ডেঙ্গুর নাজুক পরিস্থিতিতে বাড়ছে মৌসুমি জ্বরও – দৈনিক গণঅধিকার

ডেঙ্গুর নাজুক পরিস্থিতিতে বাড়ছে মৌসুমি জ্বরও

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৭ আগস্ট, ২০২৩ | ৭:৪৮
তিন মাস ধরে সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস ভয়াবহ তাণ্ডব চালাচ্ছে। দৈনিক দুই হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আক্রান্তদের অনেকে শকে চলে যাওয়ায় মারাও যাচ্ছেন। ডেঙ্গুর এই নাজুক অবস্থার মধ্যেই প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তনজনিত মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে রোগীদের ভোগান্তি ও হয়রানি। ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্তরাও ডেঙ্গু আতঙ্কে চিকিকৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভিড় করছেন। জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ছুটছেন। রাজধানী ছাড়াও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪৯৫ জন হাসপাতালে ভর্তি এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬৯ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪২৬ জন। এ সময়ে ১০ জন মারা যাওয়ায় চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৯ হাজার ৩৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪ হাজার ৬৮০ জন। অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৬৫৪ জন ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৯৬৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৪ হাজার ৫২৩ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৪৪৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৪ হাজার ৩৩১ জন। ঢাকায় ২৯ হাজার ৬০২ এবং ঢাকার বাইরে ২৪ হাজার ৭২৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুনে যেখানে ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানে জুলাইয়ে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ছয়গুণ হয়েছে। জুলাইয়ে ৫ হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ সময়ে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মেতে ১ হাজার ৩৬, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ এবং জুলাইয়ে ভর্তি রোগী এক লাফে তা বেড়ে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে দাঁড়ায়। আগস্টের পাঁচ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ১৩৬ জন। এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে জানুয়ারিতে ছয়, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে দুই, মেতে দুই, জুনে ৩৪, জুলাইয়ে ২০৪ এবং আগস্টের প্রথম চার দিনে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু ভয়াবহ উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সেবছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। চিকিৎসকরা বলছেন, এ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গু, করোনা ও সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসজনিত জ্বরের কথা সবার আগে ভাবতে হবে। এ ছাড়া শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, প্রস্রাব সংক্রমণ, টাইফয়েড ইত্যাদি কারণেও জ্বর হতে পারে। এমনকি জ্বর হতে পারে দাবদাহের উঠা-নামা থেকেও। জ্বরের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক আরও কিছু লক্ষণ দেখে জ্বরের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত জ্বরের লক্ষণ প্রায় একই ধরনের। এ কারণে ডেঙ্গু, করোনা ও সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের মধ্যে প্রথম দু’এক দিনেই পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন। আনুষঙ্গিক লক্ষণ অনুযায়ী প্রথমেই ডেঙ্গু ও করোনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এরপর সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। সরেজমিন রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ঘুরে সেখানে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। চিকিৎসা নিতে আসা অভিভাকদের সঙ্গে কথা বলে বেশিরভাগ শিশুর জ্বর উপসর্গের কথা জানা যায়। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তিন বছর বয়সী মেয়ের জ্বরের চিকিৎসা নিতে আসা জোহরা বেগম জানান মেয়েটি তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। খাবার খেতে কষ্ট হচ্ছে। এক ঘন্টা দীর্ঘ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছেন। ডাক্তার দেখাতে আরও ঘন্টাখানেক লাগবে। এরপর পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত হবে। তবেই ওষুধ লিখবে। এত ভোগান্তি হবে আগে জানলে বেসরকারি হাপাতালে যেতাম। শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসপাতালে বহিঃ ও জরুরি বিভাগ মিলে দৈনিক গড়ে এক থেকে দেড় হাজারের মতো শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। যাদের বেশিরভাগের প্রাথমিক উপসর্গ জ্বর। ১০০ জন রোগীকে পরীক্ষা করা হলে তাদের মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ জন ডেঙ্গু পজিটিভ হচ্ছে। বাকিদের সিজনাল ভাইরাল ফিভার শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গু ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে জ্বর হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এদিকে শিশু হাসপাতালের মতোই ঢাকা মেডিকল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ভাইরস জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য জানা গেছে। এর আগে গেল সপ্তাহে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মুগদা এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম শনিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৫ জুলাই তার স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর একে একে দুই ছেলে-মেয়ে এমনকি নিজেরও জ্বরে আক্রান্ত হন। শনিবার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ডেমেশ্বর কমিউিনিট ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে (বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে) তার ক্লিনিকে জ্বরের রোগী বাড়ে। এবারও দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী জ্বর, সর্দি-কাঁশি উপসর্গ নিয়ে আসছেন। যাদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। চাপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মারুফা রহমান বলেন, সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা মাধ্যমে ভাইরাল ফ্লু হয়। এখন ডেঙ্গু ছাড়াও অনেকে ভাইরাল ফিভার বা মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাইরাসজনিত জ্বর চার থেকে সর্বোচ্চ সাত দিন পর্যন্ত থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি বা নাক দিয়ে পানি ঝরা, হালকা বা বেশি জ্বর, গলা ব্যথা, কাঁশি, শরীর দূর্বল, ক্লান্তিভাব দেখা দেয়। এখন জ্বর দেখা দিলেই ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। যদিও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা দেওয়ায় অনেকে করোনা ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি মন্তব্য করেন। ইমিরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সময়-অসময়ে অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টি হচ্ছে। ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ভাইরাসজাতীয় রোগও হচ্ছে। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু, কমন কোল্ড, রেসপিরেটরি ইনফেকশন, টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড, করোনাভাইরাস ইত্যাদি। সব ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রায় একই রকম। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় অধিকাংশ রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন না হলেও অনেকে আতঙ্কিত হয়ে সেবা নিতে যাচ্ছে। এমনিতেই হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীতে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে গুরুত্বর অসুস্থ রোগীদের ভো গান্তি বাড়ছে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ডেঙ্গু-করোনা টেষ্ট করাতে হবে। জ্বর নিশ্চিত হয়ে ওষুধ খেতে হবে। অযথা এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। তবে কোনভাবেই জ্বরকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। ডেঙ্গুসহ সব ধরনের ভাইরাস জাতীয় জ্বরের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সোনারগাঁ থেকে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের পদবঞ্চিতদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, আহত-৮জন চাঞ্চল্যকর সেই শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেফতার ৪ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-মেঘালয় করিডোর চান সাংমা সীমান্তে ফের বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করল বিএসএফ ঈদের পর আসছে জিম্বাবুয়ে, সূচি প্রকাশ সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় হিজবুত তাহরীরের ৩৬ সদস্য গ্রেফতার বাড়িতে বসে রোজা রাখা সহজ, খেলতে নেমে নয়! নাটক সিনেমায় নারীদের গুরুত্ব কতটুকু? রাশিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের পাল্টা ড্রোন হামলা ভারতের বিপক্ষে ইচ্ছে করেই খারাপ খেলেন ম্যাক্সওয়েল, দাবি সাংবাদিকের ইসরাইলি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমআ আদায় লাখো ফিলিস্তিনির আ.লীগ নেতার গ্রেফতার নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি প্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতায় আসবে: এএফপি সুইটির কোলজুড়ে একসঙ্গে এলো চার সন্তান শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ, সৌদি যাচ্ছেন জেলেনস্কি ইসরাইলি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমআ আদায় লাখো ফিলিস্তিনির ঢাকা মেডিকেল থেকে হিজবুত তাহরীর চার সদস্য আটক সাংবাদিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ চাঁদা দাবির অভিযোগে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নেতার সদস্য পদ স্থগিত