নিউজ ডেক্স
আরও খবর
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়!
ইরান দূতাবাসের ঢাকায় ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটির কথা শুনতে চাই না
মেয়াদ বাড়লো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের
কম্বল কিনতে ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোংলা বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
ঢাকা ওয়াসায় পাস ব্যাতীত প্রবেশ নিষেধ
তীব্র গরমে পুড়ছে দেশ
টানা ১২ দিন তাপদাহ, চৈত্রের শেষ দিন আরও তেতে উঠল সূর্য। মৌসুমের উষ্ণতম দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। তাপপ্রবাহ দিন দিন শক্তি দেখাচ্ছে। আওতা বাড়িয়ে এখন তা ছড়িয়েছে সারাদেশে। রাজধানীতে গত আট বছরে গতকালের মতো গরম কখনও অনুভূত হয়নি। একদিকে দিনে তীব্র গরম, অন্যদিকে রাতে কোথাও কোথাও পড়ছে কুয়াশা। প্রচণ্ড গরমে অনেকের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেকের ফাটছে ঠোঁট, উঠে যাচ্ছে চামড়া। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েক দিনে গরমের এই দশা থেকে মিলবে না মুক্তি। আজ পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা আরও বেড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে পারে। তাপদাহের এই সময়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দুঃসহ গরমে মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকুলও হয়ে উঠেছে ব্যাকুল। চলমান তাপদাহে বেশি কষ্টে আছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। ফেটে চৌচির ফসলি ক্ষেত। ঝরে পড়ছে আম-লিচু। এমন পরিস্থিতিকে ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া’ ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।তাপমাত্রা বাড়বে আরও আজ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন কালবৈশাখী বা বজ্রবৃষ্টির আভাস নেই। ফলে নববর্ষে আরও একটি উষ্ণ দিনের আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে চৈত্রের শেষ দিন গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা এবং সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, আরও অন্তত দু’দিন তাপমাত্রা সামান্য বাড়ার প্রবণতা থাকবে।
এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা থাকেই। গেল ক’বছরেও এ সময় তাপপ্রবাহ বিরাজ করেছে। এ সময় দখিনা হাওয়া নেই, বাতাসে আর্দ্রতা কম, মানে জলীয় বাষ্পও তেমন নেই। এ কারণে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে, অসহনীয় গরমও অনুভূত হচ্ছে। এখন এই গরম থেকে রেহাই নেই। ১৬ এপ্রিলের দিকে হালকা ঝড়বৃষ্টির আভাস রয়েছে। তবে ২৪ এপ্রিলের দিকে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে।
১৯৪৯ সালে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হয়। এর পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আগামী ১৯ ও ২০ এপ্রিল খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার শঙ্কার কথা নির্দেশ করছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। ঢাকায় আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল। গতকালের সমান তাপমাত্রা এর আগে ২০২১ সালে আরেকবার উঠেছিল। তবে এবার বাতাসে আর্দ্রতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। তাই গরমের কারণে মানুষের কষ্ট ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, আসলে ঢাকা কিংবা বড় বড় শহরে তাপমাত্রা যেটি রেকর্ড করা হয় তার চেয়েও বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হয়। এর কারণ নগরায়ণ, গাছপালা কমে গেছে, মানুষজন এবং যানবাহন বেড়ে গেছে। তাপ শোষণের উপায় নেই। ফলে গরম যা রেকর্ড করা হচ্ছে তার চেয়েও তাপ বেশি অনুভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গাছ ও জলাশয় আছে এমন এলাকার চেয়ে ঢাকার তাপমাত্রা গড়ে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার। এসব যন্ত্রের ব্যবহার যতই বাড়ছে, ভবনের বাইরের এলাকার তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, গত ১০০ বছরে দেশের অন্য স্থানের চেয়ে রাজধানীর তাপমাত্রা দেড় গুণের বেশি বেড়েছে।
ঠিক নেই আবহাওয়ার মতিগতি
কয়েক দিন ধরে হঠাৎ কুয়াশার দেখা মিলছে কিছু জেলায়। ভোরে কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে গরম কমছে না। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সাংবাদিক আরিফুর রহমান গতকাল ভোরে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছেন। এসব ছবিতে ঘনকুয়াশা দেখা গেছে। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, দেশের অনেক এলাকায় ভোরে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এটি অস্বাভাবিক নয়। প্রতিবছর এমন কুয়াশা দেখা যায়। সাধারণভাবে একে কুয়াশা বলা হলেও এটি আসলে পুরোপুরি কুয়াশা নয়। একে হেজিভাব বলা যায়।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে অনেকের ঠোঁটের চামড়া উঠে যাচ্ছে। অনেকের হাত-পা জ্বালাপোড়া করছে। এমন পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, শুষ্কতার কারণে চামড়ার জলীয় অংশ দ্রুত কমে যাচ্ছে। ঠোঁটের চামড়া পাতলা হওয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার আর্দ্রতা এই সময়ে যেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ থাকার কথা, সেখানে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় তা ১৭ শতাংশে নেমে আসে। ফলে আমাদের ঠোঁট ফাটছে অথবা শরীর ঘামলেও দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। আর্দ্রতা যদি ৭০ শতাংশ বা এর কাছাকাছি থাকত, তাহলে গরম আরও বেশি অনুভূত হতো। আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকার কারণে ঘামলেও তাড়াতাড়ি শুকাচ্ছে। তিনি বলেন, বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প দরকার, কিন্তু সেটা পাচ্ছে না। ফলে বাতাস যেখান থেকে পারছে জলীয় বাষ্প টানছে।
হাসপাতালে বেড়েছে রোগী রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআর,বিতে গত বৃহস্পতিবার ৪৪০ জন, শুক্রবার ৩৯৩, শনিবার ৪৩৩, রোববার ৪৩৫, সোমবার ৫৩৪, মঙ্গলবার ৪৮৪ এবং বুধবার ৪৯২ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড গরমে রক্তচাপ কমে যাওয়া, দুর্বলতাসহ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগে আক্রান্তরা গরমে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যাঁরা বাইরে কাজ করেন, তাঁরা যেন ছায়ার মধ্যে থাকেন। অন্তত মাথায় যেন কাপড় থাকে, ঘণ্টা দুই পরপর ১০ মিনিটের জন্য একটু ছায়ায় গিয়ে বিশ্রাম যেন নেন। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বের হয়ে যায়, এজন্য রোজা রাখলেও রাতের বেলা একটু লবণ মিশ্রিত পানি কিছুক্ষণ পরপর খাবেন।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাঙ্গীর আলম বলেন, এ সময় শিশুদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে। শিশুদের পাতলা-আরামদায়ক সুতি কাপড় পরাতে হবে। তীব্র গরমে শিশুরা ঘেমে যায়, তাই যাঁদের বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আছে তা চালু রাখতে হবে, ফ্যানের নিচে রাখতে হবে। শিশুদের প্রচুর পানি, ফলের রস ও শরবত পান করাতে হবে। শরবতের সঙ্গে কিছুটা লবণ মিশিয়ে দিতে হবে।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।