নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
ডেথ রেফারেন্স শেষ হবে চলতি বছর
একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারকাজ ১৯ বছরেও শেষ হয়নি। অপেক্ষমাণ থাকার চার বছর পর গত ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হলেও পরে সেটি মুলতুবি রাখা হয়। এরই মধ্যে ওই বেঞ্চে হলি আর্টিজানে হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। ফলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার শুনানি অসমাপ্ত থেকে যায়।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে। বর্তমানে সেখানে হলি আর্টিজানে হামলা মামলার শুনানি চলছে। ওই বেঞ্চের একজন বিচারক চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় বিচারকাজ আপাতত (১৭ আগস্ট পর্যন্ত) বন্ধ রয়েছে। হলি আর্টিজানে হামলা মামলাটির শুনানি শেষ হলেই গ্রেনেড হামলা মামলার অসমাপ্ত বিচারকাজ শুরু হবে। তারা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি উচ্চ আদালতে শেষ হবে। এদিকে এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫২ আসামির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৬ জন এখনো পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত তৎপর। সবাই জানেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার কতদিন পর শুরু হয়েছে। আবার বিচার করতে গিয়ে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে। এ কারণে অধস্তন আদালতে বিচার শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এটি এখন উচ্চ আদালতে আছে। তিনি বলেন, এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করছে সরকার।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস শনিবার বলেন, বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে গত ডিসেম্বরে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার শুনানি শুরু হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের আদেশ অংশ, মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রের অংশবিশেষ পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করা হয়। এরই মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলি আর্টিজানে হামলা মামলাটির ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয়। একজন বিচারক পবিত্র হজে এবং অপরজন চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। চলতি সপ্তাহে পুনরায় শুনানি শুরু হবে। তিনি বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এ বছরই দুটি মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে বলে আশা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন মারা যান। আহত হন কয়েক শ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। আহতদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্পিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় বাকি ১১ জনের। পলাতক ছিলেন ১৮ জন। জানা যায়, বর্তমানে উচ্চ আদালতে ৯৩৭টি ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে। গত বছর একই সময়ে শুনানির অপেক্ষায় ছিল ৮৪৩টি। এক বছরে বেড়েছে ১০৬টি। বর্তমানে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে ২০১৭ সালে মৃত্যুপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি চলছে। সে হিসাবে ২০২৩ সালে আসা ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে ২০২৯ সালে। বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত একটি ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে ১০ থেকে ১২ বছর লেগে যায়।
আইনজীবীরা জানান, কোনো মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসাবে পরিচিত। এ অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের জেল আপিল, আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। তবে শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে পেপারবুক প্রস্তুত করতে হয়।
আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে অপেক্ষমাণ আছে। ওই বেঞ্চের একজন বিচারক অসুস্থ থাকায় বিচার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। শিগগিরই শুনানি শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটির বিচারকাজ ১৯ বছরেও শেষ না হওয়া দুঃখজনক। পাঁচ বছর ধরে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পড়ে আছে। এজন্য রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।