নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
তাপদাহ সামলাতে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে
অন্য দেশে এমন তাপমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়শিবির চালু করে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফুড ব্যাংক থেকে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার এ সময়ে আবহাওয়াজনিত জরুরি অবস্থা জারি করে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এতে দেশের বড় জনগোষ্ঠী ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই পেতে পারে।
সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুমণ্ডলের প্রকৃতি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছেন তিনি। নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন।
: ১৩ এপ্রিল আপনি জানিয়েছিলেন তাপমাত্রা এবার ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। বাংলাদেশে এবার এত গরম কেন?
মোস্তফা কামাল পলাশ : ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে (এ স্থানকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এক্সট্রা-ট্রপিক্যাল স্থান বলা হয়) ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় জেট স্ট্রিম (জেট তরঙ্গ) নামক বায়ু পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি (তাপ) ও ভর (জলীয় বাষ্প) প্রবাহিত হয় বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গের (ঢেউ) মাধ্যমে। একটি পূর্ণাঙ্গ তরঙ্গ (ঢেউ) তরঙ্গ শীর্ষ (ঊর্ধ্ব অংশ) ও তরঙ্গ পাদ (নিম্ন অংশ) নিয়ে গঠিত। জেট তরঙ্গ সাপের মতো আঁকাবাঁকাভাবে চলে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়। চলার পথে এই জেট তরঙ্গের শীর্ষ অনেক বেশি উত্তর মেরুর দিকে অগ্রসর হলে এবং কোনো স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থাকলে জেট তরঙ্গের দক্ষিণ দিকের ঊর্ধ্ব আকাশে বায়ুর নিম্নচাপ ও ওই স্থানের আকাশের ঠিক নিচে অবস্থিত ভূমিতে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে।
ভূপৃষ্ঠে বায়ুর উচ্চচাপ মেঘ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। প্রাকৃতিক নিয়মে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর ওপর বায়ুর উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়েছে ৬ এপ্রিলের পর থেকে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই উচ্চচাপ একই স্থানে প্রকৃতির ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে আটকা পড়েছে, যা ২১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ১৯ ও ২০ এপ্রিল খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ আকাশে নিম্নচাপ ও ভূপৃষ্ঠের ওপরে উচ্চচাপ অবস্থার মধ্যবর্তী বায়ুমণ্ডলকে তুলনা করা যেতে পারে রান্নার প্রেশার কুকারের বায়ুর সঙ্গে। প্রেশার কুকারে ঢাকনা বন্ধ করে চুলা চালু করলে ভেতরে তাপ বাড়তে থাকে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক রাজ্যের আকাশের বায়ুর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়া শুরু করে ৫ এপ্রিল থেকে। ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের আকাশে প্রাকৃতিক প্রেশার কুকারটির ঢাকনা খুলে গিয়ে তাপমাত্রা কমতে শুরু করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
: বৃষ্টি হবে কবে?
মোস্তফা কামাল পলাশ : এ গরম থাকবে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ২১ এপ্রিল মধ্যরাতের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের মেঘালয় পর্বত সংলগ্ন জেলাগুলোতে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী শক্তিশালী কালবৈশাখী, তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো।
: এমন গরমের পেছনে মানবসৃষ্ট কারণ আছে?
মোস্তফা কামাল পলাশ : তাপপ্রবাহের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব থাকার বিষয়ে একমত ৯০ শতাংশ বিজ্ঞানী। তবে এর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও আছে। কারণগুলোর একটি হলো স্থানীয় কারণ এবং অন্যটি বৈশ্বিক কারণ। কোনো স্থানে তাপপ্রবাহের সৃষ্টি প্রাকৃতিক নিয়মে শুরু হলেও তাপপ্রবাহের তীব্রতা কম বা বেশি হওয়া নির্ভর করছে ওই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের দ্বারা কতটুকু পরিবর্তিত হয়েছে তার ওপর। একই তাপপ্রবাহ ঢাকা শহরের পাশে অবস্থিত আড়িয়ল বিল এলাকার কিংবা টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকার মানুষের জন্য যতটুকু অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টদায়ক হবে ঢাকা শহরের মানুষের জন্য। কারণ সূর্যতাপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হবে আড়িয়ল বিল এলাকার জলাভূমির পানি বাষ্পায়ন করার জন্য কিংবা মধুপুর বনভূমির থেকে ইভাপোট্রান্সপিরেশনের (যার মাধ্যমে জল ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়) জন্য। যে শহর এলাকায় খোলা জায়গা ও গাছপালা যত বেশি থাকবে, সেই শহরে এলাকার মানুষ তাপপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব তত কম অনুভব করবে।
: ভবিষ্যতে তাপমাত্রা কি আরও বাড়বে?
মোস্তফা কামাল পলাশ : এবার বাংলাদেশ অনেকটা মরুভূমির গরমের দেখা পেয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হতে পারে। বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ। এটি দ্রুত হ্রাস করতে না পারলে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে। কেননা শিল্প যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এরই মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ১ সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব নগরায়ণ, জলাশয় রক্ষা ও বেশি করে গাছ লাগালে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।
: এমন তাপমাত্রায় পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সরকার কী করে? আমাদের দেশের সরকার কী করতে পারে?
মোস্তফা কামাল পলাশ : জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অন্য অনেক দেশে এমন সময় তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এসব দেশে আগে তাপপ্রবাহ হয়নি। উন্নত দেশগুলোতে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস ১০ থেকে ১৫ দিন আগেই সরকারি ও বেসরকারি আবহাওয়া প্রতিষ্ঠান দিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে সেসব দেশের গণমাধ্যম জনস্বার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাপপ্রবাহ শুরুর অনেক আগ থেকেই সংবাদমাধ্যম সতর্কতা ও করণীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশ করে। এতে মানুষ আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন। আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোতে তাপপ্রবাহ চলাকালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আশ্রয় শিবির চালু করে, যেখানে ঘরহীন মানুষ আশ্রয় নেন। বিভিন্ন ফুড-ব্যাংক থেকে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারও একই ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। এ ছাড়া সরকার আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আরও যুগোপযোগী করতে পারে।
তাপপ্রবাহকে দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করে এ সময়ে ‘আবহাওয়াজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি করতে হবে। বন্যা, শীত, ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমানো ও দুর্গত মানুষের জন্য যেমন সরকারের বরাদ্দ থাকে, তেমনি তাপপ্রবাহ নিয়েও নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য সরকারের পরিকল্পনা ও বরাদ্দের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
: বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রায়ই সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারছে না। দুর্বলতা কোথায়? সমাধানের উপায় কী?
মোস্তফা কামাল পলাশ : পূর্বাভাস দেওয়ার মতো আবহাওয়া বিজ্ঞানের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিধারী ও করিগরিভাবে দক্ষ মানবসম্পদ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নেই বললেই চলে। যে মানবসম্পদ ও কারিগরি সক্ষমতা আছে, তা ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার মতো যোগ্য নেতৃত্বেরও অভাব রয়েছে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।