয়া, বাজালিয়া ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওচমান আলী সোমবার বিকালে বলেন, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ জায়গা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুন নির্মাণ করা চট্টগ্রাম কক্সবাজারের রেললাইনের কারণে বৃষ্টির পানি প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারেনি। ফলে অনেক উঁচু এলাকায় পানি উঠে গেছে। অনেকে পানিবন্দি। তাদের জন্য আপাতত ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।