
নিউজ ডেক্স
আরও খবর
তুফান: সন্ত্রাসকে গ্ল্যামারাইজ করতে চাওয়া এক সিনেমা

১৯৭৮ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘তুফান’-এর পর ২০২৪ সালে রায়হান রাফী পরিচালিত নতুন আরেক ছবি ‘তুফান’! পুরনো ছবিটির দুষ্টু গান ‘ও দরিয়ার পানি তোর মতলব জানি’র মতো ‘লাগে উড়াধুড়া’খ্যাত গানের এক ছবি ‘তুফান’। শতাধিক খুন, প্রতিশোধ আর গতানুগতিক কাহিনির প্রচলিত ধারার ছবি ‘তুফান’। রায়হান রাফী পরিচালিত শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী, মিমি চক্রবর্তী ও নাবিলা অভিনীত প্রথম ছবি ‘তুফান’। ‘কেউ কিলার হয়ে জন্মায় না, সমাজ তাকে কিলার বানায়’ টাইপ কিংবা ‘উই আর লুকিং ফর অপরাধীজ’-এর মতো পুরনো সংলাপের আরেক ছবি ‘তুফান’। ‘উই আর লুকিং ফর অপরাধীজ’ বলা হলেও অপরাধ করে আপাতত (তুফান-২ তে পুরোপুরি বোঝা যাবে) পার পেয়ে যাওয়া যায়, সেই বার্তার ছবি ‘তুফান’। সন্ত্রাসকে গ্ল্যামারাইজ করতে চাওয়া এক ছবি ‘তুফান’।
সিনেমা অন্তঃপ্রাণ এক যুবক শান্ত। তার ধ্যান-জ্ঞান অভিনয় করা। সামান্য পর্দা উপস্থিতি বা এক দৃশ্যে অভিনয় করার কী চেষ্টা তার। সে তার অভিনয়ের গল্প বলে তার মহল্লার পরিচিত জনদের। শান্তকে সাহায্য করতে চায় ছবির এক কস্টিউম ডিজাইনার। শান্ত খুব গর্ব নিয়ে বলে সে একটা সিনেমায় অভিনয় করেছে যার নাম ‘শেষ খেলা’। সবাইকে সে ছবি দেখতে নিয়ে যায়। হলে যেয়ে দর্শকরা দেখতে পায় সিনেমার কোথাও শান্ত নেই। তাকে সবাই ধিক্কার জানায়। মিথ্যেবাদী বলে। শান্ত আত্মহত্যা করতে চায়য়। পারে না। ছবির গল্প শুরু হয় এখান থেকেই। কারও সাথে কি শান্তর চেহারার মিল আছে?
ছবিতে শান্ত এবং তুফানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। এসি আকরামের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, নায়িকার চরিত্রে মিমি চক্রবর্তী, কস্টিউম ডিজাইনার চরিত্রে মাসুমা রহমান নাবিলা, ফাইট ডিরেক্টরের ভূমিকায় গাউসুল আলম শাওন আর তুফানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী রাকায়েত। এছাড়া গ্রামের গডফাদার চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম, রাজনৈতিক নেতার চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, কুস্তি বশীরের চরিত্রে মিশা সওদাগর এবং সালাহউদ্দীন লাভলুসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন এই ছবিতে।
শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, গাজী রাকায়েত,শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী এবং মিশা সওদাগর বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। তবে শাকিব খান, গাজী রাকায়েত, মিশা সওদাগর এবং চঞ্চল চৌধুরীর পর্দা উপস্থিতি দর্শকদের বেশি আনন্দ দিয়েছে।
‘তুফান’ ছবির আলোচিত গান ‘লাগে উড়াধুড়া’র কোরাস অংশের সুর রাজ্জাক দেওয়ানের ‘ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেলরে মরার কোকিলে’ থেকে নেয়া। এই গান লিখেছেন রাসেল মাহমুদ ও শরীফ উদ্দীন। সুর করেছেন প্রীতম হাসান এবং গেয়েছেন প্রীতম ও দেবশ্রী অন্তরা। তুফানের টাইটেল ট্র্যাক লিখেছেন তাহসিন শুভ এবং গেয়েছেন আরিফ ও জয়। ‘আসবে আবার দিন’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন। গানের সংগীত পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আরাফাত মহসীন, নাভেদ পারভেজ ও প্রীতম হাসান।
‘তুফান’ ছবির গল্প লিখেছেন রায়হান রাফী ও আদনান আদিব খান এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন আদনান আদিব খান। ছবির চিত্রগ্রহণে ছিলেন তাহসিন রহমান। ছবির ফটোগ্রাফি ভালো।
১৪৫ মিনিট স্থিতির এই ছবির প্রযোজনা করেছেন আলফা আইয়ের পক্ষে শাহরিয়ার শাকিল।
এবার এই ছবির কিছু অন্য দিক। ছবিতে প্রথম দিকে পর্দায় শাকিব খানের মুখে দাড়ি নেই অথচ পরের দৃশ্যে দেখা যায় দাড়ি। রাজনৈতিক দলের গেট টুগেদারে যে দৃশ্যে সালাহউদ্দীন লাভলু অভিনয় করেছেন, সেখানে যে অস্ত্র দিয়ে শাকিব খান সবাইকে মারেন (‘কাইতি’ ছবির আদলে) সেই দৃশ্যের শেষে দেখা যায় তার কাঁধে একে ফোরটি সেভেন টাইপ আলাদা অস্ত্র! ‘তুফান’ ছবিতে নায়ক শাকিব খানের গেটআপ বা লুক অনেকটা ‘অ্যানিমেল’ ছবির রণবীর কাপুরের মতো। কেউ কেউ ‘কেজিএফ’র জশ-এর গেটআপের সাথেও মিল খুঁজে পেয়েছেন।
‘কেউ সন্ত্রাসী হয়ে জন্মায় না সমাজ তাকে সন্ত্রাসী বানায়’- এই থিম নিয়ে প্রচুর ছবি হয়েছে দেশে বিদেশে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে। তবে সিনেমার বাস্তবতায় কোনও না কোনও আদলে সন্ত্রাস যে করে তার শাস্তি হয়েছে এমনটা দেখানো হয়। এই ছবির শেষ দৃশ্য যেখানে ‘তুফান-টু’ আসার ইঙ্গিত করা হয়েছে সেখানে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ডাক্তার নার্সদের মেরে ফেলেন পুলিশ অফিসার চঞ্চল চৌধুরী এবং বোঝা যায় যে ‘তুফান’ মরেনি।
রায়হান রাফীর ছবিতে নারীদের ওপর দোষ চাপানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সেটা সামান্যই আছে এই ছবিতে। পুলিশকে তুফানের পালিয়ে যাবার ঘটনা জানায় নায়িকা নিজেই! যাকে কিনা এই ছবিতে বার বার ব্রেক দিয়েছে তুফান।
তবু এই ছবি প্রচলিত অন্যান্য অনেক ফর্মুলা ছবির চেয়ে স্মার্ট। রায়হান রাফী সাধারণত বাস্তব ঘটনা থেকে ছবির কাহিনি নেয়ার চেষ্টা করেন। এই ছবিতেও তাই পুলিশের এসির নাম ‘আকরাম’, যে কি না বাস্তব জীবনে রুবেল নামের এক যুবকের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর কারণে জেল খেটেছিলেন। এই ছবিতে যে সময়কাল দেখানো হয়েছে সেই সময়কালের উক্তি না হলেও ২০০১-২০০৬ সালের জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সেই বিখ্যাত সংলাপ–‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’-এর ব্যবহার করা হয়েছে এভাবে, ‘উই আর লুকিং ফর অপরাধীজ!’
এই ছবি ব্যবসা সফল হতে পারে। ‘তুফান-টু’ এর জন্য আগাম শুভ কামনা।
অভিনয়ে: শাকিব খান ও মিমি চক্রবর্তী
মুক্তি: ১৭ জুন ২০২৪
প্রেক্ষাগৃহ: ১২৯ (প্রথম সপ্তাহ)
পরিচালক: রায়হান রাফী
দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট
প্রযোজনা: আলফা আই
পরিবেশক: জাজ মাল্টিমিডিয়া
সমালোচক: রম্যলেখক, সাংবাদিক ও কবি
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।