
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

কুমারখালীতে দুর্ধর্ষ চুরি,টার্গেট ব্রাক অফিস,১০ লক্ষ্য টাকার মালামাল লুট।

ফরিদপুরে বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যে ছেলেকে হত্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মাদকসহ গ্রেপ্তার ১ জন

তাহিরপুর বিভিন্ন ছড়া ও নদীর খনিজ বালু হরিলুট,যেন দেখার কেউ নেই

বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

খুলনায় যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

চলন্ত ট্রেনে তরুণীকে ধর্ষণ মামলায় ৪ আসামি রিমান্ডে
ঢাকায় সক্রিয় নারী প্রতারক সিন্ডিকেট

ঢাকায় একাধিক নারী প্রতারক চক্র ছদ্মবেশে সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের রেয়েছে বিশ্বস্ত সোর্স। তাদের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে ঢোকে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই সুযোগ বুঝে পরিবারের সদস্যদের চোখে ধুলা দিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মুল্যবান মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দিয়ে পরিবারের লোকজনকে অচেতন করে, আবার কখনো ফাঁকা বাসায় সুযোগ বুঝে অর্থকড়ি-স্বর্ণ-গহনা নিয়ে পালিয়ে যায় এই চক্রের সদস্যরা।
বাসায় গৃহকর্মী রাখার আগে তার ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক করার পরামর্শ দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা বলেন, গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়া উচিত। নাগরিকরা সচেতন না হলে আরও বহু মানুষকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
কয়েকজন অপরাধী গৃহকর্মীর প্রেফাইল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এরা ছদ্মবেশে ঘরে ঢোকে। কোনো বাসায় কাজ নেওয়ার আগে রেকিও করে। এমনকি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ডিউটির সুবাদে তাদের সঙ্গে ওই বাড়ি কিংবা পাশের বাড়ির বাসিন্দাদের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সুবাদে বিভিন্ন সময় কেউ কেউ তাদের কাছে কাজের লোক চায়। এই সুযোগে তাদের মাধ্যমে ছদ্মবেশী গৃহকর্মী প্রতারকরা বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা ছদ্মনাম ও ভুয়া ঠিকানা দিয়ে কাজ নেয়। ডিএমপির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে নগরীতে চার হাজার ৩০২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনায় গৃহকর্মীর সম্পৃক্ততা মিলেছে। যদিও পুলিশ বলছে, গৃহকর্মী বেশে চুরির ঘটনায় আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে নাগরিকদের অসাবধানতায় এমন ঘটনা রাজধানীতে প্রায়ই ঘটছে। কলাবাগান থানার গ্রিন রোডের বাসিন্দা কাকলী খানের বাসায় গত ১০ আগস্ট এক গৃহকর্মী নেওয়া হয়।
বাড়ির দারোয়ানের মাধ্যমে ওই নারী চাকরি নেয়। কাজ নেওয়ার সময় সে নিজেকে রহিমা বেগম নামে পরিচয় দেয়। গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী দু’জনই কর্মজীবী। ব্যস্ততার কারণে তারা ওই নারীর সমুদয় নাম ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নেননি। এ সুযোগে ওই গৃহকর্মী পরদিন (১১ আগস্ট) ভোরে বাসা থেকে চার লাখ টাকা, চারটি মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কাকলী খান কলাবাগান থানায় মামলা করেন। বাড়ির সিটি ক্যামেরায়ও ওই নারীর ছবি ভিডিও রয়েছে। কিন্তু সঠিক নাম ঠিকানাসংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত না থাকায় তাকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
সুবর্ণা আকতার থাকেন কড়াইল বস্তিতে। বিত্তবানদের বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে স্বর্ণালংকারসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া তার পেশা। বনানী এলাকায় একজন অধ্যাপকের বাসায় কাজ করত সে। গত বছর মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে পালিয়ে যায় সুবর্ণা। পরে মামলা হলে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার সঙ্গে রবিন নামে এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
মুন্নি ও তামান্না আপন দুই বোন। অপর দিকে আকলিমা ও পিয়ারা তাদের চাচাত ও ফুফাত বোন। চার বোন মিলে গড়ে তোলে সিন্ডিকেট। তারা বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। অন্য নারীদেরও কাজ দেয়। এভাবে তারা প্রতারণা করে অনেকের সর্বনাশ করেছে। তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে আবার ফিরেছে পুরোনো পেশায়।
সর্বশেষ তারা উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডের বাসিন্দা মনোয়ার আলীর বাসায় ছয় হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয় গৃহকর্মী নুরজাহান। ১১ সেপ্টেম্বর সকালে মনোয়ার আলী অফিসে চলে যান। দুপুরে তাকে আমেরিকা প্রবাসী মেয়ে ফোন করে জানায়, তার মা (মনোয়ার আলীর স্ত্রী) ফোন রিসিভ করছেন না।
এরপর মনোয়ার আলী অফিস থেকে দ্রুত বাসায় যান। গিয়ে দেখেন তার স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। পুরো বাসা তছনছ অবস্থায় পড়ে আছে। ওই গৃহকর্মী লাপাত্তা। তাৎক্ষণিকভাবে মনোয়ার আলী তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তিনি সুস্থ হলে জানতে পারেন, ওই গৃহকর্মী সাড়ে চার লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়।
এ ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই বিলকিস নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করে। সেই বিলকিসই নুরজাহান নামে (ছদ্মনাম) বাড়ির দারোয়ান গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে মনোয়ার আলীর বাসায় কাজ নেয়। পিবিআই জানায়, বিলকিসের নামে শেরেবাংলা নগর, ভাটারা ও উত্তরা পশ্চিম থানায় মোট চারটি চুরির মামলা রয়েছে। সে একেক বাসায় একেক নামে চাকরি নেয়। নুরজাহান, রোজিনা, কনা এমন বিভিন্ন ছদ্মনাম সে ব্যবহার করে। শেরেবাংলা নগরের বাসিন্দা সোহেল রানার বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা, ভাটারার সিদ্দিকুর রহমানের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা ও তিন ভরি স্বর্ণ, উত্তরার মুশফিকুর রহমানের বাসা থেকে দেড় লাখ টাকা ও পাঁচ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরি করেছে সে।
পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সোমবার বলেন, বাসায় কাজের লোক নিয়োগের বিষয়ে সতর্কতার বিকল্প নেই। নিয়োগের আগে তার ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড’ যাচাই করতে হবে। সেজন্য পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও বলছে, কাজের লোক নিয়োগের আগে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে। এসব তথ্য এক কপি সংশ্লিষ্ট থানায়, আরেক কপি নিজের কাছে রাখতে হবে। ওই ব্যক্তি পূর্বে যেসব জায়গায় কাজ করেছেন, সেসব জায়গায় যোগাযোগ করে চাকরি ছাড়ার কারণ নিশ্চিত হতে হবে।
কাজের লোকের পরিবারের লোকজনের তথ্য, স্থায়ী ঠিকানা, প্রয়োজনে ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে ঠিকানা সঠিক কিনা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, থানাগুলোতে নগরবাসী, ভাড়াটিয়া, এমনকি তাদের কাজের লোকের তথ্যও নির্ধারিত ফরমে সংরক্ষণ করা হয়।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।