‘প্রত্যয়’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘সংশয়ে’ কেন ? – দৈনিক গণঅধিকার

‘প্রত্যয়’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘সংশয়ে’ কেন ?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩০ জুন, ২০২৪ | ১১:২৯
সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’। দেশের সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এই স্কিম চালু করে সরকার। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে। তবে এ নিয়ে বিপত্তি তৈরি হয়েছে শুরুতেই্। ‘প্রত্যয়’ শব্দটির বিপরীত যে ‘সংশয়’, তাই যেন ভর করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর। এই পেনশন স্কিমে যাতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা না হয়, সে দাবিতে আন্দোলন ‘চূড়ান্ত’ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তারা। সোমবার (১ জুলাই) থেকে ক্লাস, পরীক্ষা, অফিসে আসাসহ সব দাফতরিক কাজ বন্ধ করে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তাদের দাবির তোয়াক্কা না করেই সরকারের নির্দেশ কার্যকর করতে যাচ্ছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। দুই পক্ষের ‘রেষারেষির’ মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিতের প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণাও চলে এসেছে। রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ও কার্জন হল পরীক্ষাকেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাসমূহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত সংস্থায় আগামী ১ জুলাই থেকে যারা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে। এসব সংস্থার নতুন চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার পর প্রচলিত পদ্ধতিতে পেনশন পাবেন না। এর নিয়মের সঙ্গে একমত হতে না পেরে কয়েক মাস ধরে শিক্ষকরা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সর্বশেষ ৩০ জুনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা ছিল। সে অনুযায়ী সোমবার থেকে তা বাস্তবায়নের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে সরকারপক্ষের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কিনা প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার সঙ্গে কারও আলোচনা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেটা হয়েছে কিনা আমি বলতে পারি না। তবে ফেডারেশনের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি। ‘প্রত্যয়’ নিয়ে ‘সংশয়ের’ কারণ জানাতে গিয়ে এটাকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তিনি রবিবার (৩০ জুন) এক সমাবেশে বলেন, যে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ এই স্কিমের ফলে আমরা যা টাকা দেবো, একসময় সেই টাকাই ফেরত দেওয়া হবে সর্বজনীন পেনশনের নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা ‘অসম্মানের’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ জুলাই থেকে যে শিক্ষকরা কাজে যোগ দেবেন তারা এই স্কিমের আওতায় আসবেন। চাকরি শেষে দেওয়ার জন্য আপনার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হবে। এটাই যদি নিয়ম হয়, তবে তা প্রশাসনের কোনও বাহিনীর জন্য করা হলো না কেন? আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, এই নিয়মের ফলে পরবর্তীতে ভালো শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির জায়গায় উচ্চতর পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাতে করে তিনি পূর্বের পেনশন পদ্ধতি না থাকলে আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বলে শঙ্কা কাজ করছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মাশরিক হাসান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পেনশন স্কিমটি বৈষম্যমূলক। এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষকেরা এ কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষকদের জন্য পেনশনের এই নিয়ম চালু না করার কোনও সিদ্ধান্ত নেই উল্লেখ করে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মোরশেদুল হক বলেন, পেনশন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী সরকারি একটি সংস্থা। কোনও পলিসি আমরা নির্ধারণ করি না। সরকার আমাদের যেটা নির্দেশ দেবে আমরা সেটাই বাস্তবায়ন করবো। নতুন কোনও সিদ্ধান্ত না দিলে এই স্কিম চালু না করার কোনও কারণ নেই। এদিকে রবিবার এইচএসসি’র প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের জানান, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতির কারণে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো আছে, পেনশন স্কিমের ক্ষেত্রে সোমবারের (১ জুলাই) পর থেকে নতুন যারা চাকরিতে আসবেন, তারা পেনশন স্কিমে যাবেন।... সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। শিক্ষকদের বিষয়টি আবারও আলোচনা-পর্যালোচনা করে দেখা যায় কিনা, ভবিষ্যতে আলোচনা হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও মন্তব্য করা সঠিক না। কারণ, এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য। উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালুর কথা জানায় সরকার। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান পেনশন/আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে। প্রত্যয় স্কিমে অংশ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, যা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কেটে নেবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। এরপর উভয় অর্থ ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ওই কর্মকর্তা/কর্মচারীর হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং ওই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসেবে জমা করা অর্থের ভিত্তিতে পেনশন দেওয়া হবে।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আটিগ্রাম মাঠে ঈদের সন্ধ্যায় মানুষের ভিড়, পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসনীয় মিরপুরে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হক আর নেই এডভোকেট নুরুল ইসলাম দুলাল আর পৃথিবীতে নেই শেরপুরে ৭ গ্রামে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় সেনা অভিযানে সন্ত্রাসী লিপটন ও তার তিন সহযোগী আটক ‘বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছিল ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য’ দক্ষিণ চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শাহিন রামু সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক কুষ্টিয়া বাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কাজল মাজমাদার খোলা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক চাচা গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি রেড ক্রসে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই মিরপুরে জামায়াত ইসলামী থেকে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা মিরপুরে পুলিশের অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত দুই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার বাবার সঙ্গে গরু বিক্রি করতে এসে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ফয়সালের এবার ঢাকাবাসীকে নিয়ে নিজেই শপথ পড়ার ঘোষণা ইশরাকের ফারুকের মনোনয়ন বাতিল ও আমিনুলের মনোনয়ন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট নিখোঁজ সংবাদ জাপানের সহযোগিতায় কুষ্টিয়াসহ চার জেলার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু মেহেরপুর মুজিবনগরে ১১০০ পিস ইয়াবাসহ ১ জন আটক