বনালয়ে বাঘমামা

শিরোনামটি শিশুতোষ মনে হলেও বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশের বিশ্বখ্যাত সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা বাদাবনের একটি সত্যি ঘটনা, যা একই সঙ্গে রোমহর্ষক, সভ্রম উদ্রেককারী ও দৃষ্টিনন্দন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি স্টেশনের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়িতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ৩টি বাঘের একেবারে দিনেদুপুরে আগমন ঘটে। বাঘ তিনটির একটি ছোট, অন্য দুটি তুলনামূলক বড়। প্রতীয়মান হয় যে, পুরো একটি ব্যাঘ্র পরিবার।
বনের রাজা বাঘ বা ব্যাঘ্র সম্পর্কে যে বা যারা যৎসামান্য ধারণা রাখেন, তারা বিলক্ষণ জানেন যে, বাঘ সচরাচর লোকালয়ে প্রবেশ করে না। এ প্রসঙ্গে বাঘকে কেন বনের রাজা বলা হচ্ছে তার একটি সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। প্রচলিত অর্থে পশুরাজ সিংহকে বনের রাজা বলা হলেও যে কোনো বনের যথার্থ সৌন্দর্য বিকশিত হয়ে থাকে বাঘ ও চিতাবাঘে- সিংহ নয়।
তদুপরি গতি ক্ষিপ্রতা ও হিংস্রতার দিক থেকে বাঘের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। সিংহ এর ধারে কাছেও নেই। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ডিসকভারি কিংবা ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক চ্যানেলে যারা আফ্রিকার সাফারি পার্কগুলোতে সিংহ পরিবারগুলো দেখেছেন, তারা বোধকরি একবাক্যে স্বীকার করবেন বিষয়টি।
ফিরে আসি সুন্দরবনে। সেদিন ব্যাঘ্র পরিবারটি বনরক্ষীদের টহল ফাঁড়ির সামনের মিঠা পানির পুকুরে জল পান করতে নেমেছিল। রান্নাঘরের আশপাশে ঘোরাফেরা ও বিশ্রাম নিয়েছিল। রান্না করা খাবার-দাবারও খুঁজেছিল কি-না কে জানে! আরাম আয়েশে হুটোহুটি ও লুটোপুটি খেয়েছে। সবশেষে কমপক্ষে ১৯ ঘণ্টা অলস ও মন্থর সময় কাটিয়ে যথারীতি ফিরে গেছে বনে- নিজেদের ডেরায়।
ফাঁড়িটিতে অবস্থানরত সাত বনরক্ষী দীর্ঘ একটি রাতসহ রুদ্ধশ্বাস ১৯ ঘণ্টা থেকেছিলেন কার্যত গৃহবন্দি। ভয়ে ও আতঙ্কে তারা বের হতে পারেননি। দীর্ঘ সময় ধরে গৃহবন্দি থাকায় তারা প্রকৃতির ডাকে কিভাবে সাড়া দিয়েছেন তা নিয়ে কোনো আলোকপাত করেনি গণমাধ্যমগুলো। বনরক্ষীরা জানিয়েছেন, তিনটি বাঘের আগমনে তারা আতঙ্কবোধ করেছেন স্বভাবতই। টিনের ক্যানেন্তারা পিটিয়ে বাঘ তাড়ানোর চেষ্টাও করেছেন। তবু সেগুলো সরে যায়নি। এও বলেছেন যে, বাঘগুলো আক্রমণাত্মক ছিল না। হিংস্র ও উগ্র কোনো আচরণ করেনি।
বনরক্ষীরা ঘরের দরজা বন্ধ করে অবস্থান করলেও ঠিক অবরুদ্ধ ছিলেন না। চারটি আগ্নেয়াস্ত্র থাকার পরও সেগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। তবে বাঘগুলো যদি হিংস্র ও বন্য আচরণ করত তা হলে নিশ্চয়ই ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাড়ানোর চেষ্টা করতেন। এ থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, বাঘগুলো স্বাভাবতই ছিল শান্তশিষ্ট, পেটে তাদের খাবার ছিল। বরং মিঠা পানির খোঁজে তারা এসেছিল সেখানে। উল্লেখ্য, পুকুরটিতে প্রায়ই মৌয়াল, জেলেরা পানি খেতে আসে। হরিণ, বানরও দেখা যায়। এমনকি বাঘের পায়ের ছাপও চোখে পড়ে মাঝে মধ্যে। তবে একেবারে দিনেদুপুরে পুরো একটি ব্যাঘ্র পরিবারের দেখা পাওয়া সত্যিই বিরল সৌভাগ্য।
যে বা যারা সুন্দরবন সম্পর্কে কমবেশি জানেন- বোঝেন, তোহা খান, হুমায়ুন খানের বই অথবা বিখ্যাত শিকারি পচাব্দী গাজীর বই পড়েছেন তারা অবশ্যই জানেন যে, সুন্দরবনে বাঘের দেখা পাওয়া একেবারেই বিরল সৌভাগ্যের বিষয়। ডিসকভারি-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল নানা সময়ে অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের বাঘের ওপর প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের চেষ্টা চালিয়েছে। খুব বেশি সাফল্য আসেনি।
সুন্দরবনের মতো গভীর জলাভূমিকীর্ণ বাদাবন, জোয়ার-ভাটা অধ্যুষিত অগণিত খাল-বিল, গভীর কাদা এবং সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল কণ্টকিত কর্দমাক্ত বনের ভিতর দিয়ে নিঃশব্দে যাতায়াত অথবা চলাচল রীতিমতো দুষ্কর ও দুঃসাধ্য। তদুপরি বনের ওপর মানুষের ক্রমাগত অত্যাচারে বাঘের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। খাদ্য শৃঙ্খল প্রায় বিপর্যস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, জ্বলোচ্ছ্বাস, বন্যা লেগেই আছে। সর্বোপরি বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। খালগুলোর পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততাও। এসবই বিপর্যস্ত করে তুলেছে বাঘের বাস্তুসংস্থান। যে কারণে বাড়ছে হরিণের সংখ্যাও।
বাঘ সচরাচর লোকালয়ে আসে না। সিংহ-চিতাসহ কোনো হিংস্র প্রাণিই আসে না জনবসতিতে। কেননা, মানুষ যত না তাদের ভয় পায়, তারচেয়ে তারা অনেক বেশি ভয় পেয়ে থাকে মানুষকে। সচেতন মানুষও নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে, মানুষের চেয়ে হিংস্র আচার-আচরণ অন্য জীবজগতে প্রায় নেই। পশু-পাখি তখনই লোকালয়ে বা জনবসতিতে হানা দেয়, যখন খাদ্য সংকটে নিপতিত হয়। যেমন-বানর বা কাক। নগরিক জীবনে এগুলোকে প্রায়ই দেখা যায়। প্রধানত খাদ্যাভাবেই সেগুলো মানুষ বা শিশুর হাত থেকে খাবার ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। অথবা ঢুকে পড়ে রান্নাঘরে।
বাঘ কিংবা সিংহের ক্ষেত্রেও অনুরূপ আচরণ দেখা যায়। বনে খাদ্য সংকট দেখা দিলে তারা আশপাশের জনপদে অথবা গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়ে। প্রথমত গোয়াল ঘরে ঢুকে গবাদিপশু, ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি নিয়ে শটকে পড়ে। সেটাও না পেলে আক্রমণ করে বসে মানুষকে। প্রথমে শিশু ও নারীকে পরে বয়স্ক মানুষ। বনে শিকার করতে গিয়ে বাঘ-সিংহ আহত হলেও অনেক সময় হয়ে ওঠে মানুষখেকো। এসব বিষয়ে খুব জোর দিয়ে বলেছেন বিশ্বখ্যাত শিকারি এবং পরে বন সংরক্ষক জিম করবেট, কেনেথ এ্যান্ডারসন, পচাব্দী গাজী প্রমুখ।
সুন্দরবনের বিখ্যাত শিকারি পচাব্দী গাজীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ইহজীবনে তিনি ৭০-৮০টি বাঘ শিকার করেছেন। বাঘের হুঙ্কার হুবহু নকল করতে পারতেন। বাঘ শিকারের জন্য এই কৌশলটি জানা অপরিহার্য। কেননা, প্রজনন মৌসুমে বা মেটিং সিজনে বাঘ তীব্র হুঙ্কারে ডেকে থাকে বাঘিনীকে মিলনের আহ্বান জানিয়ে। অতঃপর এই পন্থা অবলম্বন করে থাকেন শিকারিরাও।
তদুপরি বাঘ শিকারের জন্য প্রয়োজন তীক্ষè শ্যেন দৃষ্টি, অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, দক্ষতা, বনের ভেতর মাইলের পর মাইল নিঃশব্দে হেঁটে চলা সর্বোপরি অপরিসীম ধৈর্র্য। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে শিকারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। রুদ্রপ্রয়াগের একটি মানুষখেকো চিতা মারার জন্য জিম করবেট মাসের পর মাস ধৈর্য ধরে অনুসরণ করে অবশেষে বাঘটিকে মারতে সক্ষম হন।
সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট বনকর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রজনন মৌসুম হওয়ায় বাঘ তিনটি ঢুকে পড়েছে বনালয়ে। যুক্তি ও আচরণের দিক থেকে এটি ধোপে টেকে না। কেননা, বনরক্ষীদের ভাষায় বাঘটি ছিল ছোট-বড় মিলে একটি পরিবারের মতো। তাদের চলাফেরা আচার-আচরণ ছিল শান্ত স্বাভাবিক আয়েসি। বনরক্ষীরা তাদের দৈনন্দিন বিচরণ ও জীবনাচরণ উপভোগ করেছেন। প্রজননের উত্তেজনায় বাঘ এরকম আচরণ করত না।
বরং এ সময় তারা উদ্যত বুনো হিংস্র ও উন্মত্ত আচরণ করে থাকে। দেশে নিশ্চয়ই অন্তত কয়েকজন ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ আছেন। বিশ্বখ্যাত ড. রেজা খান তো আছেনই। তারা বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক আলোকপাত করলে আমরা নিশ্চয়ই এটা আরও উপভোগ করতে পারি। পাশাপাশি বিনোদনের খোরাক হিসেবেও মন্দ নয় অবশ্যই।
বাঘের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, বাঘ তার নিজস্ব ডেরা ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না সহজে। সম্প্রতি ভারত থেকে সুদীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার দুর্গম অরণ্যসঙ্কুল নদ-নদী পরিবেষ্টিত বিপদাপন্ন পথঘাট হাইওয়ে পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের অসীম সাহসী একটি বাঘ ফিরে এসেছে নিজ বাসভূমি সুন্দরবনে। খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বাঘটির গলায় ছিল রেডিওকলার, যা থেকে পাওয়া যেত সিগন্যাল। ফলে, সহজেই এর গতিবিধি চিহ্নিত করা যেত। ২০১৭ সালে বাঘ শুমারির সময় তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় রেডিওকলারটি।
৮-৯ বছরের বাঘটির ছবিও তোলা তখন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের বশিরহাটে চিহ্নিত করা হয় বাঘটিকে। এরপর এটি ২০২১ সালের ১০ মে পর্যন্ত পাড়ি দেয় ১০০ কিলোমিটার পথ, অতিক্রম করে ৩টি নদী। অবশেষে ফিরে এসেছে সুন্দরবনে। উল্লেখ্য, দুদেশের মধ্যে বাঘ, হাতি, হরিণসহ বিভিন্ন বন্য প্রজাতির প্রাণির স্বাভাবিক চলাচল রয়েছে।
পাখিদের তো অবাধ উড়াল আছেই উন্মুক্ত আকাশে। একটি অতি বিপন্ন প্রজাতি বলে বাঘ চিহ্নিত বিশ্বজুড়েই। সুন্দরবনেই সাকল্যে বাঘ রয়েছেÑ ৩৫০টি। মানুষের হাতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন বিপন্ন হচ্ছে দিন দিন। ফলে, হুমকির সম্মুখীন ব্যাঘ্র প্রজাতি ও সেই প্রেক্ষাপটে বাঘের সুরক্ষাসহ এর খাদ্যশৃঙ্খল চিতল হরিণ, বুনো শুয়োর, বানর ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি ও অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
শুধু একটি বা কয়েকটি দেশ নয়; বরং গোটা বিশ্বের প্রকৃতি, পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সুরক্ষায় বনের এবং সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোনো দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ সুষ্ঠু, সুস্থ, সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য ভূখ-ের আয়তন অনুপাতে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। বর্তমানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ৭-৮ শতাংশ। পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য রীতিমতো যা হুমকিস্বরূপ। দেশে বর্তমানে বনভূমির আয়তন প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর, যা মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১৫.৫৮ শতাংশ।
গত ৫০ বছরে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে। এভাবে বন উজাড় ও বেদখল হতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরে বনভূমির পরিমাণ নেমে আসবে মাত্র পাঁচ শতাংশে। বন বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, দেশের প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি রয়েছে অবৈধ দখলে। বনের জায়গা দখল ও উৎখাত করে নির্মিত হয়েছে শিল্প-কারখানা, ইটভাঁটি, পর্যটন কেন্দ্র, কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি। এসব নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর পেছনে রয়েছে বন বিভাগের তদারকির অভাব, গাফিলতি, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ বনখেকোদের যোগসাজশ।
সুন্দরবন একদিকে যেমন বাংলাদেশের গর্ব অন্যদিকে বিশ্ব ঐতিহ্য বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশও বটে। আর তাই বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগার বিষয়টিও উদ্বেগজনক বৈকি। গত কয়েক বছরে এই বনে অন্তত ২৪ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে বার বার বনভূমি পুড়েছে অন্তত ৬৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশিবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ধানসাগর স্টেশনসংলগ্ন এলাকায়। গত ১২ বছরে এখানে অন্তত আগুন লেগেছে ১৪ বার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫ একর বনাঞ্চল।
স্থানীয়ভাবে মাঠপর্যায়ে এর কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। একটি চক্র শুকনো মৌসুমে বনে আগুন লাগিয়ে প্রশস্ত করে মাছ চাষের পথ। এর পাশাপাশি বনের জায়গা দখল করাও আরেকটি উদ্দেশ্য। কয়েক বছর ধরে এই অপকর্ম চলে এলেও এতদিন বন বিভাগ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এর পাশাপাশি চোরাশিকারিদের বিষটোপ দিয়ে বা ফাঁদ পেতে বাঘ ও হরিণ শিকার তো চলছেই। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবনের সার্বিক সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য ও জরুরি হয়ে পড়েছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। মনে রাখতে হবে যে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সুরক্ষাও বটে। বন না থাকলে একদিকে যেমন বাঘ, চিত্রল হরিণসহ অমূল্য বন্যপ্রাণির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে; অন্যদিকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন হবে জনপদ ও বসতি। সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকার গৃহীত বিবিধ পদক্ষেপের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে স্মার্ট প্যাট্রোলিং সিস্টেম, যা মূলত স্পেশিয়াল মনিটরিং এ্যানালাইজিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুল।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায় বনজসম্পদ ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে সুন্দরবনকে চারটি রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্যাথেরা নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রস্তুতকৃত অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা। প্রতিরেঞ্জের জন্য গঠিত ৩টি দল পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে নিয়মিত বনের বিভিন্ন অংশ টহল দিতে থাকে।
টহলকালে বন ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও অপরাধ সম্পর্কিত তথ্যাদিও সংগ্রহ করা হয়। এরপর সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত খুলনায় অবস্থিত জিআইএস ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত ও বিশ্লেষণ করে নেওয়া হয় যথাযথ ব্যবস্থা। এর ভিত্তিতে প্রতিমাসে হাল নাগাদ করা হবে সুন্দরবন সম্পর্কিত হালনাগাদ প্রতিবেদন। এর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের সুরক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
লেখক : সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।