তরুণ লেখকদের বইয়ে চোখ
তরুণ লেখকরা এখন আর শুধু বইমেলার প্রাণই নন, তারা সাহিত্যচর্চার পরীক্ষিত সেনানি। তাদের লেখার মান এবং বৈচিত্র্য অনেকের কাছে এখন ঈর্ষণীয়।
ফিকশন, নন-ফিকশন দুই জায়গাতেই তারা সমানতালে নিবিষ্টভাবে লিখছেন। তাদের লেখা সেসব বই কয়েক মুদ্রণ বিক্রি হচ্ছে। পাঠক তাদের বই সানন্দে সংগ্রহ করছেন।
বইমেলায় এখন প্রবেশ করলেই দেখা যায় পিয়াস মজিদের কবিতার বই ‘ভুলে যাওয়া স্কাটের সিঁড়ি’, ‘এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়’, পলাশ মাহবুবের ‘প্রতি মঙ্গলবার আমরা বই ছাড়া স্কুলে যাই’, মোজাফফর হোসেনের ‘নো ওম্যান্স ল্যান্ড’, সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়’, মিলু আমান ও হক ফারুকের ‘বাংলার রক মেটাল’, জয় শাহরিয়ারের ‘রুপালি গিটার’, প্রবর রিপনের ‘রক্তহ্রদ’, মৌরি মরিয়মের ‘অনিন্দ অনলে’, রাসেল মাহমুদের ‘কয়েকছত্র কান্নার গল্প’, মাহফুজা অনন্যার ‘কীর্তনখোলা’, জান্নাতুন নুর নিশার ‘পুরুষ সাবিত্রী’, অসীম হিমেলের ‘ধূম্রজালে খেদু মিয়া’, সাকী আহমদের ‘ছোটদের বই’, ইথার আখতারুজ্জামানের ‘বসন্ত বিভ্রম’ বইগুলো সংগ্রহ করছেন সব শ্রেণির ও বয়সের পাঠক।
বইমেলায় তরুণ লেখকদের অবস্থান জানতে চাইলে কবি পিয়াস মজিদ যুগান্তরকে বলেন, অনেকটাই পোক্ত। তরুণদের অনেকের কবিতা ও কথাসাহিত্যের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ আছে।
আর তরুণরা এখন শুধু গল্প-কবিতাই নয়, নাটক লিখছে, অনুবাদ করছে, সিনেমা নিয়ে লিখছে, সংগীত নিয়ে লিখছে, ইতিহাসচর্চা করছে। তাদের বিচিত্র বইপত্রের প্রতি বিষয় ও উপস্থাপনের অভিনবত্বের কারণে সব বয়সের পাঠকের মনোযোগ পাচ্ছে।
মিলু আমান বলেন, তরুণ লেখকদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় লেখার বৈচিত্র্য। সংগীতবিষয়ক বই বইমেলার পাঠকদের এখন নতুন আগ্রহ। যেটি নিয়ে নিজেও কাজ করছি।
রাসেল মাহমুদ বলেন, মেলাটা আসলে তরুণ লেখকদের এবং এই তরুণ লেখকরা নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন। একদিকে বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখে তারা বাংলা কথা-কবিতার ভুবনকে সমৃদ্ধ করছেন, অন্যদিকে পৃথিবীতে বাংলা নামের মিষ্টি ভাষাটিকে আরও স্মার্ট ও শক্তিশালী করছেন। এই অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান, আপনারা তরুণদের পাশে দাঁড়ান, দেখুন তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আরও কত কিছু উপহার দেয়।
সাকী আহমদ বলেন, তরুণ লেখকদের অবস্থান খুব ভালো। নতুন লেখক উঠে আসছেন। তারা নতুন নতুন বিষয় নিয়ে লিখছেন। তারাই নতুন নতুন পাঠক তৈরি করছেন। শুধু তাদের বই কিনতেও মেলায় আসছেন অনেক পাঠক। বিষয়টা খুবই আশাব্যঞ্জক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা : নাদিরা মজুমদার অনূদিত ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা’ বইটি প্রকাশ করেছে সাহিত্য কথা। বইটির মূল লেখক নাঈম হক। বইটির মূল্য ৫৫০ টাকা।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন : বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদ আরেফিন বলেন, সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রথাবিরোধী তারুণ্যের প্রতীক হিসাবে লিটল ম্যাগাজিনের গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন দিলারা হাফিজ, হাকিম আরিফ, আঁখি সিদ্দিকা এবং জয় শাহরিয়ার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজ্জাদ আরেফিন, টিমুনী খান রীনো, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা। এ ছাড়া ছিল সুলতানা আক্তারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ এবং দীপ্তি রাজবংশীর পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ, আফরিদা জাহিন জয়ীতা।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।